অপরাধঅব্যাবস্থাপনা

ডিগ্রি বিহীন কথিত ক্যান্সার চিকিৎসক ও গবেষক খ্যাত ডাক্তার এসএম সারওয়ারের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি

সুইটি সিনহাঃ

স্বঘোষিত চিকিৎসক, গবেষক ও অধ্যক্ষ ডাঃ এস এম সারওয়ার ক্যান্সার সহ ৪০টিরও বেশি রোগের চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। চিকিৎসা বিদ্যায় বরেন্দ্র ও খ্যাতিমান ডাক্তার জাফরউল্লাহর নামকরণ অনুসরণ করে নিজের চেম্বারের নাম রেখেছেন গণস্বাস্থ্য হোমিও চিকিৎসালয়। গণস্বাস্থ্য হোমিও চিকিৎসালয় নামে ৫৬/১ বায়তুল ভিউ টাওয়ারের ১২তম তলায় ও হবিগন্জের নিজ বাড়িতে পৃথক পৃথক ভাবে রয়েছে দুইটি চেম্বার। ৪০টির ও বেশি জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকলেও কথিত এই প্রতারক ডাঃ এস এম সারওয়ার নিজেকে ক্যান্সার চিকিৎসক ও গবেষক হিসাবেই সবচেয়ে বেশি প্রচার করেন।তার দাবি অনুযায়ী তিনি দীর্ঘ ২৭বছরে প্রায় ৪হাজারের বেশি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন।এছাড়াও তার ব্যবহৃত পরিচয় দান কারী কলিং কার্ড/ভিজিটিং কার্ডে মোট ৯টি ডিগ্রি সহ নিজেকে একটি কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

কথিত ডাঃএসএম সারওয়ার এর উল্লেখিত ডিগ্রি অনুযায়ী তিনি নবজাতক ও স্ত্রী রোগ সহ রক্তনালীর যে কোন রোগে বিশেষজ্ঞ বোঝায়।যেখানে নরসিংদী,রাজশাহী ও ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জনের উল্লেখ রয়েছে।একজন ব্যক্তির এত গুলো গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন এর বিষয়টি চোখে পড়লেই সহজে অনুমান করা যায় চিকিৎসার নামে এই ডাঃএসএম সারওয়ার একজন ভূয়া পরিচয় তৈরীর কারখানা।এসকল বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে এবং আইনজীবী কতৃক পরিচিতিসহ ডিগ্রির সত্যতা নিশ্চিত করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলে কথিত ডাঃ এসএম সারোয়ার গত ১৩/০১/২৫ তাং সময় ১:০০ঘটিকায় সংবাদকর্মী ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে পুরানা পল্টনে তার নিজস্ব চেম্বারে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

সম্মেলনের শুরুতেই টাকায় ভাড়া করা বিভিন্ন ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের এসকল সংবাকর্মীকে প্রথমেই বাকরুদ্ধ করে দেওয়া হয়।শর্তজুড়ে দিয়ে এই কথিত ডাঃ এসএম সারোয়ার এর দুইজন প্রতিনিধি বলেন– সকলে উল্লেখিত হেডলাইন ব্যবহার করে লাইভ করতে হবে এবং লিংক বুঝে দিয়ে পেমেন্ট নিবেন।তা না হলে পেমেন্ট দেওয়া হবে না।প্রতিটি লিংক এর জন্য বরাদ্দ কৃত অর্থের পরিমান ৫০০-১০০০টাকা।অর্থের কাছে জিম্মি হওয়া বিকৃত মস্তিষ্কের এসকল নাম মাত্র সাংবাদিকদের সামনে শুরু হয় প্রতারক, বাটপার,কথিত ডাঃ এসএম সারোয়ার এর ৩০মিনিটের সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলন এ দেওয়া তার এই বক্তব্য অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। তার বক্তব্য ছিলো এমন-তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেনি থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত।এবং এখন ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাজনীতি করে আসছেন এবং বাংলাদেশ ইসলামী সমন্বয় পরিষদ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতিত্ব করছেন। তার সাফল্য নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়েছে।

যে কিনা নিজেই ভাড়া করা লোক দিয়ে সম্মেলন করছেন তারএমন উক্তি আসলেই হাস্যকর।তিনি নিজেকে হবিগঞ্জ কলেজের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনোনীত বলে ও দাবি করেন।একই সাথে তিনি নিজেকে দৈনিক দেশজগত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসাবে দাবি করেন।এবং বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও সাংগঠনিক সচিব জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা (জেএসএস)কেন্দ্রীয় পরিষদ বলে দাবি করেন।উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন তার পরিচালিত সংগঠনের টাকা আত্মসাৎ করা নিয়ে তার শত্রু হয় একজন আইনজীবি ও একজন মাওলানা।তাই তারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছেন।তিনি আরো বলেন তিনি হবিগঞ্জ প্রেসিডেন্সি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ।তিনি মোমবাতি প্রতিক নিয়ে ঢাকা থেকে এমপি নির্বাচন করেছেন বলে জানান।তার এই দীর্ঘ বক্তব্যের মধ্যে বের হয়ে আসে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা।তিনি জানান তিনি ৪হাজারের বেশি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন।এক পর্যায়ে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করে বলেন তিনি হবিগঞ্জ একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করে পরবর্তীতে একটি ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে DHMS ডিগ্রিতে প্রথমস্থান অধিকার করেন।

