দোয়া দেরিতে কবুল হওয়ার কারণ কি?

মানুষ যখন দোয়া করে, তখন কখনো তা সাথে সাথে কবুল হয়, কখনো দেরিতে কবুল হয়, আবার কখনো আল্লাহ তাআলা দোয়ার পরিবর্তে অন্য কোনো কল্যাণ দান করেন। অনেক সময় বান্দা মনে করে যে তার দোয়া কবুল হচ্ছে না, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাঁর দোয়া শুনছেন এবং দেরিতে কবুল করার পিছনে বিশেষ রহমত ও কল্যাণ রয়েছে।

দোয়া দেরিতে কবুল হওয়ার কারণ (হাদিস অনুযায়ী)

হাদিস:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“যখন কোনো বান্দা দোয়ার জন্য হাত তোলে, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-কে বলেন, ‘থামো, এখনই তাকে দিও না! সে যেন পুনরায় আমার কাছে প্রার্থনা করে, কারণ আমি তার আওয়াজকে খুব পছন্দ করি।’”

(কানযুল উম্মাল, হাদিস নং: ৩২৬১)

দোয়া দেরিতে কবুল হওয়ার তিনটি রহস্য

১️⃣ আল্লাহ বান্দার দোয়ার ধৈর্য পরীক্ষা নেন
কখনো দোয়া কবুল হতে দেরি হয়, কারণ আল্লাহ বান্দার ধৈর্য পরীক্ষা করেন এবং দেখেন সে কতটুকু দৃঢ়তার সাথে দোয়া করতে থাকে।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তোমাদের কেউ যেন দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে এভাবে যে, সে বলে— ‘আমি দোয়া করেছি, কিন্তু কবুল হয়নি’, এরপর সে হতাশ হয়ে দোয়া করা বন্ধ করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম: ২৭৩৫)

২️⃣ আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করতে দেরি করেন, কারণ তিনি বান্দার কণ্ঠ পছন্দ করেন
আল্লাহ চান, বান্দা বারবার তাঁর কাছে দোয়া করুক, কারণ বান্দার কণ্ঠ আল্লাহর কাছে প্রিয়।

হাদিস:
“যখন বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করে এবং সাথে সাথে কবুল না হয়, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘আমি আমার বান্দার আওয়াজ শুনতে পছন্দ করি, তাই আমি তার দোয়া কবুল করতে দেরি করছি।’”
(তিরমিজি: ৩৫২৬, আহমাদ: ৬/১৮২)

৩️⃣ আল্লাহ বান্দার জন্য ভালো কিছু সংরক্ষণ করেন
অনেক সময় বান্দা যা চায়, তা তার জন্য ক্ষতিকর হয়। তাই আল্লাহ দোয়া কবুল না করে, তার জন্য অন্য কোনো কল্যাণ নির্ধারণ করে দেন।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তিনটি পদ্ধতির একটিতে তা কবুল করেন—
১️⃣ হয় তার চাওয়া পূরণ করে দেন,
২️⃣ না হয় তার কোনো বিপদ দূর করে দেন,
৩️⃣ অথবা আখিরাতে তার জন্য আরও উত্তম কিছু সংরক্ষণ করে রাখেন।”
(মুসনাদ আহমাদ: ১১১৩৩, তিরমিজি: ৩৫৬৮)

দোয়া কবুলের শর্ত ও করণীয়

১. দৃঢ় বিশ্বাস ও একাগ্রতা রাখা
দোয়া করার সময় মনে থাকতে হবে যে, আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করবেন।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তোমরা দোয়া করো এই বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।”
(তিরমিজি: ৩৪৭৯)

২. হারাম থেকে বেঁচে থাকা
যদি কারও উপার্জন হারাম হয়, তবে তার দোয়া কবুল হতে দেরি হতে পারে।

হাদিস:
“যে ব্যক্তি হারাম খাদ্য গ্রহণ করে, তার দোয়া কবুল হয় না।”
(সহিহ মুসলিম: ১০১৫)

৩. তাড়াহুড়ো না করা
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে এবং কখনো হতাশ হওয়া যাবে না।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তোমাদের কেউ যেন দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো না করে।”
(সহিহ বুখারি: ৬৩৪০, সহিহ মুসলিম: ২৭৩৫)

অতএব,

আল্লাহ সব দোয়া শোনেন এবং দোয়া কবুল করার সঠিক সময় তিনিই নির্ধারণ করেন। অনেক সময় আল্লাহ বান্দার দোয়ার জবাব দিতে দেরি করেন, যাতে সে আরও বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। তাই আমাদের উচিত ধৈর্য ধরে, আন্তরিকতার সাথে ও পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করা এবং আল্লাহর রহমতের আশায় থাকা।

আল্লাহ আমাদের দোয়াগুলো কবুল করুন এবং আমাদের অন্তরে ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস দান করুন। আমিন!