রাজনীতি

দীর্ঘ ১৫ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামীলীগ অস্তিত্ব সংকটে

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান শেখ হাসিনা। তার আকস্মিক পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পদত্যাগের ঘটনা প্রকাশ হওয়া মাত্রই আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতারা। সম্প্রতি হাসিনা সরকারের পতনের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। তাদের কয়েকজন নেতা কথা বলেছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে।

তাদের একজন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, শেখ হাসিনা আমাদের কথা শোনেননি। তিনি শুনতেন ‘গ্যাং অব ফোর’-এর কথা। এই গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।

‘গ্যাং অব ফোর’ কারা জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, এই চার নেতা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরও বলেন, চারজনের এই দল তার (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়েছেন।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহে তারা আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে। নেতারা সবাই অভিন্ন কথা বলেছেন যে, হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।

আওয়ামী লীগের একজন নেতার বক্তব্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি হাসিনার প্রত্যাখ্যান করা ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ-ক্ষোভ হয়তো মিটে যেত।

ওই নেতা আরও বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনী তরিতে উঠানো গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।

নেতারা জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর জীবনাশঙ্কায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবী দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন। আশ্রয় নেওয়া এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিল নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা, ৫ বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা, ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন পদের ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ নানা পেশার ১২ জন ও ৫১টি পরিবার।

ঘটনাচক্রে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আটক হয়েছেন শেখ হাসিনার বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিদেশ যাওয়ার সময় আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।

হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আত্মগোপন করেছেন, কেউবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নেতারা বলছেন, ৫০ বছরের পুরনো যে দল টানা ১৫ বছরের বেশি দেশ শাসন করেছে, তারাই এখন অস্তিত্ব সংকটে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button