দুমকী থানা ওসি-এসআইয়ের কান্ড আইনী সহায়তার বদলে ভিকটিম কারাগারে শীতের রাতে দুই শিশু সন্তান ছিল গোলঘরে

0
688

দেলোয়ার হোসেন,দুমকী,পটুয়াখালী : আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় অপর পক্ষের হাতে মার খেয়ে স্ত্রী উর্মি আক্তার(২৫)কে সঙ্গে নিয়ে ১৬ জানুয়ারী রাত ১০টায় দুমকী থানায় অভিযোগ দিতে উপস্থিত হয় মাল্টা প্রবাসী সফিকুল ইসলাম(৩৪) কিন্তু থানা পুলিশ ওই দম্পত্তির অভিযোগ না নিয়ে তাদের রাতভর ডিউটি অফিসারের কক্ষে বসিয়ে রাখেন। এমনকি স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখতে তাদের মোবাইল ফোন কেরে নেয়া হয়। পরদিন সকাল ১০টায় মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিকদারের হস্তক্ষেপে মুক্ত হয় তারা। ওই রাতে দম্পত্তির সঙ্গে থানায় আসা তাদের ১ ও ৯ বছরের দুই শিশু কন্যাকে শীতের রাতে থানার সামনে গোলঘরে রাত কাটাতে হয়েছে। পরে অভিযুক্তের বসতঘর ভাংচুর ও লুটের মামলায় সফিকুল ইসলাম ও তার ভাই কামরুল ইসলামকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় পটুয়াখালী পুলিশ সুপার(এসপি)এর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সফিকুল ইসলাম ২২ জানুয়ারী জেল থেকে জামিনে বেড় হয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন-“প্রবাস সংক্রান্ত ঘটনায় দুমকী উপজেলার চরগরবদির মৃত. ফজলু হাওলাদারের ছেলে কাওছার আমীনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে তাদের মনমালিন্য চলছে। এসকল ঘটনা মিমাংসার লক্ষ্যে ১৬ জানুয়ারী সফিককে ডেকে নেয় কাওছারের শ^শুর বাড়ী লোহালিয়াতে। সেখানে গিয়ে কাওছারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে মারধরের শিকার হন সফিক। মারধর খেয়ে দুমকী উপজেলায় পৌছে মুরাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিকদারকে জানালে তিনি দুমকী থানার ওসিকে ফোনে সফিককে আইনি সহায়তার অনুরোধ করেন। ওইদিন রাত ১০টায় সফিক তার স্ত্রী, বৃদ্ধ শ^শুর-শ^াশুরী ও দুই শিশু সন্ত্রানকে নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়। থানার ভেতরে গিয়ে কাওছারের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখতে থানার কম্পিউটার রুমে বসলে এসআই দেলোয়ার হোসেন সফিক ও উর্মির সঙ্গে রুঢ় আচারন করে বেড় করে দেন। একই সময় সফিকের বদলে কাওছারের লিখিত অভিযোগ নেন এসআই দেলোয়ার হোসেন। ওই শীতার্ত রাতে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে থানার কক্ষে রাতভর বসিয়ে রাখা হয়। রাত ১২টা পর থানার মুল গেট আটকালে সফিকের দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে থানার সামনের গোলঘরে রাত কাটায় তার শ^শুর-শ^াশুরী”।

ভিকটিম সফিক ও স্ত্রী উর্মি আক্তার আরও বলেন-“পরদিন সকাল ৯টায় মুরাদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান থানায় পৌছে আমাদের ছেড়ে দিতে ওসি তদন্ত মাহাবুবুর রহমান সঙ্গে কথা বলেন এবং ১৭ জানুয়ারী সন্ধ্যায় থানার গোলঘরে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শালিস বসবে বলে তিনি থানা থেকে চলে আসেন। এসময় সফিক পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ মুল ঘটনা আড়াল করে সফিকের জিডি নেয়। এদিকে ১৮ জানুয়ারী থানায় বসাবসির কথা মত আমরা গেলেও কাওছার থানায় আসেনি,তাই বসাবসি হয়নি।

“ সফিক বলেন-ওইদিন রাত ১১ পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করে চলে আসি। কিন্তু মধ্যরাতে এসআই সাকায়েত হোসেন আমার বাড়ীতে গিয়ে আমি ও আমার ছোট ভাই কামরুল ইসলামকে তুলে আনেন। যে ঘটনা দেখে আমার বৃদ্ধ মা মমতাজ বেগম ষ্ট্রোক করেন। পরদিন কাউছারের দেয়া মিথ্যা বসতঘর ভাংচুর লুট মামলায় কারাগারে পাঠায় দুমকী থানার পুলিশ। “এ প্রসঙ্গে মামলার ৫ নাম্বার স্বাক্ষী একই বাড়ীর প্রাক্তন শিক্ষক শাহ আলম বলেন-তার ঘরে বসে সফিক ও কাওছারের আর্থিক সংক্রান্ত ঘটনায় বাকবিতন্ডা হয়েছে। বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। আমাকে জিজ্ঞেস না করে মামলায় স্বাক্ষী রাখা ঠিক হয়নি। একই বাড়ীর নুরুজ্জামান বলেন-শাহ আলমের ঘরে বসে উভয় পক্ষের ডাকাডাকি হয়েছে। সফিক কাওছারের ঘরে যায়নি এবং কোনো হামলা হয়নি।

“এ প্রসঙ্গে মুরাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিকদার বলেন-মাল্টা প্রবাসী কাওছার তার এলাকার ছেলে। প্রবাসে লোক নিতে একাধিক ব্যক্তিকে আর্থিক ভাবে ঠকিয়েছেন কাওছার।  যা নিয়ে ভিকটিম সফিকুল ইসলাম  ও কাওছারের সঙ্গে ঝামেলা চলছে। এসকল অভিযোগ সংক্রান্ত ঘটনা জানতে গত ১৭ জানুয়ারী ওসি সাহেব ও আমি ঘটনাস্থলে যাই। এসময় স্থানীয়রা ওসি সাহেবকে বলেন কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে ওসি সাহেব চলে আসেন। পরে জানতে পারি ১৮ জানুয়রীর মামলায় সফিক ও তার ভাইকে কারাগারে পাঠায়।

এ প্রসঙ্গে দুমকী থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন-উভয় পক্ষ পটুয়াখালী বসে হয়তো মারামারি করছে। পরে ১৬ জানুয়ারী সফিকুল কাওছারকে মোবাইলে গালমন্দ করছে। এঘটনার পর দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে,আমি উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বলি। ওইদিন থানায় আসারপর কাওছার লোকজন নিয়ে অবস্থান করলে সফিক ও তার স্ত্রী থানায় স্বেচ্ছায় অবস্থান করেন। তাদের থানায় আটকে রাখা হয়নি। মোবাইল কেরে নেয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন-মোবাইল ডিউটি অফিসারের কাছে ছিল। ওখানে শুধু আমি একা না তো,তাগো লোকজন ছিল। এক পর্যায় তিনি বলেন এখানে ওসির বিষয়,আমার একার বিষয় না। 

এ প্রসঙ্গে দুমকী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবদুস সালাম বলেন-মামলার বিষয় ছিল, আমলযোগ্য অপরাধের আলামত ছিল, স্বাক্ষী প্রমান থাকায় মামলা হয়েছে। ঘরে যারা ছিল তারা বলছে ঘটনা ঘটেছে, চেয়ারম্যান সাহেব ও স্থানীয়রা তো রাতে ওখানে ছিলনা, তারা হয়তো শোনা কথা বলছে।

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্তদের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − 5 =