আন্তর্জাতিকরাজনীতি

সিরিয়া সীমান্তে সেনা জড়ো করল ইরাক, অনুমতি পেলেই হামলা

প্রতিবেশী দেশে বিদ্রোহীদের হানায় ইরাকি কর্মকর্তাদের মনেও শঙ্কা জেগেছে। হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের আটকাতে পারছে না সিরিয়ার সামরিক বাহিনী। একের পর এক শহরের দখলে নিচ্ছে তারা। রাশিয়া এবং সিরিয়ান বিমানবাহিনীর যৌথ প্রতিরোধও টিকেনি বিদ্রোহীদের গতি এবং সংকল্পের সামনে।

সিরীয় সেনারা প্রতিরোধ তো দূরের কথা, অনেকটা প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে বলা যায়। সিরিয়ায় অবস্থানরত রুশ সেনারাও তেমন কিছু করতে পারছে না। এরই মধ্যে আলোপ্পো ও হামা শহর দখল নিয়ে এবার ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হোমস শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহীরা ।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, যে কোনো সময় পতন ঘটতে পারে হোমস শহরেরও। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তা বুঝতে পাচ্ছে না রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক বা ইরাক। তবে প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ইরাকি কর্মকর্তারা বেশি ভয়ে আছেন। বিশেষ করে, বিদ্রোহীদের নজর সিরিয়ার পর, ইরাকের দিকেও পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরাক।

ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়ায় সেনা পাঠিয়ে অভিযান চালাতে পারে ইরাক। অবশ্য এ নিয়ে ইরাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে দোটানা শুরু হয়েছে। সুন্নি বিদ্রোহীদের এই জোটের সঙ্গে আল কায়েদার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই শিয়া-অধ্যুষিত ইরাক ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না।

বিশেষ করে ২০০৩ সালে সিরিয়াভিত্তিক সুন্নি যোদ্ধারা ইরাক ঢুকে রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। তখন মার্কিন অভিযানে সাদ্দাম সরকারের পতন হলে ইরাক পুরোপুরি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। আর এই অরাজকতার পেছনে রয়েছে সুন্নি যোদ্ধারা। মার্কিন হামলার ১০ বছর পর ২০১৩ সালে দায়েশের সঙ্গে মিলে সুন্নি যোদ্ধারা ইরাকের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। এবারও তেমন কিছু ঘটতে পারে এমন বিশ্বাস ইরাকের শাসকগোষ্ঠীর। যদিও সিরিয়ার বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

তবে বিদ্রোহীদের এমন আশ্বাসে বিশ্বাস নেই ইরাকি কর্মকর্তাদের। তাই সিরিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে তারা। পাশাপাশি পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের হাজার হাজার যোদ্ধাদের জড়ো করেছে তারা। এই গ্রুপটি এর আগে সিরিয়ার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

ইরাকের আপাতত লক্ষ্য নিজেদের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমানার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেই সমীকরণ যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। যদি হোমস শহর বা আসাদের পতন ঘটে এমনকি শিয়াদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটে, তাহলে সিরিয়ায় ঢুকে পড়বে ইরাকি বাহিনী।

ইরাক সরকার বলছে, তারা সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না। তবে ইরাক হচ্ছে বাগদাদের জন্য লাল রেখা। এরই মধ্যে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শত শত ইরাকি যোদ্ধা সিরিয়া ঢুকে পড়েছে। তারা ইরাকি ও দেশটিতে থাকা লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে আসাদ বাহিনীর হয়ে লড়বে।

কিন্তু ইরাক থেকে এখনও গণহারে যোদ্ধাদের প্রবেশের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানিও আঞ্চলিক এই সংঘাতের চক্রে পড়তে চাইছেন না বলে মনে করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button