সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে বৃহত্তর ঐক্যই আমাদের লক্ষ্য, প্রেস কাউন্সিল আইন যুগোপযোগি করে, ডিজিটলি নিরাপত্তা আইন সংস্কার এবং কল্যান ট্রাষ্টের কালো আইন বাতিলের দাবিতে, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবনন্ধন

0
404

অপরাধ বিচিত্রা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের অধিকার মর্যাদা রক্ষায় রাষ্টের ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে ১৯৭৪ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারী প্রেস কাউন্সিল আইন তৈরী করে গেছেন। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে বৃহত্তর ঐক্যই আমাদের লক্ষ্য এই নীতিকে ধারণ করে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন’ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে প্রথমবারের মত প্রেস কাউন্সিল দিবস পালনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে কাজ করে চলছে। সাংবাদিকরাই দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রের ১ম সারির যোদ্ধা হিসাবে কাজ করে চলছে।

প্রেস কাউন্সিল আইন যুগোপযোগি ও শক্তিশালী করে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায়, পেশাদারিত্বের সকল মামলা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিস্পত্তি করতে হবে।

সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের বিরুদ্ধে কোন ধরনের উদ্ভুত ঘটনার জন্য দেশের অন্য কোন আদালতে মামলা করা যাবেনা।

অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে হবে। প্রিন্ট মিডিয়ার মানহানি মামলার ক্ষেত্রে জামিন যোগ্য ৫০০/৫০১ ধারার ন্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও জামিন যোগ্য ধারা সংযুক্ত করতে হবে। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত যে কোন মামলা দেশের যে কোন এলাকায় হয়ে থাকুক না কেন বর্তমানে চলমান মামলাগুলো প্রেস কাউন্সিলে হস্তান্তর বা স্থগিত করতে হবে এবং কারাগারে থাকা সকল সাংবাদিকের জামিন দিতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের অনুমতি ব্যতিত কোন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যাবে না, বা অন্য কোন সংস্থাকেও তদন্তের দায়িত্ব দেয়া যাবে না।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশের কোন থানায় বা আদালতে মামলা করার বিধান রাখা যাবে না, শুধুমাত্র প্রেস কাউন্সিলেই মামলা করতে পারবে। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি প্রথমে সম্পাদক বরাবর প্রতিবাদ পাঠাবেন। সম্পাদক তা আমলে নিয়ে প্রতিবাদ প্রকাশ করবেন। তাতেও যদি প্রতিবাদের ভাষা বা আকার প্রকারে আপত্তি থাকে তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রেস কাউন্সিলেই এ মামলা করতে পারবে। প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে যে আইন বিদ্যমান রয়েছে সেভাবেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।

সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে নিরাপত্তায় প্রেস কাউন্সিল আইন যুগোপযোগি ও শক্তিশালী করে দেশের অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে প্রেস কাউন্সিলের অধীনে নিবন্ধন করতে হবে।

একটি উপজেলায় একটি সংগঠনের মাধ্যমে সকল সাংবাদিকের অধিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি মাত্র কেন্দ্রীয় সংগঠনের মাধ্যমেই এর বাস্তবায়ন আইন প্রনয়ন করতে হবে।

কল্যাণ ট্রাস্টের কালো আইন বাতিল করে দেশের সকল সাংবাদিককে এর সদস্য করে এর সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।

এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রস্তাবনা সমুহ নিম্নরূপ:

১। রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃত সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ১ম, ২য়,ও ৩য় স্তম্ভের মত (১ম- মাননীয় সংসদ সদস্য, ২য় -প্রশাসন বিভাগ, ৩য়- বিচার বিভাগ) তুলনা মুলক মুল্যায়ন করতে হবে। যথা:-

ক) এ প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের জন্য পৃথক বাজেট দিতে হবে। এ বাজেটের মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় সাংবাদিকদের জন্য একটি বহুতল ভবন/আবসিক ভবন তৈরি করে দিতে হবে।

