দলীয় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে অতি দ্রুত দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করুন: টিআইবি
ঢাকা, ৩১ অক্টোবর ২০২৪: জন্মলগ্ন থেকে বিদ্যমান কমিশন নিয়োগে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন কমিশন নিয়োগের আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গত ২৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের প্রেক্ষিতে আজ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দলীয় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত দক্ষ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে আহŸান জানানো হয়, যারা প্রকৃত অর্থেই স্বার্থের দ্বন্দের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে দুদকের প্রতি জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘চলমান রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের আওতাভুক্ত অন্যতম প্রতিষ্ঠান দুদক, যার দীর্ঘকালীন অকার্যকরতার প্রেক্ষিতে দুদক সংস্কার কমিশনের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে দুদকের দায়িত্ব পালনে উপযোগী সুপারিশ প্রণয়ন করা। এমন প্রেক্ষিতে সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমিশনের পদত্যাগের ফলে সরকার অবিলম্বে নতুন কমিশন গঠনের দায়িত্ব নিয়েছে। পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানের কাজ চলমান রয়েছে। এমন একটি সময়ে শীর্ষ পর্যায়ে শূন্যতা দুদকের তদন্তসহ সকল কার্যক্রমে স্লথতা ও এমনকি স্থবিরতা সৃষ্টি করবে। কেননা নতুন কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত নতুন করে কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু ও তদন্ত বা মামলার সুযোগ থাকবে না। ফলে দ্রুত নতুন কমিশন গঠনের মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরণ করা জরুরি। অন্যথায়, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘২০০৪ সালে দুদকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমরা সংস্থাটিকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক বিবেচনায় নিয়োগ এবং রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক স্বার্থরক্ষায় ব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে দেখে আসছি। কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় কমিশনের নেতৃত্বের রাজনৈতিক আজ্ঞাবহ চরিত্রের দৃষ্টিকটু দৃষ্টান্তও রয়েছে। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়ার কারণে কমিশন কখনোই প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারেনি, আগ্রহীও হয়নি। একই কারণে নিয়োগ পাওয়া কমিশনারগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা করণীয় নির্ধারণেও ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতার বাইরে থাকার মানদন্ডে প্রভাবিত। অনেক ক্ষেত্রে বড় আকারের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তথ্য ও সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও তদন্তের উদ্যোগ না নেওয়া, আবার দায়সারা উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে অভিযুক্তকে দায়মুক্তি প্রদানের অশুভ নজিরও তৈরি করেছে দুদক। অন্যদিকে, ক্ষমতার বাইরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য কোনো কারণে বিরাগভাজন মহলের জন্য হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিয়েছে দুদক। ফলে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমনের স্থলে দুর্নীতি সহায়ক ও সুরক্ষাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।’
ড. জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায়ই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে, দুর্নীতি দমনে দক্ষ-উপযুক্ত, ব্যক্তিজীবনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, আমলাতান্ত্রিক স্বার্থমুক্ত এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের আহŸান জানাই। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে নজিরবিহীন ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্ট জনপ্রত্যাশা যেমন আরো একবার ধূলিসাৎ হবে, তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।’