জাতীয়বিবিধ

জাতীয় ঐক্য গড়তে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগ

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ লক্ষ্যে ছাত্র আন্দোলনের নেতা, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন তিনি। গতকাল ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে প্রথম ধাপের বৈঠকে মিলিত হন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আর আগামীকাল ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন সরকারপ্রধান। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যের বার্তা দেয়া। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজকে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবেন। পরের দিন ধর্মীয় গ্রুপগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বসবেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সার্বভৌমত্ব, নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, ভারতের বিভিন্ন চুক্তিসহ বেশ কিছু ইস্যুতে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারকে ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে, অসম ও পরিবেশবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করা, ভারতের স্বার্থে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত করা, আন্তঃনদীর পানির সুষম বণ্টনের দাবিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ফেলানীসহ সীমান্তে নিহতদের হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করা এবং ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনকল্যাণমূলক নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ। বৈঠকে আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগরতলায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলা, মাইনোরিটি ইস্যু, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষা, নতুন কমিশন ও সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

 আমরা স্যারকে বলেছি, প্রথমত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের যে ধরনের গোপন চুক্তিগুলো হয়েছে সেটি যেন প্রকাশ করা হয়। ফেলানী হত্যাসহ সীমান্তে যতগুলো হত্যা হয়েছে সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। এবং পানির ন্যায্য হিস্যা যেন বাস্তবায়ন করা হয়। ভারতের সঙ্গে যে বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে তা যেন ন্যায্যতার ভিত্তিতে হয়। এ ছাড়াও সিন্ডিকেটের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ মনে করছে, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা উচিত। এটি আমরা ড. ইউনূস স্যারকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক যে ট্রাম্প কার্ড বিশ্ব মিডিয়াতে ছড়ানো হচ্ছে, যে গণঅভ্যুত্থানটি হচ্ছে রাইজ অব ইসলামিক ফান্ডামেটালিজম। বিষয়টি যে আসলেই এমন না। বরং সকল শ্রেণি-পেশার ছাত্র নাগরিকের মধ্যদিয়ে এই গণআন্দোলনটি হয়েছে। এবং বাংলাদেশে প্রত্যেকেই সাম্য এবং মানবিক মর্যাদার মধ্যদিয়েই জীবনধারণ করছে। এই সম্প্রীতি আরও বেশি করে বিশ্ব দরবারে প্রচার করা যায় এবং এন্ট্রি প্রোপাগান্ডা সেল কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ইদানীং কিছু ঘটনা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে একটা মিস ইনফরমেশন চলছে। অপতথ্য ছড়ানোর একটা প্রয়াস আমরা দেখছি। অনেকাংশে আমরা দেখছি ইন্ডিয়ান মিডিয়া এগ্রেসিভলি এ কাজগুলো করছে। সেটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য গড়ে তুলে আমাদের বলতে হবে যে, তোমরা আসো, দেখো কী হচ্ছে। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় ঐক্যটাও ধরে রাখতে হবে। এখানে জাতীয় ঐক্য খুব জরুরি। কারণ আমাদের দেশ নিয়ে এক ধরনের মিস ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। এখানে দেশের ইমেজের একটা বিষয় আছে। 

আমাদের দেশকে নিয়ে, আমাদের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মিস ইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে আমাদের নামতে হবে। আমাদের গণমাধ্যমকেও অনুরোধ করবো তারা যেভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে ভয়ানকভাবে মিথ্যা ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো যেন কম্পাইল করে। এটা একটা জাতীয় দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, আগস্টে যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির কথা হয় তখনো কিন্তু তিনি বলেছেন এখানে যে মাইনোরিটি রিপ্লেসনের কথা বলা হচ্ছে সেটা যেন তাদের দেশ থেকে সাংবাদিকদের পাঠানোর বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। তারা যেন অনুসন্ধান করে আসলে এমন কিছু হচ্ছে কিনা। আমরা তো আমাদের সাইট থেকে যা করার দরকার করছি। আমি নিজে ইন্ডিয়ান মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছি- তাদেরকে আহ্বান করছি যে, আপনারা আসেন বাংলাদেশে নিজেরা ভিজিট করে যান। কিন্তু তারা তথ্যগুলো নিচ্ছেন তাদের পছন্দে যারা পড়ছেন তাদের থেকে তারা তথ্যগুলো নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সাইটেশন হচ্ছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের বিজ্ঞপ্তি। অথচ নেত্র নিউজ দেখিয়েছে যে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের রিপোর্টে বড় রকমের গলদ আছে। আমরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকেও আহ্বান করেছি ভিজিট করতে।

 আমাদের এখানে সব ওপেন সোর্স আছে। এসব অ্যাক্টিভিটিজে আমরা খুব ট্রান্সপারেন্ট। আজকে ভারতের অভ্যন্তরে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার জন্য আমি পুরো দোষ চাপাবো ইন্ডিয়ান মিডিয়ার ওপর। তারা জনগণকে ভায়োলেন্স করছে। আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে এসব বিষয়ে বলেছি। তাদের বলেছি- কী ঘটেছে সরজমিন রিপোর্ট করতে। কিন্তু ইন্ডিয়ান মিডিয়া প্রিডিটারমাইন্ড করে রেখেছে এখানে কী হয়েছে। তারা যদি প্রিডিটারমাইন্ড থাকেন তাহলে কথাও তো বেশি আগানো যায় না। আমাদের সিভিল সোসাইটিসহ সবাইকে এসব বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। কারণ ভারত মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। এ সময় শেভরন করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাতের বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বলেন, বাংলাদেশে যে গ্যাস প্রোডাকশন হয় তার ৬০ শতাংশ শেভরনের কূপগুলো থেকে আসে। শেভরন বাংলাদেশে আবার ইনভেস্ট করতে তাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তারা সম্ভবত ব্লক নাম্বার ১০ এবং ১১, যেটা নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জের দিকে পড়েছে, সেই জায়গায় কূপ খনন করবেন। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটিজ বেড়েছে। গ্যাসের নতুন নতুন ডিমান্ড হচ্ছে। এক্ষেত্রে শেভরন মনে করছে এখন ইনভেস্ট করলে তারা বাজারটা ধরতে পারবে। তারা জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে আগামীকাল (আজ) বসবেন। আমাদের এখন ব্রিলিয়ান্ট একটা টিম আছে যেটা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টকে এট্রাক্ট করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

Back to top button