বনানী থানার ওসির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে পুনর্বাসনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ

হাবিব সরকার স্বাধীন: রাজধানীর অন্যতম ভিআইপি এলাকা বনানী। এই বনানী থানার মধ্যেই রয়েছে কড়াইল ও সাততলা নামের দুটি বৃহৎ বস্তি। ফলে এখানে সব ধরনের অপরাধই কম-বেশি হয়।
সূত্র জানায়, কড়াইল ও সাততলা বস্তি দুটি অপরাধের স্বর্গরাজ্য। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িতরা আস্তানা গেড়েছে ওই দুটি বস্তিতে। পুলিশের কিছু অসৎ সদস্যও জড়িয়ে গেছে তাদের চক্রে। বস্তির মাদক ব্যবসা, চোরাই গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ থেকে পুলিশ প্রতিনিয়ত চাঁদা নিচ্ছে। ফলে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড।
অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেত্রী কে পূর্ণবাসন দিবে বলে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন বনানী থানা ওসি রাসেল। পূর্বের তুলনায় মাদকের আনাগোনা বেড়ে গেছে বনানীতে হাটার মাঝেই চলে মাদক বেচাকেনা। কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে আমলে নিচ্ছেনা এমন অভিযোগ রয়েছে ।ওসি রাসেলের বিষয় নিয়ে কিছুদিন আগে যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পূর্ণবাসন দেওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এদিকে বনানী থানা এলাকায় অবৈধভাবে চলছে কয়েক হাজার অবৈধ অটোরিকশা। থেমে নেই ফুটপাত দখল!
চোখ বন্ধ করে ফুটপাত বানিজ্য সহ নানান অপরাধ প্রশংসা না করে পারিনা! এগুলো থেকেও মাসিক চাঁদা পৌঁছে যায় থানায়। অটোরিকশার মালিক আর ফুটপাত পুলিশের মধ্যে মধ্যস্থতা করে ‘লাইনম্যান’ হাফিজ ও ফাঁড়ির দীর্ঘমেয়াদ বিশ্বস্ত ক্যাসিয়ার ইব্রাহিম। সে একটি নির্দিষ্ট টাকা থানায় দিয়ে বিষয়টি ম্যানেজ করে। থানা এলাকায় একাধিক মাদক স্পট রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ওসি রাসেল বলেন, এই থানা এলাকায় সব ধরনের লোকই বাস করে। বস্তিগুলোতে নিম্ন আয়ের লোক থাকায় সেখানে কিছু ক্রাইম বেশী হয়। তবে আমরা সবসময় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি।
পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, আমার থানা এলাকায় এ ধরনের কোনো অবৈধ কাজ এবং চাঁদাবাজি হয় না।আপনি যেটা জানেন, সেটা ভুল জানেন। অটোরিকশার অথবা ফুটপাথ থেকে আমি একটি টাকাও খাই না। বনানী ২৩ নং রোড সংলগ্ন নার্সারী ভিতরে গোপন ঘর রয়েছে, ওখানে জুয়ার আসর বসে রাতে।আমতলী, কাকুলি,সৈনিক হলের রেলওয়ের পিছনে থাকে একদল তরুণী নেতৃত্বে সোর্স জাকির, সেখানে চলে ছিনতাই। তথ্যসূত্রে জানা যায় সেখানে মাসোয়ারা নির্ধারিত করা। ১১ নাম্বার রোড পতিতা সালমার নিয়ন্ত্রণে ছয় সদস্যের নারী টিম ইজারাদার সোর্স সোহেল।নেভিগেট, ২৩ নাম্বার রোড নার্সারী নামে চিহ্নিত ফাঁড়ির সামনে ইব্রাহিমের হাফিজের আস্তানা। অভিযোগ রয়েছে টঙ্গী থেকে এসে প্রতিনিয়ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যস্ত থাকেন ওরা। দিনে ওখানে ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকান শুধুই লোক দেখানো। আড়ালে রাতে চলে অসামাজিক কার্যক্রম। এখানে সন্ধ্যার পর পর চলে ছিনতাই, রাহাজানি, ফিটিং বাণিজ্য, সহ নানান অপরাধ।
