তাহিরপুর সীমান্তে সোর্স ও
চাঁদাবাজদের
দাপট: ৫ মেঃটন কয়লাসহ
গ্রেফতার ২

0
504

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে সোর্স পরিচয়াধারী ও চাঁদাবাজদের দাপট দিনদিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫মেঃটন অবৈধ কয়লাসহ ২জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের জংগলবাড়ি গ্রামের হারিছ মিয়ার ছেলে চোরাকারবারী আবু বক্কর (৪০) ও তার মামাতো ভাই মৃত সাত্তারের ছেলে মহর উদ্দিন (৬০)। আজ বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট, জঙ্গলবাড়ি ও কলাগাঁও এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারী রফ মিয়া, নেকবর আলী ও আলী হোসেনের নেতৃত্বে সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করে বাড়িঘরের ভিতরে মজুদ করা হয়। একই ভাবে লাউড়গড় সীমান্তের চোরাকারবারীরা যাদুকাটা নদী ও শাহ আরেফিন মোকাম এলাকা দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁর করে। পরে ঠেলাগাড়ি, ট্রলি ও নৌকার মাধ্যমে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রক্তি নদীর আনোয়ারপুর বাজার ও শ্রীপুরের পাটলাই নদীর বৈঠাখালী বাঁধের কাছে। সেখানে বড় স্টিলবডি ইঞ্চিনের নৌকা ও ট্রাক বোঝাই করে। তারপর নদী ও সড়ক পথে পৃথক ভাবে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা, ভৈরব ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় পাচাঁরকৃত কয়লা ও পাথর। এরপরে অবৈধ ভাবে পাচাঁর করা এসব অবৈধ কয়লা ও পাথর থেকে থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারীরা।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারী) রাত ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন জংগলবাড়ি গ্রামে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী আবু বক্করের বসতবাড়ি থেকে ৫ মেঃটন অবৈধ কয়লাসহ আবু বক্কর ও তার ভাই মহর উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। এসময় সোর্স রফ মিয়া, আলী হোসেন ও নেকবর আলী পালিয়ে যায়। তবে এই সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, কলাগাঁও, জংগলবাড়ি ও লাউড়গড় সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করলে বসতবাড়ির ভিতরে লুকিয়ে রাখা সোর্সদের প্রায় ৪ থেকে ৫শত মেঃটন অবৈধ
কয়লাসহ পাথর উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে স্থানীয়রা জানান।
এব্যাপারে চারাগাঁও শুল্কষ্টেশনের বৈধ কয়লা ব্যবসায়ী জানান- হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক তাদের সোর্স রফ মিয়া, আলী হোসেন ও নেকবর আলীগংদের নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করে নিজেরা ব্যবসা করার পাশাপাশি সাংবাদিক ও প্রশাসনের নাম
ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে ইতিমধ্যে হয়েগেছে কোটিপতি। তাদের বিরোধে আইনগত পদক্ষেপ নিলে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হবে।
এব্যাপারে সোর্স পরিচয়ধারী আলী হোসেন বলেন- ভারত থেকে যখন কয়লা পাচাঁর হয় তখন আমি শুধু হিসাব রাখি, আর চাঁদার টাকা তুলে সোর্স রফ মিয়া। আমাকে তারা কর্মচারী হিসেবে রেখেছে।
চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুস সাত্তার বলেন- চোরাই কয়লাসহ ২জনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে জানতে পেরেছি। তবে আমি এখানে নতুন এসেছি। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজির সাথে
কারা জড়িত তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
তাহিরপুর থানার এসআই শাহাদাত হোসেন বলেন- গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চারাগাঁও সীমান্তের জংগলবাড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লাসহ ২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছ। এঘটনায় আরো ৩জনকে পলাতক আসামী করা হয়েছে। এব্যাপারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ই জানুয়ারী শুক্রবার দুপুরে টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গা এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে কয়লা পাচাঁরের সময় ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে দেলোয়ার হোসেন (২৮) আহত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর মৃত্যু হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + fifteen =