গত এক বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্ব গতিতে সাধারণ লোকের জীবন দূর্বিসহ হয়ে গেছে। এসেছে বাড়তি চাপ ও খরচের বাহার। কোন প্রকার আইনের বালাই নেই। উৎপন্নকারী ও পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত যে যেভাবে পারছে সেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট কাটছে প্রতিনিয়ত। এই অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন পর পরই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দ্যব্যমূল্য। মধ্যবিত্ত পরিবারে যারা ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী তারা সঞ্চয় ভেঙে জীবন বাচাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? লাগাতার দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির শেষ কোথায়? দেশে এমন এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় নেই। ভোজ্য তেলের দাম গত দুই বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তেল উৎপন্নকারীর সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে মুজত করে কৃত্তিম অভাব সৃষ্টি করে এর দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুন বাড়িয়েছে। চিনি কলগুলো নিজেদের খেয়াল খুশি মত উৎপাদন কমিয়ে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে এর দাম দ্বিগুন বাড়িয়ে ফেলছে ও রাতারাতি টাকার পাহাড় বনিয়েছে। যে চিনির এক কেজির দাম ৬৩ টাকা ছিল তা বর্তমানে ১২০ টাকা।
দুই লিটার ভোজ্য তেলের দাম কয়েক বছর আগে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ছিল যা বর্তমানে ৩৮০ টাকা। একই অবস্থা গুড়া দুধ, চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও চালের দামে। এদিকে ঔষধ ও শিশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির যেন মাত্রা নেই। দেশে কোন আইন, শাসক বা প্রশাসন আছে বলে মনেই হয় না।
সর্বত্র চলছে অরাজকতা। মোট কথা দেশে এক ধরনের লুটতরাজ চলছে অথচ প্রতিবাদ করার যেন রাস্তা নেই। দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী। তারা দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণকে জিম্মি করে নিজ নিজ ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে প্রুচর অভিযোগ রয়েছে। তাদের ধন সম্পদের অভাব নেই।
রাজনীতির ছত্রছায়ায় অনেক বড় মাপের ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋন নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। তাদের অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক। এক ব্যাংকের পরিচালক যোগসাজস করে আরেক ব্যাংক থেকে বৃহৎ আকারের ঋন নিচ্ছে।
ঋনের আবেদন পাওয়ার পর রাতারাতি কোটি কোটি টাকা ঋন মঞ্জুর করার মত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে যা হতাশাজনক। ঋন অনাদায়ী থাকার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
জনগণ এখন আর কোন রাজনীতিবিদকে বিশ্বাস করে না। যা হোক, দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি চলমান রয়েছে এর লাগাম ধরতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে ভোক্তা সাধারণকে চরম মূল্য দিতে হবে। দেশের জনগণকে অরাজক অবস্থায় রেখে কোন শাসক বা সরকার ভাল থাকতে পারে না এ কথা সরকার প্রশাসন সকল ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ও সে অনুযায়ী প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।