অব্যাবস্থাপনাএক্সক্লুসিভদুর্নীতিদেশরাজশাহী

যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করেই নিয়োগের পরীক্ষায় ডাক পেলেন সাবেক শিবির সভাপতি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত ফলাফলের শর্ত পূরণ না করেই ডাক পেয়েছেন এক প্রার্থী। মোবারক হোসাইন নামের ওই প্রার্থী বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের এই পদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে। এই বিজ্ঞপ্তির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষায় ডাক পাওয়া মোবারক হোসাইনের এইচএসসির জিপিএ ৪.০০-এর কম। তিনি ২০০৩ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫-এর মধ্যে জিপিএ-৩.৯০ পেয়ে পাস করেছিলেন।২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেখানে অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে যেকোনও একটি শর্ত শিথিলের বিষয় উল্লেখ ছিল। তবে মোবারক হোসাইনের আবেদন করা এ বছরের ২৩ অক্টোবরের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতার শর্ত শিথিলতার কোনও বিষয় উল্লেখ নেই।ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্ল্যানিং বা বাছাই কমিটিতে রয়েছেন বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান, ড. মুহম্মদ আসহান উল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব আলম, ড. জি এম আজমল আলী কাওসার ও মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম।যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করে প্রার্থী পরীক্ষায় ডাক পাওয়া প্রসঙ্গে ওই বিভাগের প্রধান ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন ‘আমরা প্ল্যানিং কমিটি বসে মিটিং করেছি। এটি আসলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। এখন এটি প্রশাসন দেখবে।প্ল্যানিং কমিটিতে থাকা ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ আসহান উল্লাহ বলেন, এটা তো চেয়ারম্যান বা রেজিস্ট্রার বলতে পারবে। ক্রাইটেরিয়া (মানদণ্ড) ব্যতীত এইখানে এলে কাউকেই নেওয়া যাবে না। এখন দেখার বিষয় এটি কি প্রিন্টিংয়ে ভুল হয়েছে না কি অন্যকিছু। তাছাড়া ক্রাইটেরিয়া সম্পূর্ণ না হলে প্ল্যানিং কমিটিও কাউকে নিতে পারে না। ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে এসএসসি, এইচএসসি জিপিএ-৪। সেখানে এর নিচে আসবে কীভাবে? এটা চেয়ারম্যান অনুসন্ধান করে ভুল হয়ে থাকলে শুদ্ধ করে দিতে পারে। এটায় কারও ওপরই দোষারোপ করে লাভ নেই। হায়ার অথরিটি ইচ্ছে করলে এটা বাতিল করতে পারে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, সে পরীক্ষাতে বসবে কি বসবে না এটা তার এখতিয়ার। যখন সিলেকশন বোর্ডে আসবে, সিলেকশন বোর্ডের মেম্বাররা অ্যানালাইসিস করবে। যদি সে আসে সিলেকশন বোর্ড সবকিছু দেখেশুনে তখন তারা সিদ্ধান্ত নেবে।যোগ্যতাই যদি না থাকে তাহলে সে কীভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ভুলে একজনের কাছে কার্ড চলে গেছে। তার কার্ডটা তো আমি রহিত করতে পারি না। বাতিল করার জন্য তিনটা ধাপ রয়েছে। বাছাই বোর্ড, প্ল্যানিং ও সিন্ডিকেট- সে যেকোনও একটা ধাপে আটকে যেতে পারে। তাকে আটকানোর আইন আমার হাতে নাই।রেজিস্ট্রার আরও বলেন, যারা ভুল করেছে, তাদের আমি কোয়ারি করতে পারি। আপনারা কেন ভুল করলেন। ওই লোককে আমরা কোয়ারি করতে পারি না।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, এটি আমাদের সিলেকশন বোর্ড দেখবে। বোর্ড যদি দেখে সে (প্রার্থী) কোয়ালিফাই করে না তাহলে বাদ যাবে। প্রত্যেক সময়ই আমরা বোর্ডে চেক করি। তবে প্ল্যানিং কমিটিকে অবশ্যই আমরা শোকজ করবো।উল্লেখ্য, মোবারক হোসাইন ২০০৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করেন। এরপর ২০১২ সালে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। ২০১৪-১৫ সেশনে ভারতের রাজস্থানের একটি ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি শুরু করেন। যা শেষ হয় ২০১৭ সালে। এর ফাঁকে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাস করেন। ICMAB তে CMA’র প্রথম সেমিস্টার শেষ করেন। সর্বশেষ জুলাই ২০১৯-এ তিনি দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিএইচডি থিসিসে আপত্তিকর শব্দের ব্যবহার, উইকিপিডিয়া থেকে সরাসরি কপি-পেস্ট করা ও ইংরেজি ভুল শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার নিয়ে রয়েছে সমালোচনা।তিনি ছাত্র শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি, কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button