মুর্শিদ ক্বিবলার উছিলায় শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে, ঈমান নিয়ে দুনিয়ার থেকে বিদায়

মানতিকের ইমাম হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাদরাসায় লেখাপড়া শেষ করেছেন। তিনি কিতাবে পড়েছেন, ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উভয় প্রকার ইলমই অর্জন করতে হবে। প্রত্যেকের জন্য সেটা ফরয। তিনি তো ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করেছেন মাদরাসায় গিয়ে। কিন্তু তখন পর্যন্ত উনার ইলমে তাছাওউফ অর্জন করা হয়নি। তাই তিনি ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ গেলেন। গিয়ে বললেন, হুযূর! আমি আপনার কাছে বাইয়াত হতে এসেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম ফখরুদ্দীন। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন, কোন ফখরুদ্দীন, যিনি মানতিকের ইমাম? তিনি জবাব দিলেন, জী হুযূর! আমি সেই ফখরুদ্দীন। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন। অতঃপর সবক দিয়ে বললেন, তোমার ভিতর মানতিকের ইলম পরিপূর্ণ। কাজেই, তুমি আগামী এক বছর যাহিরী কোন পড়া-শুনা না করে নিরিবিলি অবস্থান করে ইলমে তাছাওউফ বা তরীক্বতের সবক আদায় করতে থাক। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশ মুতাবিক তিনি নিরিবিলি অবস্থান করে তরীক্বতের সবক আদায় করতে লাগলেন। এরপর তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন মুর্শিদ ক্বিবলা তো পড়তে নিষেধ করেছেন। কিন্তু লিখতে তো নিষেধ করেননি। এ চিন্তা করে তিনি তরীক্বতের সবক আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তাফসীর লিখতে শুরু করলেন এবং বেশকিছু অংশ তাফসীর লিখলেন। যা তাফসীরে কবীর হিসেবে আজ সারাবিশ্বে মশহূর। বছর শেষে তিনি যখন উনার মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে দেখে বললেন, তোমার তো ইলমে মানতিক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বললেন, তোমার ভিতরে ইলমে তাছাওউফ প্রবেশ করাতে হলে ইলমে মানতিক কমাতে হবে এবং এটা বলে তিনি ইলমে মানতিক কমানোর জন্য ফায়িয নিক্ষেপ করলেন। এতে হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভিতরে কটকট শব্দ হতে লাগলো। তিনি মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আমার ভিতরে কিসের শব্দ হচ্ছে। মুর্শিদ ক্বিবলা বললেন, তোমার ভিতরে মানতিকের যে অতিরিক্ত ইলম সেটা কমিয়ে দিচ্ছি। তিনি বললেন, হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন, ফখরুদ্দীনের ফখরই তো ইলমে মানতিক। তা না কমানোর জন্য তিনি আরজু পেশ করলেন এবং বললেন, হুযূর! আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন। অতঃপর তিনি মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সবক নিয়ে নিজের এলাকায় চলে আসলেন। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইজাযত নিয়ে তিনি স্বীয় এলাকায় তা’লীম-তালক্বীন, দর্স-তাদরীসের কাজ করতে লাগলেন। তিনি জানেন শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সাধারণ মুসলমান তো বটে, যারা আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, ছুফী-দরবেশ দাবীদার তাদেরকেও শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং অনেককে বিভ্রান্ত করেও ফেলে। এমনকি ইন্তিকালের মুহূর্তেও শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করার চেষ্টা করে থাকে। সেজন্য মানতিকের ইমাম হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুখতালিফ রিওয়ায়েত একশ থেকে এক হাজার দলীল প্রস্তুত করে রাখলেন যাতে ইন্তিকালের সময় উনাকে শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করতে না পারে। সত্যিই দেখা গেল, হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন ইন্তিকালের সময় উপস্থিত হলো তখন ইবলীস হাযির হয়ে গেল। হাযির হয়ে সে মহান আল্লাহ পাক দু’জন বলে যুক্তি পেশ করতে লাগলো। আর ইবলীসের সে বাতিল যুক্তি খ-ন করে হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে দলীল পেশ করতে লাগলেন। উনার সমস্ত দলীল শেষ হয়ে গেল তথাপি ইবলীসের বাতিল যুক্তি খ-ন করা গেল না। এখন ঈমানহারা হয়ে ইন্তিকাল করার উপক্রম। তিনি এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে উনার মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি যুহর নামাযের ওযূ করছিলেন। সাধারণত উনার ওযূ এক বদনা পরিমাণ পানি দিয়েই হয়ে যায়। কিন্তু সেদিন উনার খাদিম লক্ষ্য করলেন, তিনি শুধু হাত ধৌত করতেই এক বদনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এমন ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে ওযূর পানি নিক্ষেপ করে বললেন, হে ফখরুদ্দীন রাযী! তুমি বলো, বিনা দলীলে মহান আল্লাহ পাক তিনি এক। বহু দূর থেকে যখন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিক্ষিপ্ত ওযূর পানি এসে উনার চেহারার উপর পড়লো এবং মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ক্বওল মুবারকের আওয়াজ উনার কানে এসে পৌঁছালো তিনি ইবলীসকে জানিয়ে দিলেন, হে ইবলীস! তুমি জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন। এটা আমি বিনা দলীলেই বিশ্বাস করি। তখন ইবলীস বললো, হে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী! আপনি আজকে আপনার মুর্শিদ ক্বিবলা উনার উসীলায় বেঁচে গেলেন। অন্যথায় আপনাকে ঈমানহারা করে মৃত্যুমুখে পতিত করে চলে যেতাম।
এ ওয়াক্বিয়া দ্বারা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।