মহান আল্লাহ কি আমাদের পাপ কাজ গুলো ক্ষমা করবেন ?
পাকিস্তানের করাচির এক মহিলা একটি পতিতালয় চালাতেন। রামাদানের এক রাতে তার ছেলে মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে দেখল মসজিদের সামনে কেউ ফ্রিতে অডিও সিডি বিলি করছে। সে সেখান থেকে একটা সিডি নিয়ে বাসায় ফিরে এল।
ঐ রাতে সে বাসায় গিয়েই সিডি চালিয়ে শুনতে লাগল। ছেলের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেটা তার মায়ের কানেও গেল। মহিলা বসে বসে শুনতে লাগলেন যতক্ষণ না পুরো আলোচনা শেষ না হয়। শেষ হওয়ার পর তিনি ছেলেকে বললেন, ‘সিডিটা আবার চালাও।’
ছেলে সিডি আবার চালাল। শেষ হওয়ার পর তার মা আবারও বললেন, ‘পুনরায় চালাও।’
এভাবে টানা তিনবার শুনলেন।
‘এই সিডিতে যে লোক কথা বলছে, সে কে?’- মহিলা তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।
‘আমি জানি না। মসজিদের সামনে একজন বিলি করছিল। আমি একটা নিয়ে এসেছি।’- ছেলে জবাব দিল।
পরের রাতে মহিলাও তার ছেলের সাথে মসজিদে গেলেন। তারাবির নামাজ শেষে তিনি ছেলেকে বললেন, তিনি ইমাম সাহেবের সাথে কথা বলতে চান।
ইমাম সাহেব আসার পর মহিলা গিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি আমার ছেলেকে এই সিডি দিয়েছিলেন গত রাতে?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু কেন জিজ্ঞেস করছেন?’
‘এই সিডিতে যিনি কথা বলছেন, তিনি কে?’- মহিলা জিজ্ঞেস করলেন।
ইমাম বললেন, ‘তিনি আমার শিক্ষক। মাওলানা তারিক জামিল।’
‘আপনি কি সত্যি করে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন?’
‘অবশ্যই! কেন নয়!’
‘আমি যদি আল্লাহর কাছে তাওবা করি, তিনি কি আমার তাওবা কবুল করবেন?’
‘কেন এমন প্রশ্ন করছেন? কী করেছেন আপনি?’
‘একজন পুরুষ বা মহিলা সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে পাপ করতে পারে, তারও অনেকগুণ বড় পাপ—আমি এতটাই পাপী।’
ইমাম বললেন, ‘আমি নিজ থেকে কোনো উত্তর দেব না। আমি আপনাকে সেই উত্তর দেব যেটা স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে দিয়েছেন,
يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরাহ যুমার, ৩৯ : ৫৩)
মহিলা বললেন, ‘তাহলে আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি আজ এই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে তাওবা করলাম।’
পরের রাতে সেই মহিলা মসজিদে এল নামাজ পড়তে। সম্পূর্ণ তারাবি নামাজ শেষ করল। শেষে তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘ও আল্লাহ! যদি আমার তাওবা কবুল হয়ে থাকে, তবে আমাকে এক্ষনি আপনার কাছে নিয়ে যান।’
পরের রাতেও মহিলা মসজিদে এলেন। নামাজ শেষে আবারো চিৎকার করে বললেন, ‘ও আল্লাহ! যদি আমার তাওবা কবুল হয়ে থাকে, তবে আমাকে এক্ষনি আপনার কাছে নিয়ে যান।’
এরপরের রাতেও একই ঘটনা। এরপরের রাত, এরপরের রাত। এভাবে ২৯ রামাদানের রাত এলো, ঐ রাতে তারাবির কুরআন খতম হবে।
তারাবি শেষে কুরআন খতম হলো, ইমাম সাহেব বিশেষ দুআ করলেন। এরপর সবাই একে একে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল, শুধু একজন ছাড়া…
সেই মহিলা!
তিনি সিজদায় পড়ে আছেন। আল্লাহ মহিলার তাওবা কবুল করে নিয়েছেন, সেই সাথে তাঁর দুআও!
কখনও মনে করবেন না আল্লাহ আপনার তাওবা কবুল করবেন না। কখনও মনে করবেন না আল্লাহ আপনার দুআ শোনেন না। আপনি যত বড় পাপীই হোন না কেন, তা কখনও আল্লাহর রহমত আর দয়াকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না।
কিন্তু আমরা শয়তানের ফাঁদে পড়ে যাই। পাপের সাগরে ডুবে থেকেও অবহেলায়, অলসতায় সময় কাটিয়ে দিই।
আগামী সপ্তাহ থেকে, আগামী বছর থেকে, হজ্জ করে এসে, সবকিছু একটু গুছিয়ে উঠে জীবনে একটা “ফ্রেশ স্টার্ট” করার আশায় আমরা বসে থাকি। তাওবা করে, পাপকাজ ছেড়ে, একদিন নামাজ-দুআ শুরু করব—এর জন্য শয়তানের দেওয়া আশ্বাসে আমরা বিশ্বাস করে থাকি।
কবরস্থানে গিয়ে যত নতুন কবর দেখেন, এর প্রত্যেকেই হয়তো আপনার আমার মতো এভাবেই একদিন জীবনে “ফ্রেশ স্টার্ট” করার আশায় বসে ছিল। তাদের সেই দিনটা আর কোনোদিন আসেনি।
আল্লাহর কাছে তাওবা করার জন্য কোনো এপয়েন্টমেন্ট লাগে না। তাঁর কাছে যেকোনো সময় যাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদেরকে দ্রুত তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিন। আমীন।
.
“প্রত্যাবর্তন”
বই: কাল আবার পাখিরা আকাশে উড়বে