–◈❥◈– হাদিস অস্বীকার কারী/কুরআনবাদীরা কাফের

0
357

প্রশ্ন: কেউ যদি বলে, আমি হাদিস মানি না; শুধু কুরআন মানি। তাহলে তার বিধান কি? উত্তর: যারা বলে, “আমরা হাদিস মানি না; শুধু কুরআন মানি” তাদেরকে বলা হয়, আহলে কুরআন বা কুরআনবাদী। এই গোষ্ঠীটি ইসলামের গণ্ডি থেকে বহিষ্কৃত, কাফির-মুরতাদ এবং ইসলামের ঘোরতর শত্রু- এ ব্যাপারে পৃথিবীর সকল আলেম একমত। ➧ এর কারণ সহ বিস্তারিত পড়ুন: জানা অপরিহার্য যে, কুরআন ও হাদিস উভয়টির সমন্বয়েই ইসলাম। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি অচল। কেননা কুরআনের ব্যাখ্যা হল, হাদিস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বাস্তব জীবনে কুরআনের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন এবং উদাহরণ দিয়ে উম্মতকে কুরআনের মর্মবাণী বুঝিয়েছেন। হাদিস ব্যতিরেক কুরআন মর্মবাণী ও প্রকৃত অর্থ কোনও কালেই বুঝা সম্ভব নয়। আরেকটি বিষয় হল, কুরআন যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি (প্রত্যাদেশ) ঠিক তেমনিভাবে হাদিসও ওহি। প্রথমটিকে বলা হয় ওহি মাতলু আর ২য়টিকে বলা হয় ওহি গাইরে মাতুল। অর্থাৎ উভয়টির উৎস এক। কারণ স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ থেকে বানিয়ে কোনও কথা বলেন নি। তিনি যা বলেছেন তা ওহি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হয়েই বলেছেন। ◍ আল্লাহ বলেন, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى “তিনি (নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মনগড়া কথা বলেন না। তা তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।” (সূরা নাজম: ৩-৪) কুরআনে আল্লাহ তাআলা বহু স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ-নিষেধগুলোই মূলত: হাদিস। ◍ আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا “আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।” (সূরা হাশর: ৭) ◍ তিনি আরও বলেন, قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১) ◍ তিনি অন্যত্র বলেছেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الآخِر “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব: ২১) ◍ তিনি আরও বলেন, فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً “কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা নিসা: ৬৫) ◍ তিনি আরও বলেন, فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ “আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: ৫৯) উলামাগণ বলেন, এর অর্থ হল: কিতাব ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দাও। ◍ তিনি আরও বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ الله “যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।” (সূরা নিসা: ৮০) ◍ তিনি অন্যত্রে বলেছেন, وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ صِراطِ اللهِ “আর নিশ্চয়ই তুমি (হে নবী) সরল পথ প্রদর্শন কর সেই আল্লাহর পথ।” (সূরা যুখরুফ: ৫২) ◍ তিনি আরও বলেন, فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ “সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (সূরা নূর: ৬৩) ◍ তিনি আরও বলেন, وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ “আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ।” (সূরা আহযাব: ৩৪) ◍ তাছাড়া সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি সব কিছুর খুঁটিনাটি বিধান-বিধান কুরআনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয় নি। সেগুলোর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ পদ্ধতি পাওয়া যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস সমূহে। ❑ তাহলে কি কুরআন অসম্পূর্ণ? এখানে হাদিস অস্বীকার কারীরা প্রশ্ন করতে পারে যে, কিভাবে সালাত আদায় করব, কিভাবে যাকাত দিব, কিভাবে রোজা রাখব ইত্যাদি তো কুরআনে নেই। তাহলে কি কুরআন অসম্পূর্ণ? আমরা এর উত্তরে বলব, কুরআন অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ। কুরআনে কোনও ত্রুটি বা খুঁত নেই। কেননা কুরআন যখন নিজেই বলেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা দিবেন তখন কুরআনের প্রতি এ অভিযোগ তোলা কিভাবে সঙ্গত হতে পারে? সুতরাং কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হাদিস ও ব্যাখ্যা অনুসরণ করা। আমরা যদি তা না করি তাহলে প্রকারান্তরে এই কুরআনকেই অস্বীকার করা হবে। ◍ আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ “আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা করে।” (সূরা আন নাহল: ৪৪) ◍ তিনি আরো বলেন, وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِي ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ “আর আমরা তো আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং যারা ঈমান আনে এমন সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − 2 =