অপরাধ দমনে কঠোর র‌্যাবের অধিনায়ক মো: মারুফ হোসেন

0
921

রাশেদুল ইসলাম: ভালো কাজ কিংবা সৎ উদ্যোগের জন্য পেশাগত পরিচয় কখনো মুখ্য হতে পারে না। তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখিয়েছেন কর্মক্ষেত্রে সততা, সাহসিকতা, দক্ষতা আর সময়োপযোগী-দূরদর্শী ও বহুমুখী নেতৃত্বগুণে সুখ্যাতি লাভ করা কর্মকর্তা র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো: মারুফ হোসেন পিপিএম। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ইতোমধ্যেই নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

কেবল কঠোরতাই নয়, অবহেলিত আর নিগৃহীত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে সবার ধারণাও পাল্টে দিয়েছেন তিনি। পুলিশি সেবার বাইরে গিয়েও মানবিক কাজকেও ভালোবেসেছেন তিনি। সুযোগ আর সময় পেলেই কাছে টেনে নিচ্ছেন সুবিধা বঞ্চিতদের।

শুধু তাই নয়, ভালো কাজ করতে সহযোগিতার পাশাপাশি দেন দিকনির্দেশনাও। এ জন্য মানবিক অফিসার হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্বে থাকাকালীনও নিজেকে কর্মের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিলিয়ে দিয়েছেন জনগণের সেবায়।

তিনি প্রতিটি মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ সব কিছুর ঊর্ধ্বে মানবতা। জনমুখী, সেবামুখী, স্মার্ট, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক এবং সর্বোপরি মানবিক হিসাবে র‌্যাবের প্রতিটি সদস্যকে গড়ে তোলার জন্য, তিনি বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। ফলশ্রুতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং র‌্যাবের ভাবমূর্তি আরও বেশি উজ্জ্বল হচ্ছে।

এক কন্যা সন্তানের জনক মারুফ হোসেন। তার বাবা এম আনোয়ার হোসেন ও মা খায়রুন্নেছার কোল আলোকিত করে  পিরোজপুরের এই কৃতি সন্তান ১৯৭২ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ছোট বেলা থেকে বাবার আদর্শকে বুকে ধারণ করে তার পথচলা শুরু। মারুফ হোসেন ১৯৮৮ সালে পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯০ সালে পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ  থেকে এইচএসসি, ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। ২২তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। এরপর ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি শাখায় যোগদান করেন সফল এই কর্মকর্তা।

২০০৬ সালে সিএমপি’তে এসি হেডকোয়ার্টার, এসি ফোর্স, এসি সাপ্লাই ও এসি পাঁচলাইশ জোনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৭ সালে র‌্যাব-৭ এ এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমনে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন তিনি। ২০০৮ সালে ডিএমপি’র গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশের এসি হিসেবে গুলশান জোনে যোগদান করেন মারুফ হোসেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পরে এসি ডিবি হিসেবে মিরপুর জোনের দায়ত্বি পান তিনি।

তিনি মিরপুর ও গুলশান বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে হাউজ ডাকাতি, শ্যুটিং ইন্সিডেন্সসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।

২০০৯ সালে লাইবেরিয়া মিশনে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। ২০১১ সালে ট্রাফিক এন্ড ড্রাইভিং স্কুলের (টিডিএস) কমান্ড্যান্ট এর দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেন তিনি। ২০১২ সালে সুদানের দারফুর মিশনে রুল অব ল ইউনিটের ওআইসি প্লানিংয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

সুদানের দারফুর মিশন শেষে ২০১৪ সালে এডিসি হিসেবে সিলেটে যোগদান করেন। সেখানে ৩ মাস সফলতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে অশান্ত লক্ষীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করে এ জেলাকে অপরাধমুক্ত করেন।

এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিবালয়ে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, বাহির গেইটের সম্প্রসারণ, ভেহিকেল স্ক্যানার স্থাপন সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি।

সেখানে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালনের পর পদোন্নতি পেয়ে ২০১৬ সালে ডিসি (এমটি ও সরবরাহ) ও ডিসি (ডিবি) হিসেবে আবারও সিএমপি’তে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৮ সালের আগস্টের ১৩ তারিখ থেকে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্বভার অর্জন করেন দক্ষ এই আইকন।

নিজের যোগ্যতার বলে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মো: মারুফ হোসেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন। কর্মজীবনে সব জায়গায় সততার সাথে দায়িত্ব পালনের আলো ছড়িয়েছেন তিনি। মাত্র ২০ মাসে  তিনি সুনাম ও দক্ষতার সাথে বরিশালের পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বরিশালসহ পূর্ববর্তী কর্মস্থলের সকল মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দক্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি তার মানবিকতায় পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা এ কে এম ইউসুফ আলী। দুই বছর যাবত চোখের সমস্যায় ভোগার পর অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের সৈনিক বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম ইউসুফ আলী। দায়িত্ব পালন করছেন বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের। গত দুই বছর চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে হারিয়ে ফেলেন চোখের আলো। চিকিৎসা করানোর মতো পরিস্থিতি তার ছিল না।

বরগুনার তৎকালীন মানবিক পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচিত মো: মারুফ হোসেনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন তিনি। দেরি না করে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মারুফ হোসেন। মুক্তিযোদ্ধার সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। এরই মধ্যে  মো: মারুফ হোসেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে বরগুনা থেকে বদলি হয়ে আসেন। কিন্তু চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কার্যক্রম থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসেননি তিনি। অন্য জেলাতে যাওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা সেবা চলতে থাকে মারুফ হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায়। তার চোখের সানি অপারেশনের পাশাপাশি লেন্সও প্রতিস্থাপন করা হয়। আবারও চোখে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেন মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী। দৃষ্টি ফিরে পেয়ে কৃতজ্ঞতার চোখ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করে মানবিক কর্মকর্তা মো: মারুফ হোসেনের সাথে দেখা করেন তিনি। সেখানে তৈরী হয় এক আবেগ আপ্লুত পরিবেশ।

এর আগেও মারুফ হোসেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষের অপারেশনজনিত চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। এমনকি অসহায়দের চাকরির ব্যবস্থা, পড়ালেখাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও তিনি বেশ সরব ভূমিকা পালন করছেন। দায়িত্বে অবিচল থাকা মানবিক এই কর্মকর্তা বরিশালে দায়িত্বরত অবস্থায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। এরপর র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর অধিনায়ক হিসেবে ঢাকা সদর দপ্তরে নিযুক্ত হন তিনি। বর্তমানে র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক হিসেবে সফলতার দায়িত্ব পালন করছেন দেশের এই সূর্য সন্তান। তিনি র‌্যাবে যোগদানের পর থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্র উদ্ধারসহ দাগী অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে ও অপরাধ দমনে ইতিমধ্যে সফলভাবে অনেক অভিযানও পরিচালনা করেছেন তিনি।

র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো: মারুফ হোসেন (পিপিএম) বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো ধরনের অরাজকতা ও নাশকতা প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, র‌্যাব ফোর্সের প্রতিটি সদস্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বুকে ধারণ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।

আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য এই দেশকে জঙ্গিমুক্ত করা; সেই সঙ্গে দেশ থেকে মাদক, অস্ত্রকারবারি ও সন্ত্রাস মুক্ত করা। এই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সচেষ্টভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বেশকিছু ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সন্ত্রাস দমন করে শান্তি ফিরিয়ে আনা, অস্ত্র, মাদক উদ্ধার ও চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাসহ ক্লুলেস মামলার ছায়া তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করা। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত জীবন বাজি রেখে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে অকুতোভয় র‌্যাব ফোর্সেস।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 + 17 =