ভারত নিজেদের স্বার্থেই পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল: সারজিস আলম
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ভারত নিজেদের স্বার্থ ও সার্বভেৌমত্ব রক্ষার জন্যই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে এসে অংশগ্রহণ করেছিল। পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল। কারণ এত বড় একটা দেশ আরেকটা দেশের যুদ্ধে এমনি এমনি অংশ গ্রহণ করে না।Sarjisশনিবার চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানের কনফারেন্স লাউঞ্জে Èভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চরমোনাই পির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মুহাম্মাদ জান্নাতুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।শেখ হাসিনাকে খুনি এবং তার রক্তের পিপাসা এখনো শেষ হয়নি বলেও মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারত এনে দিয়েছে। যা ১৬ ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রাষ্ট্রপতির ফেসবুক ও টুইটার পোস্টে দেখেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসাবে প্রেজেন্ট করছে। অর্থাত্ তারা ভেতরে ভেতরে যে বিষয়টা বিশ্বাস করত এখন প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের মানুষের ওপর এই বিশ্বাসটা চাপিয়ে দেওয়ার চষ্টো করেছে। এখন নতুন যে কোনো যুক্তি-তর্ক নেওয়ার জন্য, ভালোকে গ্রহণ ও খারাপকে ছুড়ে ফেলার জন্য যে তরুণ প্রজন্ম প্রস্তুত তাদের বোঝাতে হবে যে, একটা দেশ কোনোদিন দুটি দেশের মধ্যে এমনি এমনি চলে আসে না। একটা দেশ কখনো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এতটা উদার হয় না যে, দুটি দেশের যুদ্ধের মাঝখানে নিজে অংশগ্রহণ করবে। একটা যুদ্ধে যে কেউ অংশগ্রহণ করুক না কেন, হারুক বা জিতুক তার সামরিক, অর্থনৈতিক ও সৈনিকের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই থাকে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে, কীভাবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল। তাদের সবচেয়ে বড় অন্তর্নিহিত ইচ্ছা, সেই ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ১৯৭১ সালে ভারত করেছে। তরুণদের বোঝাতে হবে, কেবল বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়; নিজেদের সেভেন সিস্টার্সকে ‘সেভ’ করার জন্য ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। ওই সেভেন সিস্টার্স মুক্তিযুদ্ধের আগে অভ্যন্তরীণ কালচার, মতপার্থক্যসহ নানা পরিস্থিতির কারণে প্রায়ই বিদ্রোহের মধ্যে থাকত। তখন ভারত ভয় পেত, কখন তারা নিজেরাই দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের তিন পাশে যেমন ভারত, একইভাবে ভারতের তিন পাশেও এই ভূখণ্ডের বাংলাদেশ আছে। আবার এই ভূখণ্ডের সঙ্গে এক পাশে মিয়ানমার, ওপারে নেপাল, ভুটান, পাশে চীন। ভারতের মনে তখন এই ভয় ও স্বার্থটা বেশি ছিল যে, এখন যদি আমি পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করতে না পারি বা সহযোগিতা না করি তবে নিজেদের সার্বভেৌমত্বই বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় থ্রেডের সম্মুখীন হলো আমাদের সার্বভেৌমত্ব। সেই থ্রেড ১৯৭১ সাল থেকে ‘২৪-এর গণ-অভু্যত্থান-পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ছিল।সারজিস বলেন, ‘৭১-এর আগে ও পরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরাশক্তিগুলো ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার, পাকিস্তানের সঙ্গে চীন-আমেরিকার, সাউথ এশিয়ার অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক গ্রুপগুলোতে নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সেই বিষয়গুলো না থাকলে ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করত না। তরুণ প্রজন্মকে এটা বোঝাতে হবে। আধিপত্যবাদ খণ্ডন করতে হবে। ভারতকে যেভাবে পিরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটাকে খণ্ডন করতে হবে। এই আধিপত্যবাদ যে প্যারামিটার থেকে তৈরি হয়েছে সেই প্যারামিটার ভাঙতে হবে। যদি না পারি তবে অন্য আধিপত্যবাদের সহযোগী হয়ে যে কোনো সময় যে কোনো ফর্মে ফিরে আসবে তারা।