অপরাধআইন ও বিচারপ্রশাসন

আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক’র বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়ায় অভিযোগের ছড়াছড়ি

মাহবুব আলম মানিক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আশুলিয়া থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের ছড়াছড়ি।

পাঁচ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গনঅভ্যুত্থানে সৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের সাথে সাথে সাভার আশুলিয়ায় ছাত্র জনতা হত্যার হুকুম দাতা সহ সরাসরি জরিত থাকার কারণে পতন হয়েছে অনেক বড় বড় পুলিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের গ্রেফতারও হয়েছেন অনেক, অনেকে আবার গাঁ ঢাকা দিয়ে পালিয়ে আছেন বিদেশে।

আর সেই সব কর্মকর্তাদের রেখে যাও অসমাপ্ত খারাপ কাজ গুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষে বদ্ধপরিকর এখন সাভার ও আশুলিয়া থানায় কর্মরত কিছু পুলিশ অফিসার।
হাটছেন তাদের ফেলে যাওয়া রাস্তায়। বন্ধ করেননি ঘুষ বানিজ্য বন্ধ করেননি সাধারণ মানুষ হয়রানি, বন্ধ করেননি উতকোচ, পরিবর্তন করেননি পুলিশি সেবাও এমনটা দাবি করছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি ৫ ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে সমস্ত পুলিশ ডিপার্টমেন্ট যখন আত্বসমর্পণে মাথা নত করে ক্ষমা চাইতেছিলেন ছাত্র জনতার কাছে। ঠিক তখনি আশুলিয়া থানায় পাখির মত গুলি করে ছাত্র জনতার উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি এ এফ এম সায়েদ সহ তাঁর সহযোগীরা, গুলি করে হত্যার পর পুড়িয়ে কয়লা করেছিলেন ছয় ছয়টি লাশ। সেই লাশ পোড়ানো নৃশংস ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বদলির নাটক সাজিয়ে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক ওসি এ এফ এম সায়েদ।

এরপর আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন আবু বকর সিদ্দিক। যোগদানের পর থেকেই ওসি আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে লোকমুখে শোনা যায় নানা সমালোচনার গুঞ্জন ।
সমালোচনা আর বিতর্কের শুরুটা ছিলো একজন বি এনপি নেতাকে তার (ওসির) ব্যবহৃত অফিসিয়াল চেয়ারে বসিয়ে ছাত্র হত্যা মামলার আসামীদের বাছাই করে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে।শুধু সমালোচনায় নয় আশুলিয়া থানার ওসির চেয়ারে বিএনপি নেতা, এমন শিরোনামে ইলেকট্রনিকস মিডিয়া জাতীয় দৈনিক প্রিন্ট মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়ায় একাধিক সংবাদও প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর থেকেই একের পর এক ওসির বিতর্কীত কার্যকলাপ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

বিএনপি জামায়াত নেতাদের কথায় থানা পরিচালনা করেন আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক , বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে গভীর সখ্যতা আশুলিয়া থানার ওসির, মোটা অংকের টাকা ছাড়া কথা বলেন আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক, সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলতে চান না আশুলিয়া থানার ওসি, টাকার বিনিময়ে আসামি গ্রেফতার করেন না আশুলিয়া থানা পুলিশ, সংবাদ কর্মীদের তথ্য দিতে গড়িমসি করেন আশুলিয়া থানার ওসি, সেবা না দিয়ে নেতাকর্মী নিয়ে খোশগল্পে মেতে থাকেন ওসি আবু বকর সিদ্দিক , শতবার ফোন দিলেও ফোন ধরেন না আশুলিয়া থানার ওসি, মন চাইলে ফোন ধরেন আশুলিয়া থানার ওসি, ব্যক্তি পরিচয়ে মামলা নেন আশুলিয়া থানার ওসি। এমন একাধিক অভিযোগ সাধারণ মানুষ ও আশুলিয়ায় কর্মরত ইলেকট্রনিকস মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে ।চায়ের দোকান কিংবা খোশগল্পের আড্ডাখানায় আলোচনা সমালোচনাও চলছে ব্যাপকহারে এমন তথ্য জানিয়েছেন অনেকেই।

আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়ায় নানা অভিযোগের বিষয়ে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকার একজন স্থানীয় সংবাদকর্মী মোঃ সেলিম রেজা তাঁর ব্যক্তিগত
(GM Salim Reza) নামক ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, আশুলিয়া থানায় ওসির সাথে সাধারণ মানুষ কোন বিষয়ে দেখা করতে গেলে কথা বলতে চায়না ব্যস্ততা দেখায়। কিন্তু মালদার পার্টি গেলে তাদের সাথে দেখা করে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দেয়। গল্প -আড্ডায় ব্যস্ত থাকে এটা কি কোন ওসির কাজ?।
দেশ টিভির সাংবাদিক দেওয়ান ইমন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি (দেওয়ান ইমন) এ লিখেছেন, মন চাইলে ফোন ধরেন আশুলিয়ার ওসি।
এস এ টিভির সাংবাদিক মোঃ সাদ্দাম হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি
(Md Saddam Hossain) এ লিখেছেন, আমি ইনোসেন্ট ভাই,দাবি আশুলিয়া থানার ওসি।

দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক সাব্বির আহাম্মেদ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি ( Shabbir Ahammed) এ লিখেছেন, সবাই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন হে আল্লাহ ওসি আবু বক্করের হাত থেকে আশুলিয়াকে রক্ষা কর মাবুদ (আমিন)
স্থানীয় সংবাদকর্মী সাকিব আসলাম তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি
(Sakib Aslam) এ লিখেছেন শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। এমন অবস্থায়ও আশুলিয়া থানার কয়েকজন এসআই ডিউটি না করে থানায় বসে আড্ডা মেরে সময় কাটাচ্ছে।
আশুলিয়ার একজন স্থানীয় বাসিন্দা রনি আহমেদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি (Rony Ahmed) এ লিখেছেন আশুলিয়া থানার ওসি ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সাইদ মিরকে আটক করেছে। এরকম একাধিক অভিযোগ ও মন্তব্য প্রতিনিয়ত ভাসছে মানুষের মোবাইল স্কিনে।

এছাড়াও নাম ঠিকানা গোপন রাখার শর্তে একজন নারী ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, আমি গত দুই মাস পূর্বে আশুলিয়া থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করি অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যেয়ে তদন্ত করেন একজন এসআই। তিনি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আমাকে সরাসরি ওসি আবু বকর সিদ্দিক স্যার ও তদন্ত ওসি কামাল স্যারের সাথে মামলা নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে বলেন আমি তাদের সাথে কথা বললে আজ মামলা নিবে কাল মামলা নিবে বলে আমাকে প্রায় দেড়মাস ঘুরাই এরপর তারা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আমি থানায় আমাকে হয়রানির বিষয়টি ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আকারে অভিযোগ জানালে এক সপ্তাহ পরে আশুলিয়া থানার তদন্ত ওসি কামাল স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আপনার মামলা হয়ে গেছে। আসলে আশুলিয়া থানায় টাকাওয়ালা দেখে মামলা নেন সাধারণ মানুষকে তাঁরা মুল্যায়ন করেন না।
মোস্তাক আহমেদ নামে আরও একজন ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েকদিন পূর্বে আমি সহ আমার পরিচিত দুইজন ব্যক্তি আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকের সাথে একটি বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁর অফিস কক্ষে গিয়েছিলাম গিয়ে দেখি ওসি আবু বকর সিদ্দিক কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে একই টেবিলে বসে ফল খাচ্ছেন আর খোশগল্পে মগ্ন আছেন। আমরা তিনজন প্রায় ঘন্টা খানেক বসে থাকার পরে তিনি কোন কিছু না বলে চেয়ার থেকে উঠে চলে গেলেন। অফিস কক্ষের বাহিরে আমরা তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ক্লান্ত বলে চলে যান। একজন ওসির এমন আচরণ সাধারণ মানুষ আশা করে না।
এরকম একাধিক অভিযোগ জমা রয়েছে ভুক্তভোগীদের মনে অনেকেই আবার ওসির বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ লোকমুখে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে, তিনি একটি মিটিং এ আছেন পরে কথা বলবেন বলে জানান।

এবিষয়ে সাভার সার্কেল এসপি শাহিনুর কবিরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন ওসির বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়ায় লেখালেখির বিষয়টি আমি জানি এবং অনলাইনে দেখেছি তবে আমি কিছু মন্তব্য করতে পারবো না। আমাদের সিনিয়ররা আছেন আপনি চাইলে এসপি স্যার অথবা ডি আইজি স্যারের সাথে কথা বলতে পারেন তারা পদক্ষেপ নিবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button