ভারতে নারী খুনের ভাইরাল ভিডিওকে বাংলাদেশের ধর্ষণের ঘটনা বলে অপপ্রচার
সম্প্রতি ইটের রাস্তায় ক্ষতবিক্ষত এক নারীর ছড়িয়ে পড়া (ভাইরাল) ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক ঘটনার ভিডিও।
বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘ভারতে নারী খুনের ঘটনায় ভাইরাল ভিডিওকে বাংলাদেশের ধর্ষণের ঘটনা বলে অপপ্রচার’ শীর্ষক রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি মারাত্মকভাবে আহত একজন নারীর রাস্তার পাশে বসে থাকা, তাঁকে পাশ থেকে লোকজনের প্রশ্ন করার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে। প্রচারিত পোস্টে ওই নারীকে পর্যটক (ট্যুরিস্ট) উল্লেখ করা হচ্ছে। পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এই নারী বাংলাদেশের টেকনাফে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিংবা কুমিল্লার রাস্তায় মারধর করে তাঁর ঠোঁট-জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে। কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, কথা বলা রোধ করতে তাঁর জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে। এমন সব দাবি ফেসবুক ও এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই (ফ্যাক্টচেক)
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের দল এই দাবিগুলো যাচাই করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাস্তার ধারে ক্ষতবিক্ষত নারীর ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়; বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক এ ঘটনার ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আহত নারীকে তাঁর বাড়ি কোথায় বলে প্রশ্ন করা হয়। এ প্রশ্নে তাঁর অস্পষ্ট উত্তর আসে। তাঁর উত্তরের প্রত্যুত্তরে একজন ব্যক্তি মুর্শিদাবাদের কথা উল্লেখ করেন। মুর্শিদাবাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলা।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ তথ্যের সূত্রে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ এইটিনের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম: ‘জয়নগরে ধানক্ষেতের ধার থেকে মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ’।
রিউমর স্ক্যানার বলেছে, নিউজ এইটিনের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০ জানুয়ারি গভীর রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জয়নগরের বকুলতলা থানার অন্তর্গত রথতলা এলাকায় ফাঁকা ধানখেতের ধারে ইটের রাস্তায় এক নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারীর শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত (কোপ) ছিল। তাঁর মুখের এক দিক থেঁতলানো ছিল। বেশ কয়েকটি দাঁত ভাঙা ছিল।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাটির বিষয়ে একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করা হয়। এই অনুসন্ধানে ‘ভিশন এইটিন বাংলা’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত ভিডিওটির শিরোনাম: ‘জয়নগর নিউজ: বকুলতলায় ধানক্ষেতে অজ্ঞাত মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ’। এই ভিডিওটির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির বিষয় ও পারিপার্শ্বিকতার মিল রয়েছে।
এ ছাড়া নিউজ এইটিনের ইউটিউব চ্যানেলে ২৫ জানুয়ারি একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ভিডিওর শিরোনাম ‘জয়নগর নিউজ: জয়নগরে মহিলা খুনে অধরা অভিযুক্ত, বকুলতলায় মহিলাকে কুপিয়ে খুন!’ এই ভিডিওতে ঝাপসা (ব্লার) করে একই ভিডিও ব্যবহার করা হয়।
রেখা পাত্র নামের একটি ভারতীয় ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে এ ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশন থেকেও ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত তথ্য থেকে নিশ্চিত করা যায়, আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেনি। বরং ভারতের সাম্প্রতিক একটি ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশের বলে প্রচার করা হচ্ছে। ঘটনাটি বাংলাদেশের বলে যে দাবি, তা মিথ্যা।