ডিজিএফআইয়ের আয়না ঘরের আরেক মহানায়ক লেঃ কর্নেল আহসানুল কবির।
বিএ-৫৯৮০ কর্নেল আহসানুল কবির ৪১ বিএমএ লং কোর্সের একজন অফিসার। রংপুরের অধিবাসী কুখ্যাত এই অফিসার ২০০৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মূলত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের একান্ত আস্থাভাজন ও তাদের প্রধানতম লাঠিয়াল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ বিরোধী মত দমনে সিদ্ধহস্ত এই অফিসার অগনিত বিচার বহির্ভুত হত্যা, গুম, নির্যাতনের সাথে সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
ই/স/ * ইলের গোয়েন্দা সংস্থা “মো*সা*দ” ও সেই দেশীয় ব্যক্তিবর্গের সাথেও তার বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই অফিসার র্যাব ও ডি/জি/এফ/আই কর্মরত থেকে রাজধানী ঢাকায় তার নৃশংস কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাঝে কিছু সময় ৪৬ পদাতিক ব্রিগেড এর অধীনস্থ ৫৭ ইষ্ট বেঙ্গল, ঢাকার অধিনায়ক এর দায়ত্ব পালন করলেও তিনি অধিকাংশ সময়ে ডি/জি/এফ/আই ঢাকা ডেট এ কর্মরত ছিলেন। এই সাইকো অফিসারের শিকার সেনাবাহিনীর অগনিত অফিসার। তিনি অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন অলিক ও মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করে অগনিত ফ্যাসিবাদ বিরোধী অফিসারের চাকুরী ও জীবন ক্ষতি সাধন করেন।
ভয়ংকর রকম অর্থ ও নারী লোভী এই অফিসার একজন চুড়ান্ত রকমের সাইকো। এই অফিসার মেজর পদবীতে র্যাব ১ এ কর্মরত থাকাকালীন জুয়েনা আহসান (বর্তমানে তার ২য় স্ত্রী) নামক মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হন।
যার ফলশ্রুতিতে তার ১ম স্ত্রী তাকে পরিত্যাগ করেন।
তিনি নিজেকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের চাচাত ভাই এবং বেগম রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলেও দাবি করেন এবং সে অনুযায়ী AFWC কোর্স সহ বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহন করেন। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দূর্নীতি সহ বহু অপকর্মে লিপ্ত এই অফিসার নিজ এবং বর্তমান স্ত্রীর নামে বিপুল অর্থ ও সম্পদের মালিক হয়েছেন।রংপুরে তার নিজ জেলায় রয়েছে অঢেল সম্পদ।
এমনকি সিগন্যাল কোরে কর্মরত তার ২ ব্যাচমেট এর নিকট থেকে মিরপুর সাগুফতা হাউজিং এ জমি উদ্ধারের বিনিময়ে ফ্ল্যাটও গ্রহন করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সেনাবাহিনীতে ব্যাপক প্রভাবের কারনে তিনি সর্বদাই নিজেকে কোন ধরনের শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম।
তার বিভিন্ন অপকর্মের অতিসংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরুপঃ
১। ১৭ এপ্রিল ২০১২ র্যাব ১ এ কর্মরত থাকা কালে র্যাব ১ এর অধিনায়ক বিএ-৩৭৯৯ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (তৎকালীন লেঃ কর্নেল) মোহাম্মদ রাশিদুল আলমের নির্দেশে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম ও হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহন করেন তৎকালীন মেজর আহসানুল কবীর। এর পুরস্কার স্বরুপ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা নিজ হাতে তাকে পিপিএম পদক পরিয়ে দেন।
২। আগস্ট-অক্টোবর ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা উৎখাতের সমগ্র প্রক্রিয়ায় তৎকালীন ডিজিএফাই প্রধান মেঃ জেনারেল সাইফুল আবেদিনের সাথে সরাসরি অংশগ্রহন করেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
৩। ২২ আগস্ট ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহমেদ অপহরনে সরাসরি অংশগ্রহন করেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
৪। ২৩ আগস্ট ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে আইএফআইসি ব্যাংকের করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদকে পল্টনস্থ খানা বাসমতী হোটেল থেকে অপহরনের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর। এই অপহরনের সিসি টিভি ফুটেজ সে সময় ভাইরাল হয় যেখানে আহসানুল কবীরের কার্যক্রম স্পষ্ট প্রকাশিত হয়।
৫। ২৬ আগস্ট ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ (২০) অপহরনের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
৬। ২৭ আগস্ট ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য তাঁর নিকট আত্বীয় – স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় অপহরনের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
৭। ০৭ নভেম্বর ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে নর্থ-সাউথ শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার অপহরনের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
৮। ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান অপহরনের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
৯। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে বঙ্গভবনে তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে কদমবুসি করার পর একই উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসএসএফ কর্মকর্তারা বাধা দেন এবং বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তিতে ডিজিএফআই ও এসএসএফ ডিজিদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
১০। ০৮ আগস্ট ২০১৮ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান ডিউক, বীরপ্রতীক অপহরনে সরাসরি অংশগ্রহন করেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
১১। ২১ শে ডিসেম্বর ২০১৮ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে স্কোয়াড্রন লীডার Muhammad Wahid Un Nabi অপহরনে র্যাব এর সাথে সরাসরি অংশগ্রহন করেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর। স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ ওয়াহিদ উন নবী (অবঃ) দীর্ঘ ০৪ মাস লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়নাঘরে বন্দি ও জেল ও ০৮ টি মামলার অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। পরবর্তিতে মেঃ জেনারেল জিয়াউল আহসানের নির্দেশে স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ ওয়াহিদ উন নবীকে রিমান্ডে নিয়ে তাঁর উপর পুলিশ কতৃক নির্মম নির্যাতনের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন এই কুখ্যাত তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
১২। ১০ এপ্রিল ২০১৯ সালে ডিজিএফআই ঢাকা ডেট এ কর্মরত থাকা কালে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে আইটি বিশেষজ্ঞ কামরুল ইসলাম অপহরনে সরাসরি অংশগ্রহন করেন তৎকালীন লেঃ কর্নেল আহসানুল কবীর।
১৩। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ রকম অসংখ্য গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও দূর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত এবং অন্যান্য অফিসার কর্তৃক সংঘটিত একই ধরনের অপকর্মের স্বাক্ষী এই কুখ্যাত কর্নেল আহসানুল কবীর।
এ রকম অগনিত অপকর্মের পুরষ্কার স্বরুপ ২০২৩ তাকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
বর্তমানে কর্নেল আহসানুল কবির নিজ জেলা রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত আছেন এবং পুনরায় ডিজিএফআই এ প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন।
এই কুখ্যাত অফিসারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা এখন সময়ের দাবি।