ট্রাফিক পুলিশের প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকদের যথাসময়ে তার গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত করা : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান, পিপিএম (বার) বলেছেন, দায়িত্বপালনকালে ট্রাফিক পুলিশকে অনেক সময় বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এরপরও রাষ্ট্রের কর্মচারি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো নাগরিকদের যথাসময়ে তার গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত করা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি.) বিকেলে কদমতলীর স্থানীয় এক কমিউনিটি সেন্টারে কদমতলী থানা এলাকার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের সমন্বয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, যানজট ঢাকা শহরে একটি নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর যানজটের কারণে ৩৬ হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়। এছাড়া যখনই যানজটে পড়ি ভালো লাগুক আর না লাগুক পেছনের জন অনবরত হর্ণ বাজাতে থাকে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমাদের এই কাজটি করা মোটেই কাম্য নয়। প্রায় সময় দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল চালকরা কারণে অকারণে হর্ন বাজাচ্ছে। এতে করে নিজের এবং অন্যের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। আমরা সবাই বড় বড় অট্টালিকা তৈরি করি কিন্তু বাড়ির পাশে বা সামনে কোন রাস্তা রাখতে চাই না। আমরা আত্মকেন্দ্রিক, এজন্য আমরা সুবিধা বঞ্চিত।
তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ীতে ট্রাফিক পুলিশকে পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে। গতকালও উল্টা পথে যাওয়ার জন্য আটক করার কারণে ট্রাফিক পুলিশকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এরপরেও আমাদের দায়িত্ব হলো নাগরিকদের যথাসময়ে তার গন্তব্যে পৌঁছানো। রাষ্ট্রের কর্মচারি হিসেবে আমাদের কাজে যত বাধাই আসুক আমরা দায়িত্বপালন করবো। রাজধানীকে আমরা পুরোপুরি যানজট মুক্ত থাকতে পারবো না কিন্তু কীভাবে যানজট কমানো যায় সে ব্যাপারে সমাজের সকলে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের কোন সদস্য যদি অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়, আপনারা যথাযথ তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা অপরাধী ধরতে না পারি কিন্তু আমরা যারা অপরাধ দমনের জন্য এসেছি আমরা যেন এই কাজে সম্পৃক্ত না হই। এখানের অধিকাংশ পুলিশ সদস্য নতুন। কাজেই তাদেরকে একটু সময় দিতে হবে। আমাদের তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে কিন্তু অভিভাবক হিসাবে আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, সেদিকে খোঁজ খবর রাখতে হবে, তাদেরকে কাউন্সিলিং করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের বিষয়ে কারো সাথে যোগাযোগ করবেন না, অনলাইনে আবেদন করবেন। সাতদিনের ভিতরে কাজ হয়ে যাবে।
পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এরপর গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য সকলকে নিয়ে মোনাজাত করা হয়।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা ও কদমতলী থানা এলাকার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ জুরাইন রেলগেট হকার মুক্ত করা, কিশোর গ্যাং সমস্যা, মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ওয়ার্ড ভিত্তিক ভালো মানুষ নিয়ে নাগরিক কমিটি করা, অপরাধী চক্রকে গ্রেফতার করা, দনিয়া, রায়েরবাগ-মোহাম্মদপুর এলাকার যানজট সমস্যা, সন্ধ্যার পরে মহল্লার ভিতরে ট্রাক প্রবেশ, অন্ধকার জায়গায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা, আবাসিক হোটেলে অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা, শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্থানীয় চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মফিজুল ইসলাম আগামী দিনের একটা সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশিং কার্যক্রমে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান; উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়ারী বিভাগ) মোঃ মফিজুল ইসলাম সহ ওয়ারী বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।