ইসলাম ধর্ম

নামাজে দাড়িয়েই প্রথমে আমরা বলি,”আল্লাহু আকবার”

১ ) নামাজে দাড়িয়েই প্রথমে আমরা বলি,”আল্লাহু আকবার”
অর্থ – আল্লাহ্ মহান!

২ ) তারপর পড়ি সানা । সানায় আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি নিজের জন্য দুয়া করি।
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা
ওয়াতাবারাকাস্মুকা ওয়া তা’আলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি পাক-পবিত্র , তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ , তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।

৩ ) তারপর আমরা শয়তানের প্রতারনা থেকে আশ্রয় চাই এবং বলি, “আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজিম”
অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

৪ ) আল্লাহর পবিত্র নাম দিয়ে আল্লাহর দয়া করুণার গুন দিয়ে নামাজ এগিয়ে নিয়ে যাই। এবং বলি, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
অর্থঃ পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।

৫ ) এরপর আমরা সূরা ফাতেহা দিয়ে নামাজ শুরু করি (২ রাকাত/৩ রাকাত/৪ রাকাত , ফরয/সুন্নতের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ পড়ি )

৬ ) আমরা রুকুতে আল্লাহ্ -র উদ্দেশ্যে শরীর অর্ধেক ঝুঁকিয়ে দিয়ে মাথা নুয়িয়ে দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করি এবং ক্ষমা চাই, ৩/৫/৭ বার বলি, “সুবাহানা রাব্বি-আল আজিম”/ সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ওয়া বিহামদিহি
অর্থ: আমার মহান রবের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি ।

৭ ) তারপর রুকু থেকে উঠে আমরা বলি,
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদা”
অর্থ : আল্লাহ সেই ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে ।
তারপর পরই আমরা আবার আল্লাহর প্রশংসা করে বলি, “আল্লাহুম্মা “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ”
অর্থ : হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল তোমারই।

৮ ) তারপর আমরা সমস্ত শরীর নুয়িয়ে দিয়ে মাথাকে মাটিতে লুটিয়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট সিজদা দেই।
বি: দ্র: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর একটি বৃদ্ধি করে দেন।
“৩/৫/৭ বার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”
অর্থ: আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি

৯ ) দুই সিজদার মাঝখানে আমরা বলি, “আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ার হামনী, ওয়াহদীনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াআ’ফিনী, ওয়ার-ঝুকনী, ওয়ারফা’নী”
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমায় মাফ কর, আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়েত দান কর, আমাকে শান্তি দান কর এবং আমাকে রিজিক দাও ।

১০ ) এভাবে নামাজ শেষে , মধ্য (২ রাকাত , ৪ রাকাত ভিত্তিতে ) বৈঠক আর শেষ বৈঠকে তাশাহুদে, আল্লাহর প্রশংসা করি । রাসুল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পেশ করে নিজেদের জন্য দুয়া করি । দুআ মাসুরা পড়ি ।

তাশাহুদ :
“আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু”
অর্থঃ “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি,আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল”

দুরুদ :
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি
ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ,
অাল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা
ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”
অর্থ:-হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ও উনার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।

দুআ মাসুরা :
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি যুলমান কাছিরা, ওয়ালা ইয়াগ ফিরূজ যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার উপর অত্যাধিক অন্যায় করেছি গুনাহ করেছি এবং তুমি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু।

