দুর্নীতিতে বেপরোয়া রাজউক তথ্য অধিকার আইন মানছে না

0
855

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে দুর্নীতিতে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে যার নাম ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। সেবাগ্রহীরা কার্যালয়ে প্রবেশের আগে অতংকে ভুগছেন। এই অতংকের কারণ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে সেবা গ্রহণ করতে গেলে কিছু চির চেনা পদ্মতি অবলম্বন করতে হবে। এই পদ্মতি অবলম্বন না করলে সেবাগ্রহীরা মাসের পর মাস রাজউকের দুষ্ট চক্রে ঘুড়পাক খেতে থাকবে। এবার পদ্মতির নামটা প্রকাশ করা দরকার। নামটি হচ্ছে ‘ঘুষ’। আবার ‘প্যাকেজ ঘুষ’ নামে আরও একটি পদ্মতি রয়েছে যেটি আরও মারাত্মক। জমির ছাড়পত্র ও ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য এককালীন ঘুষ হচ্ছে প্যাকেজ ঘুষ। তাছাড়া শুধু নকশা অনুমোদন বা পূর্বঞ্চলে প্লট বরাদ্দের জন্য যে ঘুষ দিতে হয় তা হচ্ছে শুধুমাত্র ঘুষ। সেবাগ্রহীরা কাগজপত্রে যতই ঠিক থাকুক না কেন যে পর্যন্ত ঘুষ না দিবে সে পর্যন্ত ফাইল নড়বে না। এদিকে ভবন নির্মানের সময় অধিকাংশ ভবন মালিক মানছে না রাজউক অনুমোদিত নকশা। কার পার্কিং এর জায়গায় দোকান ও কারখানা নির্মান করে ঢাকাকে বসবাসের অনুপযোগি করে ফেলছে অনেক বছর আগেই। পাঁচ তলার অনুমোদন নিয়ে তার চেয়ে বেশি তলা নির্মান করছে দেদারছে। শুধু ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসারকে নগদ নারায়ন দিতে পারলে নকশা ভঙ্গ করে বহুতল ভবন নির্মান করা যায়। এভাবে ঢাকা শহরে কয়েক হাজার বহুতল ভবন রাজউকের নকশা ভঙ্গ করে নির্মান করা হয়েছে।

এসব ভবনের অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদে সম্প্রতি হাই কোর্ট রায় দিয়েছে। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রায় একশত ভবন অন্যায়ভাবে কার পার্কিং এলাকায় দোকান নির্মান করে বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে। হাই কোর্টের নির্দেশে রাজউক এসব ভবনের তালিকা হাই কোর্টে প্রেরণ করে। তবে এসব অনিয়মিত ভবনের বিরুদ্ধে রাজউক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ফলে উক্ত এলাকায় আবাসিক ভবনগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

আবাসিক এলাকায় ভবনে বাণিজ্যিক ব্যবহারের কারণে যানজটসহ পরিবেশ দুষন হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এদিকে পূর্বাঞ্চলে প্লট বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের কারণে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরও অনেকে প্লট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার একজনের নামে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিল করে আরেকজনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে অহরহ। এখানেও চলছে ঘুষের কারবার।

গোল্ডেন মনিরের সাথে যোগসাজস করে রাজউকের প্রায় একশত প্লট জালিয়াতির ঘটনা কারও অজানা নয়। এসব জালিয়াতির সাথে রাজউকের কর্মকতারা জাড়িত থাকায় দুদকে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ঢাকার বনানীতে এফ আর টাওয়ার ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মান করায় অগ্নিকান্ডে জানমালের ক্ষতি হয়।

ভবনটি অনিয়মের মাধ্যমে পাঁচ তলা বেশি নির্মানের সময় রাজউকের তদারকি ছিল কোথায়? এদিকে তথ্য অধিকার আইনে রাজউকে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করলে রাজউক ছলে বলে কৌশলে আবেদনকারীকে চাহিত তথ্য দিচ্ছে না। অনিয়ম দুর্নীতি আড়াল করার জন্যই তথ্য গোপন করছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিরা জোটবদ্ধ হয়েছে। ওদের সম্পদ ও বিত্যবৈভব আকাশ ছোঁয়া।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 3 =