সম্পাদকীয়

ব্যাংক লুটেরাদের ধরার নির্দেশ দ্রুত কার্যকর হওয়া প্রয়োজন

বিগত সরকারের আমলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সুবিধাভোগী ব্যক্তি অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে ব্যাংক ডাকাতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেন। অর্থনীতি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছে, আসলে তারা দেশের সাধারণ মানুষের টাকা নিয়েছে। তাই যেভাবে হোক তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, যারা ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, ব্যাংকের চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এর পাশাপাশি নগদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট করেছে, এমন ১২ জন অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।

বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক ডাকাত তথা অর্থ পাচারকারীরা যে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল, নানা অনুসন্ধানে ক্রমেই তা প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থ পাচারের সুবিধার্থে এদের অনেকে আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গেও জড়িত হয়েছে। নাম-পরিচয় গোপন রাখতে বদলে ফেলেছে জাতীয়তাও। ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে করেছে পঙ্গু। এসব ব্যাংক ডাকাত যেসব কূটকৌশল অবলম্বন করেছে, সেসব অপকর্মের নিন্দিত উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে নিশ্চয়ই।

বলা বাহুল্য, দেশের ব্যাংক খাতসহ সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতার জন্য অর্থ পাচার অনেকাংশে দায়ী। সন্দেহ নেই, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অর্থ পাচার অন্যতম প্রতিবন্ধক। অর্থ পাচারকারীদের ধরতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা কতটুকু কার্যকর করা সম্ভব হবে, সময়ই তা বলে দেবে। তবে একথা ঠিক, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়। যারা অর্থ পাচার করে থাকে, তাদের অধিকাংশই বেনামে ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা করেছে। নানা স্তরে এদেরও রয়েছে সহযোগী। এ অবস্থায় যারা অর্থ পাচারের পেছনে রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। শুধু ব্যাংক ডাকাতরাই নয়, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button