সর্বহারা বিপ্লব বার্ষিকী ও বাসদ(মার্কসবাদী)’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রংপুরে মিছিল সমাবেশ।
গতকাল ৭ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১টায় সর্বহারা বিপ্লব বার্ষিকী ও বাসদ(মার্কসবাদী)’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে লালপতাকা মিছিল ও রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বাসদ(মার্কসবাদী) রংপুর জেলার আহ্বায়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে উক্ত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক, বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা। আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য কমরেড আহসানুল আরেফিন তিতু,গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি রংপুর এর যুগ্ম আহ্বায়ক ও এসপিজিআরসি’র কেন্দ্রীয় নেতা খুরশীদ আলম মুন্না,বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন রংপুর জেলার আহ্বায়ক সুরেশ বাসফোর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং রংপুর জেলার আহ্বায়ক সাজু বাসফোর প্রমূখ।নেতৃবৃন্দ বলেন,
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব সংগ্রাম ও জীবনদানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। এতবড় ত্যাগ ও সংগ্রামের ফলে আন্দোলনের মধ্য থেকেই দাবি উঠেছে সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি সংগ্রামের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো-এখানে শোষণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা জীবন দিয়ে একেকটা জুলুমবাজ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু তারপরে যারা ক্ষমতায় বসেছে তাদের কেউই জনগণের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা -স্বপ্ন পূরণে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।তারা পাহারা দিয়েছে বড়লোকের সম্পদ,সুযোগ করে দিয়েছে ধনিক শ্রেণিকে লুটপাটের। এভাবে গত ৫৩ বছরে ধনী-গরীবের বৈষম্য হয়েছে আকাশ-পাতাল।
২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২ মাসের রাষ্ট্র পরিচালনা জনগণকেরধীরে ধীরে হতাশ করে তুলছে।শেষ পর্যন্ত এ সরকারও মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক
পরিসরে সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ চক্রান্তের ফলে ফিলিস্তিন, উইক্রেন, ইয়েমেন, সুদানসহ বিশ্বের দেশে দেশে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ, নারী-শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। এই যুদ্ধই আজকের দিনে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যেবাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন । মানুষের বাঁচার প্রয়োজনীয় উপকরণ নয়, অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে যুদ্ধাস্ত্র তৈরী এবং সেই অস্ত্র বিক্রি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো।
এভাবে শ্রমজীবি মানুষের রক্ত এবং লাশের উপর দাঁড়িয়ে আছে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা ।
তাহলে এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো – এই বৈষম্য দূর হবে কিভাবে?জনগণের সংগ্রাম কি এভাবে বারে বারে ব্যর্থ হবে?
না-১৯১৭ সালে সর্বহারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দেখিয়েছে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হয়।সর্বহারা শ্রেণি দেখিয়েছে -শুধু শোষক বুর্জোয়া সরকারকে উচ্ছেদ করলেই হবে না, তার স্থলে ক্ষমতা দখল করতে হবে গরীব মেহনতী মানুষকেই।তারপর সেই শোষণমূলক বুর্জোয়া রাষ্ট্রকে উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।এই প্রক্রিয়ায় আজ থেকে
১০৭ বছর আগে পৃথীবীর বুকে সর্বহারা শ্রেণী মার্কসবাদ- লেনিনবাদের শিক্ষায় বিপ্লবের
মাধ্যমে যে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিল তার তুলনা নেই । ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য কেবলমাত্র রাশিয়ার মাটিতে সীমাবদ্ধ ছিলো না,দুনিয়ার দেশে দেশে শ্রমজীবি মানুষের কাছে এনেছিলো মানবমুক্তির এক নতুন বার্তা। পৃথিবীর সকল ধর্মের মহামানবগণ তাদের
চিন্তায় ও ধারণায় যে সমাজের কল্পনা করেছিলেন নভেম্বর বিপ্লব তার মূর্তরূপ। তারা
বলেছিলেন মানবের মুক্তি কেবল স্বর্গে-বেহেস্তে, এই দুনিয়ার নয়। সভ্যতার শ্রেষ্ঠ মনীষা
দার্শনিক কার্ল মার্কস দেখালেন কল্পনার সেই স্বর্গ-বেহেস্ত, যা মাটির পৃথিবীতেই করা সম্ভব ।
মহান লেনিনের নেতৃত্বে নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এমন এক সমাজ যেখানে
দারিদ্র ও ক্ষুধা নেই। নেই বেকারত্ব ও অশিক্ষা, নেই ভিক্ষা ও পতিতাবৃত্তি । শিক্ষা ছিলো
বিনামূল্যে, চাকুরি ছিলো নিশ্চিত। বেঁচে থাকার কোন উপকরণের অভাব ছিলো না। নারী-পুরুষের সমান অধিকার সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। শিশুদের দিয়েছিলো অবাধ বিকাশের অধিকার । বিশ্বের বড় বড় মনীষীগণ দুহাত তুলে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এই সমাজ ব্যবস্থাকে। সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ চক্রান্তের বিপরীতে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলো
এই সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা । এর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিলো যুদ্ধবিরোধী শান্তিশিবির । এককভাবে
যুদ্ধ বাঁধানোর ক্ষমতা আর সাম্রাজ্যবাদীদের ছিলো না । সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের এই অভূতপূর্ব সাফল্য ও অগ্রগতির পরও তার পতন ঘটে । কিন্ত তা স্বত্বেও এর শিক্ষা স্নান হয়নি, তার উপলব্ধি আরও দৃঢ় হয়েছে। মার্কসবাদ লেনিনবাদের সেই দৃঢ় ও উন্নত উপলব্ধি কমরেড
শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারাকে প্রয়োগ করে বাংলাদেশের মাটিতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত আমাদের মহান পার্টি বাসদ (মার্কসবাদী)’র এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে দেশের সকল শ্রমজীবী মেহনতী মানুষ ও গণতন্ত্রমনা মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই ।