দুই বছর পর প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে আফগানিস্তান
দুই বছর বড় ধরনের সংকোচনের পর অবশেষে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি। ২০২১ সালে তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর এই প্রথম আফগান অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হলো।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে আফগানিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। মূলত ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আফগানিস্তান এই প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন দেশে আফগানিস্তানের তহবিল অবরুদ্ধ হয়, দেশ ছেড়ে যান অনেক দক্ষ কর্মী। এ কারণে বিপদে পড়ে আফগানিস্তান। এরপর তালেবান দুর্নীতি হ্রাস, কর সংগ্রহ বৃদ্ধি ও মুদ্রার বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে দেশটি তার সুফল পেতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে আফগানিস্তান।
তবে গত অর্থবছরে আফগানিস্তানের রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও আমদানির ঊর্ধ্বগতির কারণে বাণিজ্যঘাটতি বেড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির জন্য বিদেশনির্ভরতা দেশটির স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য এখন বড় হুমকি।
বিশ্বব্যাংকের আফগানিস্তান–বিষয়ক পরিচালক ফারিস হাদাদ জেরভোস বলেন, আফগানিস্তান দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চাইলে দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, প্রবৃদ্ধির যেসব সম্ভাব্য খাত আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে কাজে লাগানো। দ্বিতীয়ত, সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়ন। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি বিষয়, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা না হলে আফগানিস্তান দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়নের পথে হাঁটতে পারবে না।
আফগানিস্তানের নগদ অর্থের স্বল্পতা থাকলেও তাদের হাতে সম্পদের অভাব নেই। দেশটির হাতে যে পরিমাণ লিথিয়াম আছে, তার মূল্য তিন ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর লৌহ, আকরিক ও স্বর্ণের খনি নির্মাণে চীনা, ব্রিটিশ ও তুর্কি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তালেবান সরকার ৬৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। গত বছর বছরের জানুয়ারি মাসে তেল উত্তোলনের জন্য চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে তালেবান।
এদিকে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে যে ডলার পাচার হয়, তাতেও আফগান অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে বিপুল পরিমাণে ডলার নিলামে তুলে দেশীয় মুদ্রাকে শক্তি জোগাচ্ছে।
এ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য কৃষিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। আফগানিস্তান একসময় বিশ্বে আফিম উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফিম উৎপাদনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ফলে আফিমের ফলন প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৩ সালে সে দেশে আফিম চাষের জমি ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর থেকে কমে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরে নেমে এসেছে। আফিমের উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কমে ৩৩৩ টনে দাঁড়িয়েছে। আফিমের বদলে তারা জাফরান আবাদ বাড়াচ্ছে।
ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে কৃষি। ডালিম বা আনার চাষ আফগানিস্তানের আফগান কৃষির অন্যতম প্রধান উপকরণ। দেশটিতে প্রচুর পরিমাণ ডালিম চাষ করা হয়।
এই ফল উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম আফগানিস্তান। তবে এত দিন সাধারণ ফল হিসেবে ডালিম রপ্তানি হলেও এখন সেটি পানীয় আকারে রপ্তানি করা হচ্ছে। পামির কোলা শাফা নামের আফগানিস্তানের পানীয় বেশ সাড়া ফেলেছে। এই পানীয়কে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত কোকাকোলার বিকল্প এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে ভাবা হচ্ছে।