হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে ২য় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা

0
424

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে ২য় স্ত্রী রিপা আক্তার হত্যার দায়ে স্বামী সোনাহর আলী ও ১ম স্ত্রী সাদেকা আক্তার কে গ্রেফতার করেছে চুনারুঘাট থানার পুলিশ নিহত রিপা আক্তার উপজেলার পশ্চিম পাকুড়িয়া এলাকার আব্দুল আউয়ালের মেয়ে। গত সোমবার ২০, মার্চ বিকেলে সোনাহর আলী ও স্ত্রী সাদেকা আক্তারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত রবিবার রাতে নিহতের মা রাবেয়া খাতুন বাগবাড়ি এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের পুত্র সোনাহর আলী (৪০) তার প্রথম স্ত্রী সাদেকা আক্তার (৩৫) ও তার মেয়ে শিফা আক্তারসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত অনুমান এক বছর পূর্বে সোনাহর আলী প্রথম স্ত্রী সন্তানের তথ্য গোপন করে রিপা আক্তারকে সকলের অগোচরে কোর্ট মেরেজ এর মাধ্যমে ২য় বিয়ে করেন। বিয়ের পর রিপা আক্তার জানতে পারে যে, সোনাহর আলীর ১ম স্ত্রী সাদেকা আক্তার সহ তার সংসারে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে সহ ৪ সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সোনাহর আলী চুনারুঘাট পৌরসভাধীন ৩নং ওয়ার্ডের হাতুন্ড বাসায় ২য় স্ত্রী ও ১ম স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পৌরসভাধীন ১নং ওয়ার্ডের বাগবাড়ী সৈয়দা মনোয়ারা ভবনে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল। নিহত রিপা আক্তার বিয়ের মাস খানেক পর সংসার সুখের জন্য এনজিও থেকে টাকা তুলে কিস্তিতে স্বামী সোনাহর আলীকে একটি সিএনজি গাড়ী কিনে দেয়। সোনাহর আলী সিএনজি গাড়ীটি নিজেই চালিয়ে মাস শেষে রিপা আক্তারের মাধ্যমে যথারীতি কিস্তি পরিশোধ করেন। হঠাৎ স্বামী কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

কিন্তু এনজিওর লোকজন কিস্তির জন্য রিপাকে চাপ প্রয়োগ করছিল। গত-১৮ মার্চ সকাল অনুমান ১১টায় রিপা আক্তার তার স্বামী সোনাহর আলীর কাছে গাড়ীর কিস্তির টাকা চাইলে কিস্তির টাকা দিতে গড়িমসি করে সোনাহর। এ নিয়ে রিপা আক্তার ও সোনাহর আলীর মধ্যে কথা কাঁটাকাঁটি হয়। এক পর্যায়ে সোনাহর আলী রিপা আক্তারকে মারধর করে বাসা থেকে ১ম স্ত্রীর নিকট গাড়ী নিয়ে বের হয়ে যায়।

পরে কিস্তির টাকার জন্য স্বামীর খোঁজে বাগবাড়ী তার সতীন সাদেকা আক্তারের ভাড়া বাসায় গিয়ে ফের কিস্তির টাকা নিয়ে সতীন সাদেকার সাথে ঝগড়ার সৃষ্টি হইলে ওই সময় সোনাহর আলী ও তার মেয়ে শিফা সহ তিন জন মিলে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে সতীন সাদেকা আক্তার স্বামী সোনাহর আলীর সহায়তায় স্ত্রী রিপা আক্তারকে বোরকার হিজাব (ওড়না) দিয়ে গলায় পেছাইয়া ফেলিয়া দেয়।

তখন শিফা আক্তার সৎ মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে রিপা আক্তারের গলায় ও মুখে চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রিপা আক্তার অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর সোনাহর আলী তার ১ম স্ত্রী সাদেকা আক্তার ও তার মেয়ে শিফা আক্তার বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়।

পরে সোনাহর আলী দ্বিতীয় স্ত্রী রিপা আক্তারকে অচেতন অবস্থায় চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রিপা আক্তারের লাশ হাসপাতালের বারান্দায় রেখে রিপার পরিবারের সদস্যদেরকে জানায় যে, রিপা আক্তার বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।

খবর পেয়ে রাতেই চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো: রাশেদুল হকের নেতৃত্বে এসআই রাব্বিসহ একদল পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বামী সতীনকে আটক করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে চুনারুঘাট থানার ওসি মো: রাশেদুল হক জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা মামলা দায়ের ৬ ঘন্টার মধ্যে ১ম স্ত্রীসহ স্বামীকে গ্রেফতার করে আদালতের সোপর্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন পলাতক তাকে  গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 + 8 =