১১ ) ২ কাঁধে সালাম দিয়ে আমরা
নামাজ শেষ করি ।

আল্লাহ নামাজে আমরা কি পড়ি তার অর্থ বোঝার তৌফিক দান করুন। আমীন ❤
[10:49 AM, 1/18/2025] Morshed Sir Aparadh Bicitra: মায়ের দুধ পান করানো সংক্রান্ত ভুলত্রুটি
মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
শিশুকে বুকের দুধ না দেওয়া
কোনো কোনো মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান না, খাওয়ালেও খুব কম খাওয়ান। তারা তাদের শিশুকে কেবল বাজারের গুড়ো দুধ খাইয়ে লালন করে থাকেন। অথচ মার বুকের দুধে সন্তানের হক রয়েছে। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য প্রদত্ত খাবার। তাই মা’র শারীরিক অসুস্থতা কিংবা এধরনের বিশেষ ওযর না থাকলে সন্তানকে বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে এসেছে—
وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ.
অর্থ : ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ দু’বছর স্তন্যদান করবে, যদি দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।’ —সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৩
তাফসীরবিদগণ বলেন, এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, সন্তানকে দুধ পান করানো ওয়াজিব এবং আরও বোঝা গেল যে, বিশেষ ওযর ছাড়া স্তন্যদান থেকে বিরত থাকার অবকাশ নেই। —মাআরিফুল কুরআন; তাফসীরে মাযহারী; কুরতুবী; জামিউ আহকামিসসিগার ১/১২৩
তাছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এ বিষয়টি স্বীকৃত যে, শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। শিশুকে স্তন্যদান শিশুর জন্য যেমন উপকারী তদ্রূপ মার জন্যও উপকারী।
নির্ধারিত সময়ের পরও দুধ পান করানো
অন্যদিকে দেখা যায়, অনেক মা সন্তানকে ৩-৪ বছরও দুধ খাওয়ান। আবার অনেকে আড়াই বছর খাওয়ানো যায় মনে করে এ মেয়াদ পূর্ণ করেন। এটা ভুল। সন্তান অনুর্ধ্ব দুই বছর মার বুকের দুধ খেতে পারবে। দুই বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে দুধ পান করানো নাজায়েয। দুই বছর দুধ পান করানোর বিষয়টি সূরা বাকারার ২৩৩ আয়াতে রয়েছে। এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন,
لا رضاع إلا في الحولين
‘মায়ের দুধ পানের সময় দুই বছরই।’ —সুনানে দারাকুতনী ৪/১৭৪; তাফসীরে মাযহারী ১/৩২৩; মাজমাউল আনহুর ১/৫৫২; আত্তাসহীহ ওয়াত্তারজীহ ৩৩৫; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৭-৩০৯
শিশু অন্য খাবারে অভ্যস্ত না হলে আড়াই বছর বুকের দুধ খাওয়ানো
অনেকে মনে করেন, দুই বছরের বেশি দুধ পান করানো যায় না—একথা ঠিক, তবে শিশুর স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা থাকলে কিংবা অন্য খাবারে অভ্যস্থ না হলে আড়াই বছর বুকের দুধ খাওয়ানোর সুয়োগ আছে। এধারণাও ভুল। শিশুকে দুই বছরের বেশি বুকের দুধ খাওয়ানোর কোনো সুযোগ নেই। শিশু অন্য খাবারে অভ্যস্ত না হলেও। আজকাল বাজারে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি অনুপাতে বিভিন্ন কোম্পানির গুড়ো দুধ পাওয়া যায়। সুতরাং অন্য খাবারে অভ্যস্ত না হলেও তেমন অসুবিধা নেই।
দুই বছরের বেশি যেন বুকের দুধ খাওয়াতে না হয় এ জন্য পূর্ব থেকেই শিশুকে অন্য খাবারে অভ্যস্ত করা উচিত এবং এক বছর আট-নয় মাস হলেই বুকের দুধ কমিয়ে দেওয়া উচিত। যেন যথাসময়ে দুধ ছাড়ানো শিশুর জন্য কষ্টের কারণ না হয়ে যায়।
দুধ-সম্পর্কের বিধি-বিধান বিষয়ে উদাসীনতা
