সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর এসিড নিক্ষেপ, আটক ৮২
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করাকে চট্টগ্রাম নগরের হাজারী গলি এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইসকন সদস্যরা এ সময় একটা দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আসা সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপরও এ সময় হামলা চালায় ইসকনের সদস্যরা। এ সময় তারা ছাদের উপর থেকে এসিড নিক্ষেপ করে। এতে ৫ সেনা, ৯ পুলিশ সদস্যসহ মোট ২০ জন আহত হয়েছেন। যৌথবাহিনী সেখানে অভিযান চালিয়ে ইসকনের ৮২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার হাজারী গলি এলাকায় এ ঘটনা শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকে। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। সশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। ফটোকার্ড সংবলিত সেই পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন ওসমান আলী নামে হাজারী গলির মিয়া শপিং সেন্টারের একটি দোকানের মালিক। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার বিকাল থেকেই সেখানে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা উসমানের দোকানে হামলা চালায় ও লুটপাট করে।
তারা সেখান থেকে উসমানকে উঠিয়ে নিয়ে মারধর করতে চাইলে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যান। এ সময় উত্তেজিত সনাতনী যুবকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। আর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও বিজিবি আসে। এ সময় বিক্ষুব্ধ সনাতনী যুবকরা যৌথবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। বাড়ির ছাদের উপর থেকে যৌথবাহিনীর ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৪ সেনা সদস্যসহ আরও ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। একপর্যায়ে যৌথবাহিনী সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। সেখান থেকে ৮০ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের অধিকাংশই ইসকনের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর এ ঘটনায় ৫৮২ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘ইসকনকে নিয়ে দেয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ওসমান আলী নামে এক ব্যক্তিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এমন তথ্য ৯৯৯-এ পেয়ে আমাদের কোতোয়ালি থানা পুলিশ রেসপন্স করে। তারা সেখানে গেলে অবরুদ্ধ ওসমান নামে ওই ব্যক্তিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ এবং সেনাসদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। ছিনিয়ে নেয়ায় বাধা দেওয়ায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইটপাটকেল ও এসিড নিক্ষেপ করলে আমাদের ৯জন সদস্য আহত হন। যার মধ্যে একজন এসিড দগ্ধ হয়েছেন।’ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটকের সংখ্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হলেও যাচাই-বাছাই করে আমরা ৮২ জনকে আটক দেখিয়েছি। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ইসকন সমর্থক। কয়েকজন মুসলিম থাকতে পারে। এটিও যাচাই-বাছাই চলছে।’