ছাত্র জনতা হত্যা মামলাসহ তিনটি ফৌজদারী মামলার আসামী এখন বিএনপির সেল্টারে।
বিশেষ প্রতিনিধি : গনঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতা হত্যা এবং লাশ পোড়ানো, হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে আহত করাসহ একাধিক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ কর্মী এখন সরুপকাঠী বিএনপির একটি গ্রুপের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে তথ্য সূত্রে জানা গেছে। গত ৫ এবং ৬ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বিশ্ব বিবেক নাড়া দেয়া ঐ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও রিক্সাভ্যানে তুলে লাশ পোড়ানো মামলার অন্যতম আসামি মোঃ সোহেল শিকদার। ইহাছাড়াও গত ১৯ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে আহত করার মামলারও সে আসামি। পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) থানার একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলারও সে এফ.আই.আর ভুক্ত আসামি। সে পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠী গ্রামের মৃত মোবারক শিকদারের পুত্র বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগার বলে পরিচয় দানকারী স্থানীয় একটি চক্রের ছত্রছায়ায় থেকে মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হামলা করার একাধিক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান ছিল তার নিত্ত নৈমিত্তিক ঘটনা। তার কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ। কারণ পিছনে শক্তি ছিল আওয়ামী লীগ পরিচয়দানকারী তার বড় ভাইয়েরা। তার দ্বারা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগীরা। কিছু দিন পূর্বে একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলার এফআইআর ভুক্ত আসামি হয়ে নেছারাবাদ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে গিয়েছিল সে। নেছারাবাদ থানার এফ.আই.আর নং ১২৭৩। ঐ মামলায় বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। তখন ঐ মামলায় স্হানীয় আওয়ামী লীগের একটি মহল তাদের কর্মী বলে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।
সে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে জুলাই – আগস্টে সংঘটিত ছাত্র জনতার আন্দোলন দমাতে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের সাথে ঢাকা ও তার আশেপাশে বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহন করে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বিশ্ব বিবেক নাড়া দেয়া ছাত্র জনতা হত্যা ও লাশ পোড়ানোর দায়ে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা হয়। একটি মানবাধিকার সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ তোহা বাদী হয়ে দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬ ( ২) ৩৪ মামলাটি দায়ের করেন। সি.আর. মামলা নং ১২১৮/ ২০২৪ (আশুলিয়া)। ঐ মামলায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ৫০/৬০ জনকে। উক্ত মামলায় সোহেল শিকদার ৩১ নং আসামি বলে মামলা সূত্রে জানা যায়। ইহাছাড়াও তার বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গত ১৯ জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনের নামে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় সেখানেও অন্যান্য সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে তার সক্রীয় অংশ গ্রহন ছিল বলে জানা যায়। ঐ ঘটনায় গুলিতে আহত মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক এবং ২০০/২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ঢাকার সি এম এম আদালতে দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬(২) ৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। সি.আর. মামলা নং – ৭৯৮/২০২৪ (যাত্রাবাড়ী)। উক্ত মামলায় সোহেল শিকদার ৩৩ নং আসামি বলে মামলা সূত্রে জানা যায়। বাদীর মৌখিক বর্ননা ও মামলার বিবরণে জানা যায় যে, বিগত ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে দুপুর আনুমানিক ১২-০২ ঘটিকায় স্হানীয় জনসাধারণ স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের দাবিতে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তখন ১-৮ নং আসামীদের নির্দেশে উক্ত সোহেল শিকদার সহ অন্যান্য আসামিগন পুলিশের সহায়তায় অস্ত্র স্বস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে। সাধারন জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে যাত্রাবাড়ী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তখন পুলিশ ও আসামিগন তথা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নির্বিচার গুলিতে মামলার বাদী মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। তার পেটের সামনে থেকে গুলি ঢুকে পিছন দিক থেকে বের হয়ে যায়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় অন্যরা উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। ঐ গুলি বর্ষনের ফলে আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেকেই মারা যান। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে প্রায় পংগু অবস্থায় আদালতে এসে মামলাটি দায়ের করেন বলে বাদী মোঃ মুজাহিদুল জানান।
এদিকে সোহেল শিকদারের গ্রামের এলাকায় খোজ নিয়ে জানা যায়, সে একের পর এক ফৌজদারী মামলার আসামি হয়ে এখন নিজেকে স্হানীয় বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দিতে শুরু করেছে। স্বরুপকাঠীর দ্বিধা বিভক্ত বিএনপির একটি অংশের কর্মী বলে সে নিজেকে দাবি করছে। বিএনপির ঐ অংশটি বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে স্হানীয় রাজনীতিতে একদম নিসক্রীয় ছিল। এখন আওয়ামী লীগের দালাল, হত্যা ও ধর্ষন মামলা সহ বিভিন্ন ফৌজদারী মামলার আসামি, এবং মাদক কারবারীদের নিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বিএনপির ঐ অংশটির কতিপয় নেতা পরিচয় দানকারী লোক সোহেল শিকদারের গেরেফতার এড়ানোর জন্য স্হানীয় থানা সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট তদ্বিরে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। ইহাছাড়াও সোহেল শিকদারের অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য একাধিক বিএনপি এবং সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি অপরাধ বিচিত্রা অফিসে ফোন করতেছে। তবে কি আওয়ামী লীগ কর্মী সশস্ত্র সন্ত্রাসী, একাধিক ফৌজদারী মামলার আসামি এখন বিএনপির সেল্টারে?