বিচার শেষ হওয়ার পূর্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত করার দাবি করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত না করলে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।’
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে মহান মুক্তিযুদ্ধে ও ২৪ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণ অধিকার পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে এই দোয়া ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।
রাশেদ খান বলেন, এই নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত শামীম ওসমান দুই-দুইবার বোরকা পরে পালিয়েছে। এরা নারায়ণগঞ্জের ত্রাস ছিল। এই নারায়ণগঞ্জের বিপ্লবী জনতা এদের লাথি মেরে বিতাড়িত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করে না, এদের আসল দেশ হলো ভারত।কিন্তু সেই ভারতও এদের রক্ষা করতে পারেনি। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এদের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থান সবার।’
জুলাই স্পিরিট কারো বাপ-দাদার সম্পদ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো কেউ চেতনার ব্যবসা খুলে বসবেন না।আমরা প্রশ্ন করতে চাই, সরকার সাড়ে ৪ মাস কী কী কাজ করেছে। কেন এখনো আওয়ামী লীগের অপরাধী, হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? ৩০০ ডামি এমপির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী? কেন এখনো তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দুদকের মাধ্যমে পাকড়াও করা হচ্ছে না? গণহত্যাকার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার নির্দেশে যে সকল পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যরা গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা এবং গ্রেপ্তার না করার রহস্য কি? কেন সরকার এখনো গণহত্যার তালিকা অর্থাৎ শহীদ ও আহতদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন, ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না?
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সরকার মামলা করতে পারত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার গণহত্যার মামলা দায়ের করতে পারতো। কিন্তু কেন কচ্ছপের গতিতে সরকারের কার্যক্রম চলছে? সরকারকে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডরা কিভাবে পালালো, তার তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে এবং পলায়নে সহায়তাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ৬২৬ জনের তালিকা এখনো প্রকাশ না হওয়া রহস্যজনক।
অন্তর্বতী সরকারের উদ্দেশে রাশেদখান বলেন, সরকারের সকল সেক্টর ও প্রশাসন থেকে আওয়ামী সুবিধা ভোগীদের তালিকা করে পদাবনতি করতে সমস্যা কোথায়? সরকারকে বলবো, উপদেষ্টাসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর আর্থিক হিসাব প্রতিমাসে নিজস্ব দপ্তরে জমা দানের বিধান তৈরি করুন।সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তবে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে জনজীবনে স্বস্তি আনতে না পারার কারণে সরকার ব্যর্থ হবে।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করে একটা গোষ্ঠী কিংস পার্টি খোলায় ব্যস্ত। আপনারদে এই দেশের জনগণ ক্ষমা করবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিলো আওয়ামী লীগের বিচার করা ও আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। এখনও আন্দোলনে আহত অনেকেই সুচিকিৎসা পায়নি, আর অন্তবর্তীকালীন সরকার ও বিএনপির কোন কোন নেতা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।
সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলার আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম,নারায়ণগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক তোফাজ্জল হোসেন, জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি আরিয়ান রিপন, গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফেরদৌস ভূইয়া প্রমুখ।