এ্যাসিল্যান্ডের কথা বলার সময় নেই, ব্যবস্থা নিবেন বলে জানালেন জেলা প্রশাসক
এম শাহীন আলম :খুলনার রুপসা উপজেলার ৩ নং নৈহাটি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগে একাধিক পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট হলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। নায়েব মনিরুজ্জামান এর কাছে সরকারি অফিসের সকল নিয়মনীতিই যেন অসহায় বলে মন্তব্য করেছেন পতিকার না পাওয়া স্থানীয় এই এলাকার ভুক্তভোগী জনগণ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নায়েব মনিরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে শত অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনকভাবে সবকিছু আগের মতোই তিনি চলছেন বরং তার রক্তচক্ষু, দালাল চক্র ও দূর্নীতি দেখে চরম হতাশায় ভূমি অফিসের সেবা গ্রহিতারা। অনেকেই তাদের পাতানো ঘুষ বাণিজ্যের কারণে সরকারি সেবা নিতে পারছেন না বলেও জানান। আতংকিত নায়েব মনিরুজ্জামান এর ঘুষ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে নীরবতা পালন করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ বলেন, এখানে সেবার নামে হরিলুট চললেও দেখার কেউ নেই কারণ একাধিক পত্র-পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদে রিপোর্টে তার কিছুই হয় না। কারণ কিছু মুখোশধারী ঘুষখোর সবার সামনে সৎ অফিসারের মুখোশ পরে আবার কৌশলে নায়েবের ঐ ঘুষের অংশ খেয়ে নামে বেনামে অবৈধ অর্থ আত্মসাতের মধ্যে দিয়ে বিদেশে বেগম পাড়ায় রাত যাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সর্বদা তৎপর থাকে। তিনি আরো বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অধীনস্থ কর্মকর্তা কখন, কোথায় কি করেন অবশ্যই তিনি ভালোভাবে জানেন। সুতরাং এ সকল অপরাধের সাথে নায়েবের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ অর্থ্যাৎ এ্যাসিল্যান্ড মোঃ সাজ্জাদ হোসেন অবশ্যই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছে বলে মনে করছি। সেটা না হলে অসংখ্য সাক্ষ্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ও সেবাগ্রহীতার সকল বক্তব্যের আলোকে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও কতৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত ভাবে তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। বরং তাকে আরো বেশি কৌশলে ঘুষ বাণিজ্য করতে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন। যদি তাই না হতো তবে এই অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য যদি নায়েবের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এ্যাসিল্যান্ড মোঃ সাজ্জাদ হোসেন খতিয়ে দেখতেন তবে এতবড় ঘুষখোর নায়েবের এতক্ষন এখানে চাকরি থাকতো না। সুতরাং এরা দুজনেই একই গোয়ালের গরু।
যেখানে অত্র অঞ্চলের একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিডিও সাক্ষাৎকারের কিছু বক্তব্যে নিচে তুলে ধরা হলোঃ (১) মোঃ মারুফ হোসেন (৩৯) পিতা মৃত সৈয়দ আহমেদ মোল্লা সাং-ইস্পাহানী ১নং গলি, রুপসা স্ট্যান্ডরোড, খুলনা। তিনি বলেন, নৈহাটি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা নায়েব মনিরুজ্জামান আমার ২৬ শতক বিলান জমির জন্য ১০,০০০/ (দশ হাজার) টাকা খাজনা নিয়ে কয়েক’শ টাকার রিসিভ কপি প্রদান করে (২) বিধবা ছাহেরা বেগম (৫৫), স্বামী মৃত ছাত্তার সরদার, সাং- জাবুসা, নৈহাটি, রুপসা, খুলনা বলেন, আমার ১০ শতক ভিটাবাড়ি যার খতিয়ান নং -৭৫২ ও দাগ নং -৯৩৬১ এর জন্য ৪০০০/ (চার হাজার) টাকা নিয়ে আমাকে ৩২০ টাকার রশিদ দিয়েছে এই নায়েব মনিরুজ্জামান (৩) একই গ্রামের মৃত বাহের আলী গাজীর পুত্র মোঃ তোফাজ্জল গাজী (৫৪) বলেন, আমার জমির ৬৪২ নং খতিয়ানের ৯২০০,৯২০৪ এ ২.