স্বৈরাচার সরকারের বিশেষ সহযোগী ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এ কেএম আরিফ উদ্দিন। এই আরিফ উদ্দিন তৎকালীন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ও খালিদ মাহমুদের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে নীরবে দুর্নীতি ও অপকর্মের পাহাড় গড়েছেন। বহুরূপী আরিফ স্বৈরাচার সরকারের আমলে কট্টর আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ।বর্তমানে যিনি নিজেকে বিএনপির খাস লোক হিসেবে দাবি করেন। রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপপুর বাড়ি পাবনা জেলায় হওয়ার কারণে আরিফের দাপট আরো বেড়ে যায়। কারণ আরিফের বাড়ি পাবনার রায়পুর থানার সুজানগর গ্রামে।
স্বৈরাচারী সরকারের খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছিল আরিফের গভীর সম্পর্ক। শেখ হাসিনার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে একাধিকবার সাক্ষাৎ করে সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে নিজের ক্ষমতার জানান দিতেন আরিফ। বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস এর সাথে তোলা ছবি ও ফেসবুকে আপলোড দিতেন। স্বৈরাচার সরকারের মদদে আরিফ এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যে সে কাউকেই পরোয়া করতেন না। এ কে এম আরিফ উদ্দিন বুড়িগঙ্গা,তুরাগ ও শীতলক্ষা নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের অভিযানের নামে অন্তত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে জনশ্রুতি আছে। আরিফের দুর্নীতি ও অনিয়মের ফিরিস্তি এতটাই বড় যে তা কয়েকটি পর্বে লিখেও শেষ করা কষ্টকর। আরিফ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় চায়না কোম্পানির দুটি জাহাজ নিলামে দেয়। আরিফ উদ্দিনের অপকর্মের কারণে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে কর্মকালীন সময়ে ২২ টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। কাঁচপুরে নদী তীরে বালু ভরাটের কাজে সহায়তার অভিযোগে মামলা হলে তাকে শোকজ করেন বিআইডব্লিউটিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক।
চকবাজার থানা এলাকার পূর্ব ইসলামবাগের ক্ষতিগ্রস্ত ৫৬/২ সি, ৫৮/৩, ৫৮/১, ৫৮/১২বি, ৫৭/১ খ, ৩৮/৩/৪, ও ৫৭/৩ খ, হোল্ডিং নাম্বারগুলোর ভবন মালিকরা জানান তাদের ভবনগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেটির নেতৃত্ব দেন এ কে এম আরিফ উদ্দিন। মূলত তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করায় তা না দিতে পারার কারণে এমনটা করেছে বলে জানা যায়।
২০১৮ সালের ৫ ই আগস্ট সদরঘাটে বাইতুন নাজাত মসজিদ ও মাদ্রাসা ভাঙাকে কেন্দ্র করে বিশাল সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত ঘটান আরিফ উদ্দিন। পিকনিকের লঞ্চে লঞ্চের মাস্টারকে মারধর করেন আরিফ। সেখানে সেনা কর্মকর্তা ও সচিবকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটান আরিফ উদ্দিন। কতটা দুঃসাহসিক ক্ষমতার অধিকারী হলে সেনা কর্মকর্তা ও সচিব কে লাঞ্ছিত করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন আরিফ।পরিতাপের বিষয় এমন দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটানোর পরও আরিফের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মূলত বলতে হয় স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও তার বীজ রয়ে গেছে বেআইডব্লিউটিএ-তে যার ধারক এ কে এম আরিফ উদ্দিন। পদ পরিবর্তনের সাথে সাথে খোলস পাল্টে আরিফ উদ্দিন এখন বিএনপির কান্ডারী। একই আরিফ উদ্দিনের আর কত রুপ দেখবে বি আই ডব্লিউ টি এ ও ভুক্তভোগী এদেশের সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এই আরিফ উদ্দিনের দুর্নীতি ও অপকর্মের কথা নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হলেও আরিফ উদ্দিন যেন থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার ক্ষমতার উৎস কোথায় সেটা যেন অজানাই রয়ে গেল দেশের মানুষের কাছে।
আরো বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে।