খোলা ড্রামে তেল বিক্রি বন্ধের দাবি: ‘ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল সবার জন্য জরুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্যকর ও কর্মক্ষম প্রজন্ম গঠনের স্বার্থে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রামে খোলা তেল বিক্রি, অস্বচ্ছ প্যাকেজিং এবং ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সংযোজনের অভাবই এক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। গতকাল (১১ নভেম্বর, ২০২৫) রাজধানীর বিএমএ ভবনে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা।
“সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার ২৩ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় বক্তারা খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বিক্রির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি একদিকে যেমন সরকারি নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, অন্যদিকে তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ (২০১১-১২)-এর তথ্য উল্লেখ করে জানানো হয়, দেশের প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুজন ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে ভুগছে।
যদিও ২০১৩ সালে ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন প্রণীত হয়েছে, বাস্তবে বাজারে থাকা অধিকাংশ তেলেই হয় ভিটামিন অনুপস্থিত, অথবা পরিমাণের দিক থেকে আইনি মানমাত্রার চেয়ে অনেক কম পাওয়া যায়। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণার ফলাফল আরও উদ্বেগজনক—বাজারে বিক্রি হওয়া ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়, যার ৫৯ শতাংশে ভিটামিন ‘এ’ একেবারেই নেই এবং মাত্র ৭ শতাংশে নির্ধারিত আইনি মানমাত্রা অনুযায়ী ভিটামিন পাওয়া গেছে।
বক্তারা সতর্ক করেন, এইসব ড্রামের অধিকাংশই আগে কেমিক্যাল, মবিল বা শিল্পপণ্য সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং নন-ফুড গ্রেড। এসব ড্রামে তেলের উৎস বা মান সংক্রান্ত কোনো তথ্য না থাকায় নিম্নমানের বা ভেজাল তেল সহজে বাজারে প্রবেশ করছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বক্তারা বলেন, ২০২২ সালের জুলাই থেকে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর থেকে খোলা পাম তেল বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও, বাজারে এখনো এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ড্রামে তেল বিক্রি অব্যাহত আছে। বক্তাদের মতে, গুণগত মানসম্পন্ন তেল পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করে, তাই নিরাপদ প্যাকেজিং অপরিহার্য।
ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতি শিশুদের অন্ধত্বসহ মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় এবং ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবে রিকেটস, হাড়ক্ষয় ও হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। বক্তারা বলেন, ভোজ্যতেলে কেবল ভিটামিন ‘এ’ নয়, ভিটামিন ‘ডি’-এরও সংযোজন একটি সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও অত্যন্ত কার্যকর জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ। এছাড়া, আলো বা সূর্যের তাপে ভিটামিন ‘এ’ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় উল্লেখ করে কর্মশালায় আলো-প্রতিরোধী ও অস্বচ্ছ বোতলে তেল সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
এমতাবস্থায়, নিরাপদ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সমন্বিত ও কঠোর তদারকি জরুরি বলে তাঁরা অভিমত দেন।
এই কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের সাবেক পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কনসালটেন্ট মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রাম ও ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ; ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সভাপতি ও দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর বিশেষ প্রতিবেদক দৌলত আক্তার মালা; এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার ডাঃ আলিভা হক এবং প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।