যে ছেলে-মেয়ে এক মায়ের দুধ পান করেছে তারা পরস্পর দুধ-ভাই, দুধ-বোন। এদের মধ্যে বিবাহ-শাদী হারাম। অথচ এ মাসআলাটির প্রতি অনেকেই ভ্রূক্ষেপ করে না। গ্রামে-গঞ্জে মহিলারা শখ করেই একে অন্যের সন্তানকে দুধ খাইয়ে থাকে। আবার অনেক প্রয়োজনবশতও খাওয়ায়। যেমন, মাতার অসুখ হলে বাচ্চাকে পার্শ্ববতী অন্য মা দুধ পান করান, কিন্তু এ বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যায়। যিনি দুধ পান করালেন তিনিও এটা স্মরণ রাখেন না, অন্যদেরকেও জানানো হয় না। আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-পড়শিদেরও বিষয়টি জানা থাকে না। ফলে অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো দম্পতির বিবাহ হয়ে সন্তান-সন্ততি হয়ে যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দুধ ভাই-বোনের সম্পর্কের খোঁজ পাওয়া যায়। কত জটিল ও ভয়াবহ ব্যাপার! এর জন্য প্রথমত দুধ পান করানোর বিষয়েই সতর্ক হওয়া জরুরি। শিশুর দুধের অভাব বা প্রয়োজন ছাড়া শুধু শখ করে কিংবা হাসি-ঠাট্টাস্থলে অন্য মা-র দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আর যদি কোনো শিশুকে দুধ পান করানো হয় তবে এ দুধ-সম্পর্কের কথা আত্মীয়-স্বজনকে জানানো এবং এ সম্পর্কের হেফাযত করা জরুরি। বরং ডায়েরীতে নোট করে রাখা উচিত। এটা শরীয়তের অনেক বড় হুকুম। সমাজে এ বিষয়ে চরম উদাসীনতা লক্ষ করা হয়। —তাফসীরুল মানার ৪/৪৭০, ফিকহুস্ সুন্নাহ ২/৪০৩
দাদি-নানির দুধ পান করা যাবে না?
অনেকে মনে করেন, শিশু তার দাদি-নানির দুধ পান করতে পারবে না। যদি দুধ পান করে তবে বাবা-মার বৈবাহিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় । এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শিশু তার দাদি-নানির দুধ পান করলে বাবা-মার সম্পর্ক নষ্ট হবে না। —আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১২৫
দুধ সম্পর্কের অপব্যবহার
কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায়, খালাত ভাই-বোন বা চাচাত ভাই-বোন যাদের মধ্যে পর্দা ফরয তারা বড় হলে পর্দা করতে পারবে না—এই আশঙ্কায় ছোট থাকতেই খালা বা চাচির দুধ খাইয়ে দেওয়া হয় যেন তারা বড় হয়ে পর্দা লঙ্ঘনের গুনাহে পতিত না হয়। যৌথ পরিবারে এমনটি বেশি ঘটে থাকে। অথচ শরীয়তে দুধ-সম্পর্কের বিধান এ উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়নি। দুধ সম্পর্কের ভিত্তি হবে সন্তানের দুধের প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে। পর্দার হুকুম আদায় করতে পারবে না এ আশঙ্কায় দুধ পান করানো আদৌ সমীচীন নয়। কারণ স্বভাবগত কারণে মানুষ একেবারে পশুতে পরিণত না হলে কোনো রক্ত সম্পর্কীয় মাহরামের প্রতি কামভাবের উদ্রেক হয় না, কিন্তু দুধ ভাই-বোনের মধ্যে যেহেতু রক্তের সম্পর্ক নেই তাই তাদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে কামভাবের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ফিকহের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাবে দুধভাই—বোনের একত্রে নির্জনে অবস্থান করাকে নাজায়েয বলা হয়েছে। —ফাতাওয়া শামী ৬/৩৬৯
দুধ-সম্পর্কের কারণে দুধ ভাই-বোনের দেখা সাক্ষাত বৈধ হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে বিবাহ—শাদী হারাম হয়ে যায়। কিন্তু তারা সকল ক্ষেত্রে রক্ত সম্পর্কীয় আসল মাহরামের মতো নয়। আজকাল দুধভাই বোনের চালচলন আপন ভাই-বোনের মতোই দেখা যায়, যা আদৌ কাম্য নয়। একইভাবে তাদের একাকী সফরসম দূরত্বে যাওয়াও ঠিক নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button