৮ ও ১.২ শতক জমির জন্য আমার কাছে নায়েব মনিরুজ্জামান ৭০০০/(সাত হাজার) টাকা দাবি করেন কিন্তু এতটাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে অসম্ভব তাই আমার ভাইপো ইউসুফ গাজী অবশেষে অন্যজনের দিয়ে ৮৯০ টাকায় করিয়ে নিয়ে এসেছে। (৪) জাবুসা গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের পুত্র মোঃ হাবিবুর রহমান (৭২) বলেন, নায়েব মনিরুজ্জামান আমার কাছ থেকে প্রায় ১৬০০০/(ষোল হাজার) টাকা নিয়ে অল্প কয় টাকার রশিদ দিয়েছে। মনের কষ্টে তিনি অভিযুক্ত নায়েবের কমপক্ষে ১০০ বছর জেল হাজতের দাবি ও করেন তিনি। (৫) কাজী মোঃ ইব্রাহীম শেখ (৪২) পিতা মৃত দ্বীন মোহাম্মদ শেখ জাবুসা মধ্যে পাড়া, নৈহাটি,রুপসা, খুলনা বলেন, আমার জমির জন্য আমার থেকে ১০০০ (এক হাজার) টাকা নিয়ে ১২০ টাকার রশিদ দিয়েছে। (৬) মোঃ আলামিন শেখ ( ২৭) পিতা মোঃ রহমান শেখ (৫৫), জাবুসা পূর্ব পাড়া, নৈহাটি, রুপসা, খুলনা বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে ১৫০০০/ পনের হাজার টাকার বিনিময়ে ২২০০ বাই’শ এবং ১৮০০০/ আঠার হাজার টাকার বিনিময়ে ১৭০০ সতের’শ টাকার সিলিপ দিয়েছে। (৭) জাবুসা পূর্ব পাড়ার মৃত আখের শেখের স্ত্রী বিধবা মহিলা বলেন, আমার কাছে নায়েব মনিরুজ্জামান ও তার পিওন রবিউল জমির খাজনা ৫০০০/ (পাঁচ হাজার) টাকা দাবি করেন সারাদিন বসিয়ে রেখে আমাকে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো অনেকেই ভুক্তভোগী থাকলেও লোক লজ্জার ভয় ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থাকা ভূমিদস্যুদের সামনে মুখ খুলতে পারছেন না বলে জানা গেছে। তাছাড়া এভাবে চিহ্নিত এই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শত অভিযোগের ভিত্তিতে সকলেই শাস্তি দাবি করলেও কোন সুফল দেখতে পাচ্ছে না অত্র এলাকার ভুক্তভোগীরা। তাছাড়া অসহায় মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া নায়েব মনিরুজ্জামান বেশি টাকা দাবি করায় অনেকেই তাদের জমির খাজনা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই নায়েব ও এ্যাসিল্যান্ডের যৌথ যোগসাজশের কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে দ্রুত অপসারণ সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদকসহ রুপসা উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযুক্ত নায়েবের বিরুদ্ধে বক্তব্যে ব্যবস্থা নিতে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি শুনে প্রথমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করে প্রায় দুই ঘন্টা বসিয়ে রেখে নায়েব মনিরুজ্জামান কে ডেকে তার সাথে চোখের ইশারায় কথা বলেন। অতঃপর প্রতিবেদকদেরকে উচ্চ স্বরে বলেন, আমি এখন বিজি আছি, খাইতে যাবো আপনাদের সাথে কথা বলার মত সময় এখন আমার হাতে নাই। এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াছির আরেফীন মুঠো ফোনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন, অনুসন্ধান অব্যাহত পরবর্তী সংখ্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে,