গুম, হত্যা চেষ্টা ও দুর্নীতির অভিযোগে এসবির সাবেক এডি: আইজিপি মাহাবুব হোসেন’র বিরুদ্ধে মানববন্ধন
মো: মাসুদুন্নবী নূহু,স্টাফ রিপোর্টার:
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ট সহচর, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাবেক এডি: আইজিপি মাহাবুব হোসেন’র বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদকে গুম করে হত্যা চেষ্টা ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন। অপর দিকে শেখ হাসিনার আর্শিবাদে শত শত কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান, বিদেশে টাকা পাচার, গুম-খুন, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজীর অভিযোগে গতকাল (৩০ নভেম্বর)-২৪ ইং শনিবার দুপুর ১২ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়িক মো: তানভীর আহমেদ, সাবেক এডি. আইজিপি মাহাবুব হোসেন ও তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম কুইনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
মানববন্ধনে বক্তৃতাকালে দুর্নীতিবাজ মাহবুব হোসেনের নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে মো: তানভীর আহমেদ হাউ মাউ করে কেঁদে দেন! তানভীর বলেন, মাহবুব হোসেন আমার বাড়িতে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০ বছর ফ্ল্যাট ভাড়া থেকেছিলেন। সে এসবির ডিআইজির ক্ষমতা দেখিয়ে ৫ বছর আমার বাসার ভাড়া দেয়নি বলে, আমি তাকে বাসা ছেড়ে যেতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমার এবং আমার ফ্যামিলির উপরে অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। ভুক্তভোগী আরো বলেন, আমাকে হত্যা করার জন্য গত ৩১ অক্টোবর-২০২৪ ইং আমার পিছনে অস্ত্র সহ সন্ত্রাস বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। ২০১৫ ইং সালে ১৭ জুনে আনুমানিক রাত ১১ ঘটিকা আমাকে গ্রেফতার করে এসবি অফিসে নিয়ে যায়, গ্রেপ্তার করার পর থেকে, পরের দিন সকাল ৯ ঘটিকা পর্যন্ত এসবি অফিসের তার নিজ কক্ষে আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেন। শুধু এখানেই ক্ষান্ত নয়! ১৮-ই জুন আনুমানিক ভোর ৪ ঘটিকায় আমাকে মাহবুব হোসেন তার দেহরক্ষী রায়হান, বায়তুল মোকাররমের ব্যবসায়ী একরাম সহ ৭ জন পুলিশের হাতে দিয়ে বলেন, তানভীরকে ক্রসফায়ার করো।
তখন একরাম মাহবুব হোসেনকে বলেন, স্যার উনি (তানভীর আহমেদ) আপনার ভাগ্নি জামাইয়ের বড় ভাই, তাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে আপনি হজম করতে পারবেন না, এ কথা শোনার পর মাহবুব আমাকে ক্রসফায়ার থেকে ফিরিয়ে আনেন, ফলে আমি প্রাণে বেঁচে যাই। মাহবুব হোসেন আমার ফ্ল্যাটের নগদ অর্থ ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা অন্যায় ভাবে জোরপূর্বক ক্ষমতা বলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। বায়তুল মোকাররমে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন (ক্ষুদ্র দোকান নং ২৯ মাদানী আতরঘর)। আমার বিদেশে যাওয়ার ৭টি পাসপোর্ট ও আমেরিকান মাল্টিপোল ভিসা প্রতারণার মাধ্যমে লুকিয়ে রেখেছেন। আমাকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের নামে তাঁর পায়ের বুট জুতা দিয়ে ইচ্ছা মতন আমাকে মেরেছেন ও লাথি দিয়েছেন। আমাকে রিভালবার দিয়ে মেরে দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছেন এবং কারেন্ট শট দিয়ে অসহনীয় নির্যাতন করে অজ্ঞান করেছিলেন।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, মাহবুব হোসেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এসবিতে বিভিন্ন পদে ও ডি.আই.জি হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিয়ত থাকাবস্থায় নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী সহ বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ ভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
দুর্নীতির টাকা দিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ী মুন্সিগঞ্জ, ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় নিজ নাম সহ স্ত্রী সন্তানদের নামে জমি ক্রয় করেন। ঢাকার নিউ ইস্কাটন এলাকায় তাঁর নিজ নাম সহ স্ত্রীর নামে দুইটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, ঢাকার মিরপুর মাজার রোডের পিছনে প্রায় এক বিঘা জমির উপর বিশাল টিনশেড ঘর করেছেন। এই সম্পত্তি তাহার নামে ও তাঁর স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন। ৩০,০০,০০০০/-(সম্পত্তির মূল্য প্রায় ত্রিশ কোটি) টাকা। রাজধানীর মুগদা মান্ডা এলাকায় মাহবুব হোসেনের এক বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে তথ্যসূত্রে জানা যায়।
সাবেক আইজি মাহাবুব হোসেনের শ্যালক সবুজের নামে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডে: মাহমুদিয়া মঞ্চিল (ফ্ল্যাট নং-২/বি, ৬/১) ইস্কাটন রোডে একটি ফ্ল্যাট রহিয়াছে। মাহাবুব হোসেনের ভাগ্নে নিঝুর নামে ফ্ল্যাট (নং-৭/সি) এবং মাহাবুব হোসেনের স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট (নং-৩/সি ও ৬/বি) বিলাস বহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করে দিয়াছেন এই মাহবুব। আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মাহাবুব হোসেনকে ডিআইজি পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে এডিশনাল আইজিপি হিসেবে ২০২১ সনে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে (আমেরিকা) ও কানাডায় নিজ নাম সহ স্ত্রীর নামেও ৪টি বিলাস বহুল বাড়ি এবং কানাডার টরেন্টোতে একটি বিলাস বহুল রিসোর্ট রহিয়াছে। একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এলাকাবাসী জানান ২০০৯ সালে মমতা নামে এক কাজের মেয়েকে মাহবুব হোসেন ও তাঁর স্ত্রী তসলিমা বেগম (কুইন), ছেলে জাওয়াদ, জিদান এবং মাহবুব হোসেনের দেহরক্ষী রায়হান শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করে। (হত্যার কারণটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মাহাবুব হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বেগমের সাথে, তার বাসার কাজের ছেলে হায়দার আলীর সাথে পরকীয়া ছিল। পরকীয়া করতে গিয়ে অনৈতিক অবস্থায় মমতা বেগম দেখে ফেলায় তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়) মমতার গ্রামের বাড়ী মুন্সিগঞ্জে, এই ঘটনায় মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল হয়েছিল।
এবিষয়ে এলাকাবাসী ভয়ে মুখ খুলেননি, পরে মাহবুব হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। দুর্নীতিবাজ অফিসার মাহাবুব হোসেনর মালয়েশিয়াতেও সেকেন্ড হোম হিসেবে ২টি ফ্ল্যাট রহিয়াছে। যাহার আনুমানিক মূল্য ৭,০০,০০,০০০/- (সাত কোটি) টাকা। তার মগবাজার এলাকায় ‘এট দ্যা টেবিল’ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঐতিহ্য নামে একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে। ৫ ই আগস্ট ২০২৪ সালে সৈরাচারী সরকার পতনের পর থেকে রেস্টুরেন্টটির নাম কৌশলে পরিবর্তন করে হাক্কা এক্সপেক্স নামে পরিচালিত হচ্ছে। যাহার কর্ণধার তাহার স্ত্রী তসলিমা বেগম (কুইন) ও নেশাগ্রস্থ দুই পুত্র জাওয়াদ ও জিদান। এসবির ওসি ইমিগ্রেশনস থাকাবস্থায় মাহাবুব হোসেন এর সাথে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্মাগলার স্বর্ণ ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়িরা বড় ধরনের চালান বাসায় নিয়ে আসা যাওয়া করতেন। মাহবুব হোসেনের দেহরক্ষী রায়হান এসবির একজন সাধারণ কনস্টেবল। এসবি’র রায়হান নামক এই কন্সটেবল তাঁর সাথে প্রায় ২০ বছর যাবৎ কাজ করছে। একজন কন্সটেবল কি করে ২০ বছর একই স্থানে থাকতে পারে? বর্তমানে এই রায়হানও শত কোটি টাকার মালিক। মাহবুব হোসেন নিজেও প্রায় ২০ বছর এই এসবিতে কি করে একই পদে বহাল রহিয়াছেন?। মাহবুব হোসেনের কু-কর্মের আমলনামার স্বাক্ষী এই রায়হান। ক্ষমতা থাকাকালে প্রায় সময় রাতে সাবেক আইজিপি মো: জাবেদ পাটোয়ারী ও বেনজির আহম্মেদসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ নেতারা মাহাবুব হোসেনের বাসায় মিটিং করতেন।
মাহবুব হোসেন ২০১৩ সালে ১০০,০০০,০০০/-(একশত কোটি) টাকা পাচার কালে ডিজিএফআই এর হাতে ধরা পড়ে। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়েত ইসলামী নেতা আলী আহমেদ মোজাহিদ, মো: কামরুজ্জামান এবং মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি কার্যকর করার সময় তাঁর প্রধান ভূমিকা ছিল, তখন মাহাবুব হোসেন পুলিশের স্পেশাল শাখার দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের গ্রেফতারেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা রহিয়াছে। একটি তদন্তের অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে জানা যায় যে, মাহাবুব হোসেন ও তাহার স্ত্রী তসলিমা বেগম কুইনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, প্রতারণার একটি মামলা দায়ের করা হইয়াছে। ২০১৩ সনের ০৫ই মে হেফাজতে ইসলাম এর মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিবেদন মোতাবেক নিরপরাধ হাফেজ, আলেম ও সাধারণ মানুষকে হত্যার পিছনে তৎকালিন সাবেক পুলিশের মহা-পরিচালক বেনজির আহম্মেদ এবং অ্যাডিশনাল সাবেক আইজি মাহবুব হোসেন সরাসরি গুলি করে শতাধিক আলেমকে হত্যা করেছেন।
২০২১ সনে থেকে চাকুরী অবসর গ্রহণের পর আওয়ামীলীগ সরকারের আজ্ঞাবহ হওয়ার কারণে তাহাকে ২০২২-২০২৪ সন পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৪ সনের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২২শে জুলাই হইতে ০৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২নম্বর সড়কে প্রতিদিন স্বৈরাচার সরকারের হেলমেট বাহিনীর সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন। বিগত ২২শে জুলাই হইতে ৪ঠা আগস্ট প্রতিদিন রাতে তাহার নিজ বাসা ৬/১ নিউ ইস্কাটন গাউস নগর ২/বি ফ্ল্যাটে ১০/১২টি মোটর সাইকেলে ১৫/২০জন রাত ৯ টা হইতে আনুমানিক রাত ৩টা পর্যন্ত তাহার বাসায় সৈরাচার সরকারকে রক্ষা করার জন্য আলোচনা করতেন এবং এই হেলমেট বাহিনী প্রতিদিন অস্ত্রশস্ত্র সহ তাহার বাসায় যাতায়াত করিতেন। বড় বড় কার্টুনের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করিতেন। নাম না শর্তে মাহবুব হোসেন এর ঘনিষ্ট আত্মীয় তাহার কুলাঙ্গার দুই পুত্র জাওয়াদ ও জিদানের অপকর্মের কথা জানিয়েছেন, জাওয়াদ মাদক সেবন করে আমেরিকাতে গাড়ী এক্সিডেন্ট করে মামলায় পড়ে টাকা জরিমানা দিয়েছিল।
অপর পুত্র জিদান সোনা চোরাচালানের চক্রের সাথে ব্যবসা করেন, কয়েক বছর আগে ফেন্সিডিল ও হিরোইন সহ পুলিশের হাতে বাংলাদেশে ধরা পড়েছিল। কিন্তু মাহবুব হোসেন অবৈধভাবে তাহার ক্ষমতা অপব্যবহার করে তাহাকে মুক্ত করেছিল।
২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনের সময় ভোট কারচুপির মুল হোতা সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী ও বেনজির আহম্মেদের সাথে মাহবুব হোসেন সমস্ত নীল নক্সা করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে অবৈধ সরকার গঠনে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ০৫ই আগস্ট ২০২৪ সৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারের একান্ত সহযোগী ও দুর্নীতিবাজ এই অতিরিক্ত আইজিপি দেশত্যাগে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। সাবেক পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসএস পলিটিক্যাল এবং সাবেক অ্যাডিশনাল আইজিপি মাহবুব হোসেনের অপকর্ম ও দুর্নীতির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ভুক্তভোগী তানভীর আহমেদ অনুরোধ জানান এবং তিনি সঠিক বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করেন।