ইসলাম ধর্মসংগঠন

‘ধর্মীয় সম্প্রীতি-বাস্তবতা ও করণীয় শীর্ষক জাতীয় সংলাপ’ অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে আজ ২৬ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, সকাল ১০:০০টায় হোটেল লেকশোর গ্রান্ড, ঢাকায় ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি-বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শ্রী হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি ও স¤পাদক, মাসিক সমাজ দর্পন। প্যানেল আলোচনায় ছিলেন অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়–য়া, বৌদ্ধতত্ত্ববিদ, সুপার নিউমারারি শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম, পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ড. শাহনাজ করীম, প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার, ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ: এ বাংলাদেশে ফ্রিডম অব রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ প্রজেক্ট।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট পরিচালিত গঁষঃর-ংঃধশবযড়ষফবৎ ভড়ৎ ওহরঃরধঃরাব চবধপব ধহফ ঝঃধনরষরঃু (গওচঝ) প্রকল্পের বিষয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন উক্ত প্রকল্পের ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ড. নাজমুন নাহার নুর লুবনা। এছাড়া অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ আছে এই দেশের প্রতিটি নাগরিক, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নতা সত্ত্বেও তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। সরকার পাল্টায়, কিন্তু রাষ্ট্র অপরিবর্তিত থাকে। অন্তর্বর্র্তীকালীন সরকারও চিরদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে না। তবে এই সরকারের প্রচেষ্টা থাকবে, পার¯পরিক সাম্প্রীতি বজায় রাখা, যাতে এই দেশের প্রতিটি মানুষ যেন তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারে।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর গণতন্ত্র ও সমঝোতার আকাংখা শুরু হয়। এর মূলে ছিল সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদা। দুঃখজনক হলেও অপরাজনীতি, ধর্মের অপব্যাখা, জাতিগত ভিন্নতার জন্য আমরা সে আকাঙ্খা পূরণ করতে পারিনি। কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এর জন্য সকলকে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যে স্বপ্ন পুরণের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরা প্রাণ দিয়েছিলেন, সে স্বপ্ন পুরণের জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

মুক্ত আলোচনায় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই মানুষ। আমরা অন্য প্রাণী থেকে ভিন্ন। কারণ আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তাই আমরা সহিষ্ণু, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এখন আমরা যদি সম্প্রীতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে পারি, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে সুরক্ষা করতে পারবো।’

অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়–য়া বলেন, ‘আমরা এক ও অভিন্ন। নানা, জাতি, নানা বর্ণ ও নানা ধর্ম নিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতির দেশ, শান্তির দেশ। শান্তির জন্য নিজের চিত্তকে বিকশিত করা প্রয়োজন।’ শাহনাজ করীম বলেন, সম্প্রীতি সুরক্ষা এবং ধর্ম ও বিশ^াসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষায় রাজনৈতিক ধর্মীয় নেতৃত্বের ভূমিকা মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বহু জাতি-সংস্কৃতির দেশ। সাম্য, সম্প্রীতি, সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য জাতি-ধর্ম-দল-মত-লিঙ্গ-ভাষা নির্বিশেষে সকলের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্র“তিবন্ধ হয়ে কাজ করি, সকল মানুষের প্রতি মর্যাদা ও সমান শ্রদ্ধাশীল থাকবো এটা আমাদের প্রত্যয় হোক।

উল্লেখ্য, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট একটি আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাবান বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বিগত তিন দশক ধরে সারা দেশে নানাবিধ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ঋঈউঙ এর সহযোগিতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট কর্তৃক Multi-stakeholder for Initiative Peace and Stability (MIPS) প্রকল্পের আওতায়

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং জাতিগত সহিংসা প্রতরোধ, বৈষম্যরোধ ও প্রশমিতকরণে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে ধর্মীয়, শান্তি ও সম্প্রীতি প্লাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় দেশের ৩০টি জেলা ও ৮০টি উপজেলায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও প্রচারাভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

এছাড়া সকল অংশগ্রহণকারীগণ ও ধর্মীয় নেতা উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ মুক্ত সামাজিক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও বৈচিত্র্য- এই তিনটি অনন্য, পরষ্পর সম্পর্কিত এবং অলংঘনীয় মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও উগ্রবাদীতাকে অতিক্রম করে একটি উদার, সহিষ্ণু, বহুত্ববাদী, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, মুক্ত, মানবিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার ভিত্তিই হবে এই মূলনীতি। আরো বলেন, কর্ম ও আচরণে এই মূলনীতিকে সদা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকবো, এবং এর সাথে সাংঘর্ষিক বা লংঘন হয় এমন যে কোনও তৎপরতাকে নিরুৎসাহিত ও প্রতিরোধ করবো। আমরা বিশ্বাস করি যে, যদি পরস্পরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে সামাজিক সহাবস্থান নিশ্চিত হয় তবে বাংলাদেশ হবে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

স্বস্ব ধর্ম ও সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও উগ্রপন্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘মর্যাদা, নিরাপত্তা ও বৈচিত্র্য’ কে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে একটি উদার, সহিষ্ণু, বহুত্ববাদী, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, মুক্ত ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এই ঘোষণাপত্রের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এই অঙ্গীকার মেনে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমি নিজের আগ্রহ থেকে সারা বাংলাদেশ থেকে সহিংস উগ্রবাদ নিরসনের এই জাগরণে যুক্ত হলাম। এই অভিযান আমার কাছে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, মুক্ত, মানবিক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। এই অভিযানের একজন অংশীদার হতে পেরে তারা গর্বিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button