হিবাকুশাদের সংগঠন নিহুন হিদানকিও ২০২৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান
হিবাকুশা জাপানি শব্দ। যার অর্থ বিস্ফোরণে বিক্ষত মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিশেষতঃ হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় শিকার বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলা সংগঠন “ নিহুন হিদানকিও”। সেই সংগঠনের ব্যক্তিদেরকেই জাপানি ভাষায় হিবাকুসা বলে অভিহিত করা হয়। যাদের নিজেদের বেঁচে থাকার করুণ ইতিহাস নির্ভর পারমাণবিক অস্ত্রের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে অসহ্য ও অসহনীয় শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নেতিবাচক প্রভাব- যা জাপানের সমাজে এখনও বিরাজমান। সেই সমাজ ব্যবস্থায় আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে, করছে কিংবা ভবিষ্যতে এসব করবে বলে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই ব্যক্তিদের সংগঠনকে নরওয়ের নোবেল কমিটির নোবেল শান্তি পুরস্কার- ২০২৪ ’র জন্যে বাছাই করলেন এবং অবশেষে হিবাকুশাদের সংগঠনকে বিগত অক্টোবর ১১, ২০২৪ নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করলেন। যদিও হিবাকুশাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির আন্দোলন রূপ লাভ করে ১৯৫৬ সালে। আগামী ২০২৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসিকর ধ্বংসযজ্ঞের ৮০ বছর পূর্ণ উপলক্ষ্যে বিশ্ববাসীকে ইতিহাসের এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমাদের নিজেদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া- যে পারমাণবিক অস্ত্রই হলো বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্বক অস্ত্র।
“জনগণ শান্তি কামনা করছে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা যুদ্ধ করার জন্য জোর দিয়ে বলছেন আমরা জয়ী না হওয়া পর্যন্ত থামবো না”- উল্লেখিত বক্তব্যটি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানায়- এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী জাপানের হিবাকুশাদের সংগঠন নিহুন হিদানকিও সহ-সভাপতি তৌশিউকি মিমাকি। আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি নিহুন হিদানকিও সংগঠনের সহ-সভাপতি তৌশিউকি মিমাকি। যিনি একজন হিবাকুশা হিসেবে তার জীবনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তর ৮৩ বছর পেরিয়েছে। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়ার আন্দোলন জড়িয়ে স্বীকৃতি অর্জন করলেন। এখন যদি রাশিয়া ইউক্রেনে ও ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাঁজায় কিংবা লেবাননে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে- তাহলে বিশ্ব আবারো ধ্বংসযজ্ঞে পতিত হবে। বিশ্বের শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংগঠন জাতিসংঘকে কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরী- তানাহলে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহ ব্যবহারের পরিণতির আশঙ্কা থেকেই যাবে। আমরা আশা করব হিরোশিমায় নিক্ষেপিত লিটল বয় ও নাগাসাকিতে নিক্ষেপিত ফ্যাট ম্যান জাতীয় পারমাণবিক বোমা বানানো ও প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকা। এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেরও আইনগত সংস্কার অতান্ত জরুরী। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়ারগান ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেন- পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার চিরতরে বন্ধে জনমত গড়ে তুলতে বহুবছর ধরে কাজ করছে নিহুন হিদানকিও। এ-লক্ষ্যে হামলায় ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দুঃসহ যে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে এর ভয়াবহতা তুলে ধরার কাজটি করে যাচ্ছেন। পারমাণবিক অস্ত্র যে একটি নিষিদ্ধ বিষয় তা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে নিহুন হিদানকিও নামক সংগঠনটি। বিগত ১১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে নিহুন হিদানকিও সংগঠনটি নোবেল প্রাপ্তির সংবাদ পাওয়ার পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায়- তৌশিউকি মিমাকি বলেন- কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এটা ঘটতে পারে। পারমানবিক অস্ত্রের ইতিবাচকতার কথা যারা বলেন, তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন- বলা হয় যে পারমাণবিক অস্ত্রের কারণ নাকি বিশ্বে শান্তি বিরাজ করছে- কিন্তু সন্ত্রাসীরা ও তা ব্যবহার করতে পারে। বার্তা সংস্থায় এপিকে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে নিহুন হিদানকিও সহ-সভাপতি তৌশিউকি মিমাকি বলেন। পরিশেষে, বিগত অক্টোবর ০২, ২০২৪ জাপানের মিয়াজাকি বিমান বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ্যের সময়কার মার্কিন বাহিনী কর্তৃক নিক্ষেপকৃত অবিস্ফোরিত বোমা থাকার কারণে। যা মূলত হামলার প্রতিরোধে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। জাপানের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান , হঠাৎ করে বিমান বন্দর এলাকায় রানওয়ের পাশে ট্রেক্সি ওয়েতে বিস্ফোরণের ফলে ২৩ ফুট প্রস্থ ও ৩.২ ফুট দীর্ঘ একটি গর্তের সৃষ্টি হয়। অতপর জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোরসের বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল এসে বিষয়টি নিশ্চিত করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ৭৯ বছর পরেও জাপানে মাটির নিচে বোমা খুজে পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে নরওয়ের নোবেল কমিটি এবছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে জাপানের হিবাকুশাদের সংগঠন- নিহুন হিদানকিওকে।