দীর্ঘ তার এই বক্তব্য থেকে সহজে যে সকল অনিয়ম ও দূর্নীতি চোখে পড়ে তা হলো:- একজন চিকিৎসক জিনি ২৭বছর ধরে চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত এবং সপ্তাহে ৩দিন ঢাকার পল্টন ও বাকি ৩দিন হবিগঞ্জ নিজ চেম্বারে সকাল ১০হতে রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসা দেন এবং নিয়মিত রোগী দেখেন।তিনি কি করে একটি কলেজের অধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব পালন করেন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্য তিনি সময় কখন নির্ধারন করে রেখেছেন?বা প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ও সভা সহ যাবতীয় আলোচনায় তিনি কিভাবে উপস্থিত হন।তাহলে তার ক্ষেত্রে দিনের হিসাব ঠিক কত ঘন্টা আর সপ্তাহ কত দিনে?একই সাথে তার ভাষ্যমতে তার যে শিক্ষাগত যোগ্যতা তা নিয়েও রয়েছে চরম গোঁজামিল। বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোন কলেজের অধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব পালন করতে হলে তার যোগ্যতা হতে হবে স্বীকৃত কোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী(সর্বোনিম্ন ২য় গ্রেড) এবং শিক্ষকতা পেশায় অভিজ্ঞতা ও জরুরি। সেখানে এসএম সারোয়ার এর বলা শুধু মাত্র বিএ পাশ হয়ে কিভাবে অধ্যক্ষ হওয়া সম্ভব?? তিনি এত সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন বলে দাবি করলেও সাংবাদিক সম্মেলনে একজন সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীকে উপস্থিত করতে কেন পারলেন না?

তার পেছনের গল্পই বা কি?বাংলাদেশে হোমিও চিকিৎসায় নির্ধারিত কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেই সেক্ষেত্রে তিনি কোথায় বসে গবেষণা করেন,আর তার গবেষণার ল্যাব কোথায় সেটা এখনও অজানা।তাহলে তার গবেষক দাবি করা কি শুধুই কল্পনাবিলাশ?হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে DHMS ডিগ্রি ও প্রথম স্থান অধিকার করার গল্প তিনি সস্তায় সম্মেলন করে শোনালে ও অধ্যয়নের সাল ও সনদ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যে আনতে কেন ব্যর্থ হলেন?জিডি করে পুলিশকে অবগত করেছি বা তাদেরকে সার্টিফিকেট দেখানো হলে তাহলে সংবাদ সম্মেলনে কি তিনি ভিত্তিহীন, মনগড়া গল্প শোনাতে ডেকেছিলেন? সে বিষয়টিও যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দেয়।এছাড়া সম্মেলনে তিনি আইনজীবী , একজন মাওলানা সহ একজন গণমাধ্যম কর্মীকে চাঁদাবাজ ও হলুদ সাংবাদিক বলে দাবি করলেও উপযুক্ত প্রমান ও কারন দর্শাতে ব্যর্থ হন।তিনি নিজেকে একাধারে একজন সম্পাদক, গবেষক, চিকিৎসক, অধ্যক্ষ ও রাজনীতিবিদ দাবি করলেও নেই কোন দালিলিক প্রমান।তার দেওয়া চিকিৎসার বিষয়ে ব্লাডক্যান্সারে আক্রান্ত ৯বছর বয়সী আনিসার(কুমিল্লা নিবাসী) বাবার সাথে কথা বললে তিনি জানান-প্রথম সাক্ষাৎ এ কথিত এই ডাঃএসএম সারওয়ার ৩৫হাজার টাকা তার ফিস নিয়েছেন।

ওষুধ সহ তার প্রায় একমাসের ব্যয় ৫০হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে।ঔষধ চলা অবস্থায় মাত্র ১৪দিনের ভেতর তার মেয়ে আনিসা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে কুমিল্লা সিডি প্যাথ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।বর্তমানে তার অবস্থা আশংকাজনক।ভুক্তভোগী আনিসার বাবা আরো উল্লেখ করে জানান বিভিন্ন দালালের চটকদার বক্তব্য শুনে শিশু মেয়েকে নিয়ে অনেক আশায় এখানে এসে এক পর্যায়ে প্রতারিত হয়েছি।এভাবে আমাদের মত গরিব মানুষের ভাগ্যের সাথে খেলা করা কথিত এই ডাঃ নামক কশাই সারওয়ার এর বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। ক্যান্সার চিকিৎসার বিষয়ে কয়েকজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার এর সাথে কথা বললে জানান এই রোগের একদম প্রাথমিক স্তরে চিন্হিত করা সম্ভব হলে এবং রোগীর বয়স ও শারিরিক ধরন অনুযায়ী সুস্থতা নির্ভর করে।সে সংখ্যা প্রায় হাজারে ৩জন।তবে ১ম স্টেজে রোগ নির্নয় করা না লেগে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা অনেকটাই অসম্ভব। তাহলে এই কথিত ক্যান্সার চিকিৎসক ডাঃএসএম সারওয়ার কি সুপার পাওয়ার ব্যবহার করে ক্যান্সার চিকিৎসা করে সেটাই অধিকাংশ ডাক্তার সহ সচেতন মহলের প্রশ্ন?

এছাড়াও অসংখ্য ভুক্তভোগী এই প্রতারক এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার ইচ্ছে থাকার পরেও অজানা আতঙ্কে থাকেন।কারন তার রয়েছে ক্যাডার বাহিনী, পোষা সাংবাদিক, প্রশাসন সহ রয়েছে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে টাকার ছড়াছড়ি। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে মামলা হামলা সহ নানা রকম উপায়ে হেনস্তা করা হয় বলে দাবি অনেকের। উল্লেখ থাকে যে গত ১৩ই জানুয়ারি তার টাকা ছড়িয়ে সাজানো সাংবাদিক সম্মেলন দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় প্রতারক ও ভূয়া ডাক্তার এসএম সারোয়ার এর বিরুদ্ধে মুখ খুললে তার পরিনাম কি হতে পারে।(অনুসন্ধান চলমান)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button