এক বছরের সওয়াব মাত্র ৬ দিনের শাওয়ালের রোজায়, অবশ্যই রাখবেন

0
348

পবিত্র রমজান মাস ছিল মুমিনের আমলের মৌসুম। এ মাসের আমলগুলো যেন পুরো বছর অব্যাহত থাকে সেটাই এ মাসের প্রধান শিক্ষা। এর মাধ্যমে রোজার সামর্থ্যের জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। কোরআনে রোজা রাখার নির্দেশের পরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যেন তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কোরো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কোরো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম দিক হলো, আমল করা অব্যাহত রাখা। এর মধ্যে রমজানের পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদের তা রাখার নির্দেশ দিতেন। আবু আইউব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখবে এবং পরবর্তী সময়ে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে সে যেন পুরো বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)

ছয় দিনের রোজায় পুরো বছরের সওয়াব : রমজান মাসে রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোজা রাখলে পুরো বছর রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ সব ভালো কাজের প্রতিদান ১০ গুণ করে দেন। তাই রমজান মাস ১০ মাসের সমতুল্য এবং পরবর্তী (শাওয়াল মাসের) ছয় রোজার মাধ্যমে এক বছর পূর্ণতা লাভ করে।’ (নাসায়ি : ২/১৬২)

পুরো বছর সওয়াব হয় যেভাবে : মূলত রমজান মাসের রোজার পর অতিরিক্ত ছয় রোজা মিলে সাধারণত ৩৬টি রোজা হয়। আর তা ১০ গুণ করলে মোট ৩৬০টি হয়। কারণ মুমিনের যেকোনো আমলের সওয়াব ১০ গুণ করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ কোনো ভালো কাজ করলে সে তার ১০ গুণ পাবে। আর কেউ কোনো খারাপ কাজ করলে তাকে শুধু তার প্রতিফলই দেওয়া হবে; তাদের ওপর কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬০)

রমজানের রোজার পরিপূরক : নফল আমলের মাধ্যমে ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা হয়। তেমনি শাওয়ালের রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার ত্রুটিগুলো পূর্ণ করা হবে। নামাজ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার ফরজ নামাজের হিসাব করা হবে। তা ঠিক থাকলে সে সফলকাম। আর তাতে সমস্যা হলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কোনো ফরজ আমলে অপূর্ণতা দেখা দিলে মহান রব বলবেন, তোমরা দেখো, আমার বান্দার কি কোনো নফল নামাজ রয়েছে? নফল থাকলে তা দিয়ে ফরজকে পরিপূর্ণ করা হবে। এভাবে সব ফরজ আমলের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৩)

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা হওয়ার মধ্যে বিশেষ রহস্য রয়েছে। তা হলো এই ছয়টি রোজা রমজানের রোজার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। রোজার মধ্যে যেসব ভুল-ত্রুটি হয়েছে অতিরিক্ত রোজাগুলো তা দূর করে দেয়। বিষয়টি ফরজ নামাজের পর সুন্নত ও নফল নামাজের মতো এবং নামাজে ভুল হলে সিজদায়ে সাহু দেওয়ার মতো।

যেভাবে রাখতে হয় : শাওয়াল মাসের যেকোনো দিন এই ছয়টি রোজা রাখা যাবে। কেউ চাইলে মাসের শুরুতে রাখতে পারবে। কেউ চাইলে মাসের মধ্য ভাগে কিংবা শেষ অংশেও রাখতে পারবে। কেউ চাইলে তা অল্প অল্প করে পুরো মাসে রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে নফল আমলের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। সেই হিসেবে এই আমলও মাসের শুরুতে করা উত্তম।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six + 10 =