এরপর সে ফতোয়া জিজ্ঞাসার ভান করে মাসজিদে হারামের একপাশে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।
মক্কায় এক সুন্দরী নারী তার স্বামীর সঙ্গে বাস করত। একদিন সে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, আপনার চেনাজানা এমন কেউ কি আছে, যে আমার রূপ দেখে প্রেমে পড়বে না? স্বামী বলল, হ্যাঁ, উবাইদ ইবনু উমাইর নামে একজন আছে। স্ত্রী বলল, আপনি অনুমতি দিলে আমি তাকে একটু বাজিয়ে দেখতে চাই। স্বামী অনুমতি দিল।
এরপর সে ফতোয়া জিজ্ঞাসার ভান করে মাসজিদে হারামের একপাশে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। একপর্যায়ে সে তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিলে এক টুকরো চাঁদ যেন আশপাশে দ্যুতি ছড়াল।
উবাইদ বললেন, হে আল্লাহর বান্দী, পর্দাবৃত্ত হও! সে বলল, আমি আপনার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। জবাবে তিনি বললেন, তোমাকে আমার কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে। ঠিকঠাক জবাব দিতে পারলে তোমার বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে৷ সে বলল, আপনি যা-খুশি জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমি সত্য বৈ মিথ্যা বলব না। এবার তিনি তাকে লাগাতার কয়েকটি প্রশ্ন করলেন—
১. আচ্ছা, ধরে নাও—মালাকুল মউত এসেছে তোমার জান কবজ করতে। এমতাবস্থায় কি তোমার সে চাওয়া পূরণ করতে তোমার ভালো লাগবে? সে বলল, আল্লাহর কসম—তা তো হতে পারে না। তিনি বললেন, তুমি সত্যি বলেছ৷
২. ধরো তুমি কবরে আছ, সুওয়াল-জওয়াবের জন্য তোমাকে বসানো হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে কি আমার কাছে যা-চাওয়া, তার প্রাপ্তি তোমাকে আনন্দিত করবে? এবারও সে বলল, কসম আল্লাহর—কস্মিনকালেও তা হতে পারে না। তিনি বললেন, তুমি সত্য বলেছ।
৩. মনে করো সবার হাতে হাতে আমলনামা তুলে দেওয়া হচ্ছে। তোমার জানা নেই—তোমার আমলনামা ডানহাতে দেওয়া হবে, নাকি বামহাতে। সে-সময়ও কি তুমি তোমার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ভাববে? সে বলল, আল্লাহ কসম, এমনটি সম্ভবই না। তিনি বললেন, তুমি সত্য বলেছ।
৪. তোমার সামনে পুলসিরাত। একটু পরই পার হওয়ার উদ্দেশ্যে তোমাকে পা বাড়াতে হবে। জানা নেই—ওপারে যেতে পারবে, নাকি মাঝপথে কেটে পড়ে যাবে। তখন? তখনও এই কামনা-বাসনা চরিতার্থ করা তোমাকে পুলকিত করবে? সে বলল, হায় আল্লাহ, এমনটি তো কোনোভাবেই হতে পারে না। তিনি বললেন, তুমি সত্য বলেছ।
৫. তোমার সামনে পাপপুণ্যের হিসেব করার জন্য ‘মিযান’ স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে তুমি অনিশ্চিত—গুণাহের পাল্লা ভাবি হবে, নাকি ছওয়াবের? এমন সময় কি হতে পারে? মন চাইবে সে বাসনা পূরণ করতে? সে বলল, কসম খোদার, এমনটা হতে পারে না। তিনি বলেন, তুমি সত্য বলেছ। আরও বললেন—আল্লাহকে ভয় করো। তিনি তোমাকে নেয়ামত-প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তোমার প্রতি অনেক অনুগ্রহ করেছেন।
তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তারপর সে তার স্বামীর কাছে ফিরে গেলে স্বামী খবর-বার্তা জানতে চাইল। প্রতুত্তরে সে বলল, আপনিও নিষ্কর্ম, আমরাও নিষ্কর্ম।
এরপর থেকে সে নামাজ, রোজা, ইবাদত, বন্দেগির প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করল। এতটা পরহেজগার হয়ে গেল যে, তার স্বামী বলতে লাগল—উবাইদ ইবনু উমাইর আমার স্ত্রীর মাথাটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে। আগে সে প্রতিরাতে নববধূর সাজে সজ্জিত হতো, আর এখন আপাদমস্তক বৈরাগিণী হয়ে গেল।
-আল আমিন ফেরদৌস
ঘটনাটি ইবনুল জাওযি রহিমাহুল্লাহ আল মুন্তাজাম ফি তারিখিল মুলুকি ওয়াল উমামে এনেছেন। ৬/১৯৭। এর আগে ইজলি রহিমাহুল্লাহও ঘটনাটি বর্ননা করেছেন। তারিখুস সিকাত, ৩২২।