যেটি ঐ উপজেলার সাংবাদিকদের অফিস রুম, কনফারেন্স হল হিসাবে ব্যবহার হবে। অতিরিক্ত জায়গা ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে যে আয় হবে তা দিয়ে বিভিন্ন জনসচেতনতা মুলক কর্মকান্ডসহ সভা-সেমিনার পরিচালিত হবে। এর আয় দিয়ে ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, অবসর ভাতা প্রভৃতি তহবিল সংগ্রহ করা হবে।

খ) সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যায় সকল সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে প্রতি বৎসর অনুদান প্রদান করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষন ভাতা, ঝুকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, বাসস্থান, অবসার কালীন ভাতা প্রদান করতে হবে।

২। দেশের সকল সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ প্রেস কাউন্সিল এর মাধ্যমে শৃঙ্খলা রক্ষায় ও শনাক্তকরণে নিবন্ধন করতে হবে। তাহলে দেশে কতজন সাংবাদিক রয়েছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে যথাযথ আইন তৈরীর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

(আইনজীবিগন আইন মন্ত্রনালয়ের অধীন, ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন এবং ডাক্তারগন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন নিবন্ধিত তেমনি সাংবাদিকরাও তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন নিবন্ধন হওয়া বাঞ্চনীয়। তা হলে দেশে কতজন আইনজীবি, কত জন ডাক্তার এবং কতজন ব্যবসায়ী রয়েছে তা যেমন জানা সম্ভব তেমনি কতজন সাংবাদিক রয়েছেন তা জানা সম্ভব হবে এবং সরকারের কাছে তার একটি রেকর্ড থাকবে।

৩। রাষ্ট্রীয়ভাবে ৩রা মে  বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস ও ১৪ফেব্রুয়ারী প্রেস কাউন্সিল দিবস পালন করতে হবে। ঐ দিবসে প্রতিটি জেলা, উপজেলার সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধানে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।

৪। সাংবাদিকদের সার্বিক অধিকার রক্ষায় যুগোপযোগী আইন তৈরী করা, প্রেস কাউন্সিল আইন সংস্কার করে ফেডারেশনের মনোনিত প্রতিনিধিকে প্রেস কাউন্সিল পরিচালনা বোর্ডে অর্ন্তভুক্ত করে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করণ এবং সাংবাদিকদের যে কোন মামলার বিচারিক ক্ষমতা কেবল মাত্র প্রেস কাউন্সিলকে দিতে হবে। অন্য কোন আদালতে সাংবাদিকদের বিচারের ক্ষমতা রহিত করতে হবে। এ ছাড়াও তথ্য সুরক্ষা আইন, প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক সাংবাদিকদের জেল জরিমানার আইন বাতিল করতে হবে।

৫। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে ফেডারেশনের মনোনিত ব্যক্তিকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। প্রেস কাউন্সিল পরিচালনা বোর্ড, কল্যান ট্রাষ্ট পরিচালনা বোর্ড, এবং পিআইবি পরিচালনা বোর্ডে ফেডারেশনের মনোনিত প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। স্নাতকোত্তর পাস ছাড়া কোন সাংবাদিককে কল্যান ট্রাষ্ট্রের সদস্য করা হবে না এমন কালাকানুন বাতিল করতে হবে। দেশের সকল সাংবাদিককে কল্যান ট্রষ্টের সদস্য করতে হবে।

৬। পেশাগত কাজে বাধা দান করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা গ্রহন করতে হবে। এমনকি পুলিশ বা সরকারী কোন ব্যক্তিও যদি সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা দান করে তাহলে তা ফৌজধারী অপরাধ হিসাবে মামলা গ্রহন করতে হবে। তাহলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তৈরী করা সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষার সেই আইন এবং  প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের মর্যাদা, শৃঙ্খলা রক্ষায় ও জাতি গঠন এবং উন্নত দেশ গঠনে আরো জোরালে ভূমিকা রেখে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen − seven =