Site icon Aparadh Bichitra

দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন

দুর্নীতিজনিত কারণে দেশের অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিই দায়ী। দেশের অর্থনীতিকে এদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের সকলকেই মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। দুর্নীতি দমনে দেশের প্রচলিত আইন, চরিত্র বদলাতে কোনো ধর্মীয় অনুশাসন, নেতাদের ভাষণ, উপদেশ এখন আর কাজে আসছে না। আসবে বলে মনে হয় না। দেশের সর্বোচ্চ আইন কনস্টিটিউশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কড়া আইন প্রণয়ন করে সমগ্র সিস্টেমকেই বদলাতে পারলে হয়তো কাজ হতে পারে। বিগত অর্ধশত বছর ধরে রাজনীতিবিদদের কৃপায় এ দেশে দুর্নীতি আষ্টে-পৃষ্ঠে গ্রামের পশ্চাদপদ এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী অবধি জড়িয়ে গেছে। সামগ্রিক চারিত্রিক ভ্রষ্টতায় এমন পর্যায়ে আমরা পৌঁছেছি যে, মানবতাবোধ, ধর্মের ভয়, দেশের প্রচলিত আইন, ধর্মীয় নেতাদের বাণী, শিক্ষা পদ্ধতি কিছুই কাজে আসছে না। রাজনীতিবিদদের কল্যাণে আইনের প্রতি লোকের ভয় একেবারে মুছে গেছে। গ্রামে স্কুল-পড়ুয়া একটি শিশুও বুঝে গেছে, লেখাপড়া না করলেও বড় হয়ে রাজনীতিতে ঢুকে কোনো প্রকারে একবার এমপি অথবা নিদেনপক্ষে ইউনিয়ন বা মিউনিসিপ্যালিটির মেম্বার হতে পারলে অথবা রাজনীতির নেতার আশ্রয়ে চলে গেলে সারা জীবনের জন্য কেল্লা ফতে। কারণ, ওই শিশু চোখের সামনে দেখছে, কিছুদিন আগেও যে অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকটি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাফেরা করত, রাজনীতির আশ্রয়ে সে আজ ধনী, বড়লোক সমাজে এক গণ্যমান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। শিশুটির চোখে ওই ব্যক্তিই আদর্শ ব্যক্তি। প্রতিটি সরকারি কার্যালয়ে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে প্রতিটি টেবিলে ঘুষের রাজত্ব। ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না।

কোন কোন অফিসার তার আরদালি পাঠিয়ে ঘুষের টাকা আদায় করে থাকেন এমন অভিযোগ রয়েছে। এই যেখানে পরিস্থিতি তখন অধীনস্থ কর্মচারী তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারকে মানবে কেন? তাই, তারাও ওই পথের পথিক। বাড়ি এবং জায়গা-জমির সরকারের প্রাপ্য বার্ষিক ৫/১০/২০ টাকা খাজনা জমা দিতে গেলেও ঘুষ না দিলে ঘুরতে হয়। অজুহাত, হাতে অনেক কাজ, রেজিস্টার খুঁজতে সময় লাগবে।

আবার ঘুষ দিলে তৎক্ষণাৎই কাজ হয়ে যায়। পুলিশ তার জীবন বাজি ধরে রাত জেগে দুষ্কৃতীকে ধরে থানা অবধি পৌঁছার আগেই রাজনৈতিক নেতার থানায় ফোন এসে যায় দুষ্কৃতীকে ছেড়ে দিতে কারণ, লোকটি তাঁর ঘনিষ্ঠ ও দলের। থানার অফিসার সৎ ও কড়া মনোভাবাপন্ন হলে এবং নেতার হুমকি না মানলে, তাকে অবধারিতভাবে বদলি হতেই হবে। পুলিশও বুঝে গেছে, এই পরিস্থিতিতে জান কবুল করার প্রয়োজন কী? বরং থানা পৌঁছার আগেই দফা-রফা করে দুষ্কৃতীকে ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তাইতো আজ প্রতিকার জানানোর কোনো জায়গা প্রায় নেই। ডাক্তার রোগীর কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি।

কিন্তু রোগী যখন সেই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যায়, ৫০০/৭০০/১০০০ টাকার ফি’র বিনিময়ে প্রেসক্রিপশন করার আগে প্রথমেই কোনো কোনো ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য লিখে বলে দেন নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য। নতুবা সঠিক পরীক্ষা হবে না। অন্তর্নিহিত কারণ, একাংশ ডাক্তারের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধুর সম্পর্ক। রোগী প্রচন্ড পেট ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে, অথচ দেখা গেল, রোগীর সরলতা ও অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে পেটের,

বুকের, ঘাড়ের এক্সরে/সোনোগ্রাফি এবং বিভিন্ন রক্তের পরীক্ষার জন্য রোগীকে বলা হয়েছে। এমনও শোনা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে যে আইটেমের পরীক্ষার প্রয়োজনই নেই, তার পাশে ডট চিহ্ন দেওয়া থাকে। অর্থাৎ চিহ্নিত করে দেওয়া হলো এগুলো কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শোনা যায়, এর উপর নাকি কোনো কোনো ডাক্তারের

এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশনের রেশিও হলো-৭০:৩০ শতাংশ। বাজারে সাধারণ মাছ, সবজির ছোটো ছোটো ব্যবসায়ীরাও বুঝে গেছে দুর্নীতির সঙ্গে গা ভাসিয়ে না দিলে বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। তাই, তারাও হাতের কারচুপিতে বাটখারাতে কম ওজনের কলা-কৌশল প্রয়োগ করে। আজ আমরা মনুষ্যবেশী নিকৃষ্ট পশুতে পৌঁছে যাচ্ছি প্রায়। এর থেকে পরিত্রাণের রাস্তা কোথায়? দুর্নীতির অক্টোপাসে জনসাধারণ আজ দিশেহারা।