অব্যাবস্থাপনাপরিবেশ

ক্ষতবিক্ষত রাজধানীর সড়ক, ভোগান্তি চরমে

রাজধানীর সড়কগুলোতে বড় ভোগান্তির অন্যতম কারণ যানজট। এর সঙ্গে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁড়া সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি যুক্ত হয়ে যানজটে নাকাল ঢাকাবাসীর চরম ভোগান্তিতেই দিন কাটছে। কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ভাঙা সড়ক মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আছে।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গুলশান, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুনবাজার ১০০ ফুট সড়ক এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

কুড়িল থেকে কোকা-কোলা মোড় : 

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কোকা-কোলা মোড় পর্যন্ত এখন দিনরাত যানজট থাকে। মেট্রো রেলের লাইন-১-এর নির্মাণকাজ চলছে। রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় এখন চলছে বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটির লাইন স্থানান্তরের কাজ। রামপুরা থেকে কুড়িলমুখী ব্যস্ত সড়কের মধ্যেই খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে।

এতে কমে এসেছে গাড়ির গতি। দুই পাশেই পরিণত হয়েছে এক লেনের রাস্তায়। ব্যস্ত সময়ে এই সড়কে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িলমুখী লেনের গাড়িগুলোকে থেমে থেমে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) গুলশান বিভাগ বলছে, এমআরটি-১-এর কাজের জন্য যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে অনেকখানি রাস্তা ব্লক করে রাখা হয়েছে, যে কারণে নতুনবাজার থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক ও কুড়িলগামী গাড়িগুলোতে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়কে ঢাকা ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি :

রাজধানীর নতুনবাজার (মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট) থেকে শুরু হয়ে বালু নদের দিকে চলে যাওয়া সড়কটিতে চলছে ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্পের অধীনে ঢাকা ওয়াসার উন্নয়নকাজ। রাস্তার খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কটির এক পাশ কার্যত বন্ধ। ধুলাবালির ধকল তো আছেই।স্থানীয় লোকজন এবং সড়ক ব্যবহারকারীরা প্রহর গুনছে কখন শেষ হবে এই কাজ।

জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বিষনন্দী পয়েন্টে মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার। ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের আওতায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল অবকাঠামো তথা ইনটেক পয়েন্ট, সঞ্চালন লাইনসহ সার্বিক কার্যক্রম চলমান। মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়কটির এক পাশ গভীর গর্ত করে প্রায় ছয় ফুটের দুটি পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে মাটির স্তূপ আর ধুলাবালিতে একাকার অবস্থা। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নূরেরচালা ও ভাটারা-ছোলমাইদ সড়ক :

রাজধানীর মাদানী এভিনিউ ১০০ ফুট সড়কের মতো আশপাশের এলাকার সড়কের বেহাল দীর্ঘদিনের। মূল সড়ক থেকে ফ্যামিলি বাজারের (দোকান) পাশ দিয়ে নূরেরচালা বাজার পর্যন্ত সড়কও বেহাল। আর ভাটারা-ছোলমাইদ সড়কটি এক যুগের বেশি আগে নির্মাণ করা হয়। এরপর সংস্কার করা হয়নি। নতুনবাজার হয়ে সৌদি দূতাবাস পার হয়ে বাঁ দিকে ঢুকলেই কাঁচাবাজার, তথা সড়কটির শুরু। সড়কের শুরুতে ভাঙাচোরা। ভাটারা বাজার হয়ে যাওয়া সড়কটির ছোলমাইদ পর্যন্ত অংশ এমন বেহাল।

ধোলাইখাল ও দয়াগঞ্জ সড়ক : 

ধুলায় ভরপুর ধোলাইখাল সড়কের আইল্যান্ড ভাঙা, যত্রতত্র ময়লার স্তূপ আর যেখানে-সেখানে ইচ্ছামতো ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও বিভিন্ন গাড়ি পার্ক করে রাখা। সড়কটির অর্ধেকের বেশি দখল করে আছে গাড়ির যন্ত্রাংশের (পার্টস) দোকান। এর মধ্যেই কোনো রকমে চলছে যানবাহন। ঢাকার ব্যস্ত এলাকা দয়াগঞ্জের প্রধান সড়কটিও বেহাল। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তায় ধুলা থাকে। আবার বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে কাদাপানি।

গুলশান লেকভিউ সড়ক : 

রাজধানীর গুলশান লেকভিউ (বাড্ডা-গুদারাঘাট) সড়কটি অনেকটাই ব্যবহার অনুপযোগী। সড়কের পুরোটারই বিটুমিন উঠে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কিছু কিছু জায়গায় পিচ সরে গেছে, দেবে গেছে কিছু জায়গা। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার যানজট কমাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) লেক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাড্ডা (হাতিরঝিল মোড়) থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত লেকের পারে বাড্ডা-শাহজাদপুর অংশে ২.৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩০ ফুট প্রস্থের গুলশান লেকভিউ সড়কটি তৈরি করে। 

২০১৮ সালে খুলে দেওয়া হয় সড়কটি। দেখা গেছে, লেকভিউ সড়কের গুদারাঘাট বাজার থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ গর্তে ভরা। শাহজাদপুরের দিকে এগোলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার এসটিএস এবং পাশের ঢাকা ওয়াসার পানির পাম্পের সামনের সড়কে গর্ত থেকে উঠে আবার অন্য গর্তে পড়ার মতো অবস্থা। উত্তর বাড্ডা হাজী কমর উদ্দীন রোড পর্যন্ত পুরো সড়কের একই অবস্থা।

রাজউক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের পর সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে (সংস্কার) কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে দুই মাস আগে সড়কটি ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজউক। রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে সড়কটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সড়কটির উন্নয়নকাজ শুরু হবে বলে সংস্থাটি আমাদের জানিয়েছে।’

ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি : 

ডিএনসিসির দক্ষিণখান, উত্তরখান, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নকাজের খোঁড়াখুঁড়িতে বেহাল। পরিস্থিতি এমন যে কিছু সড়কে হাঁটাও কঠিন হয়ে যায়। চলতি বছর জুলাই মাসে মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়া মসজিদ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করে ডিএনসিসি। এর পর থেকে এ সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। 

এ ছাড়া আসাদগেট থেকে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ পর্যন্ত, আসাদগেট থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সড়ক আসাদ এভিনিউ, তাজমহল রোড, বাঁশবাড়ি রোড, রাজিয়া সুলতানা রোড ও নুরজাহান রোডের সংযোগ সড়কগুলোর (বাইলেন) কোথাও এক পাশে, আবার কোথাও কিছুদূর পর পর আড়াআড়ি করে কাটা। কিছু জায়গায় সড়ক ঠিক করা হলেও এখনো খানাখন্দে ভরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button