স্থানীয় পথচারীদের অভিযোগ মানুষকে ধরে নিয়ে গোপন ঘরে নির্যাতন করা হয়।রাত যত গভীর হয় নার্সারীর ভিতরে ভয়ংকর রুপ দেখা যায়। নার্সারির আশেপাশে ভয়ংকর হয়ে ওঠে রাত যত গভীর শব্দ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারের শব্দ মাঝে মাঝে শোনা যায়। অভিযোগ উঠেছে বনানী ফাঁড়ির সামনে নার্সারি ভিতরে এই শব্দ।ইব্রাহিম অথবা হাফিজের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বললে ওসি রেগে যায়। উচ্চ স্বরে বলেন ডিসি কে বিস্তারিত আগে বলুন! ডিসি অনুমতি দিলে আমরা ফুটপাত উচ্ছেদে অভিযান চালাবো । অভিযোগ রয়েছে বনানী ফাঁড়ির সামনে ২৩ নং রোড সংলগ্ন নার্সারির ভিতরে রয়েছেন ক্যাশিয়ার ইব্রাহিম ও লাইনম্যান হাফিজের গোপন কয়েকটি ঘর।এমন তথ্য জানতে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ফাঁড়ি পি আই মামুন বলেন এ বিষয়ে ওসি মহোদয়ের সাথে কথা বলেন।
আমি নতুন বিস্তারিত জানি না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফুটপাত দখলদারিত্রের বিষয়ে আমাদেরকে অনুমতি দিলে আমরা অভিযানে যাব।বর্তমান যে পরিস্থিতি পুলিশের কিছুই করার নেই।গুলশান লেক পার্ক, কাকুলি,সৈনিক সিনেমা হল, বনানী স্বপ্ন মোর, বনানী কাঁচাবাজার ব্যাঙের ছাতার মত অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে হাজার হাজার দোকান দখলে আছে।সাধারণ পথচারী ভোগান্তি সীমাহীন।তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভূমিকা নেই বলেই চলে।ফাঁড়ির সামনে নার্সারি থেকেও মোটা অংকের চাঁদা তোলা হয়। সেখানে রয়েছে অবৈধ সংযোগ, গভীর রাতে ওখানে জোয়ার বোর্ড চলে।তথ্যসূত্র জানা যায়। আলোচিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা সেখানে আনাগোনা রয়েছে।সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে পথচারীদের উপর।
ফিল্ম স্টাইলে করে ছিনতাই। অভিযোগ রয়েছে গ্যারান্টি দিয়ে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন লাইনম্যান হাফিজ,ক্যাশিয়ার ইব্রাহিম।অপরাধ আমলনামা আড়াল করতে ইব্রাহিম কৃষক দলের ব্যানার লাগিয়েছেন। থানার বড় বাবু (ওসি) মাসোয়ারা নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাদের নামে কাউকে চিনি না। ফাঁড়ির পুলিশকে জানান এই বলে এড়িয়ে যান।আমার কাজ ওটা না। আমি মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকি ভাই।আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সরেজমিনে দেখা যায়, থানার সামনে ঘুরাফেরা করছেন বেশ কয়েকজন পুলিশের মাদকের তালিকাভুক্ত আসামিরা বর্তমান তারাও পুলিশের সোর্স ।
কোপ সোহেল সাততালা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ।
বিল্লাল কুমিল্লা পট্টি।
শিমুল মাদকের তালিকাভুক্ত আসামীও পুলিশের সোর্স ।
তার স্নেহের ছোট ভাই পলাশ মাদকের নাম্বার ওয়ান চিহ্নিত মাদক কারবারি প্রকাশ্য মাদক বেচাকেনা করছেন স্যাটেলাইট ব্রিজ পাড়। আরো রয়েছে,
সোর্স রাসেল।বারগিরা সুমন।যুব মহিলা লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ সহ-সভাপতি। রেশমি আপা নামে এখন সুপরিচিত তিনি তার নিয়ন্ত্রণে কয়েকজন মাদকা ব্যবসায়ী তবুও প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এলাকা জুড়ে। পুলিশ সদস্যরা তার সঙ্গে গল্প করছেন এমন চিত্র।আড্ডা দিচ্ছেন। থানার সামনে কালো গেঞ্জিপেন্ট পরা এক লোকের সঙ্গে এক পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করতে দেখা যায়। এরপর ওই লোকের সঙ্গে বাইরে যান। প্রায় ১০ মিনিট আলাপ শেষে ওই গেঞ্জি পরা লোকটি সোর্স রুবেল কে ১০ হাজার টাকা দেন। এর কিছুক্ষণ পরে ওই লোকটি চলে গেলে সোর্স থানায় ঢোকেন। কিসের জন্য রুবেল টাকা নিয়েছেন তা জানা যায়নি। অপরদিকে, জায়গা সংকট এই থানার অন্যতম সমস্যা। থানার বারান্দায় বানানো হয়েছে নারী ও শিশু ডেস্ক। বারান্দার অন্য কোণায় ডিউটি অফিসারের ডেস্ক। অস্ত্রাগারের পাশে অপারেটরের ডেস্ক। পার্কিংয়ের জায়গার অভাবে বিভিন্ন মামলায় আটককৃত গাড়ি অন্যের বাড়ির সামনে পড়ে আছে বছরের পর বছর ব্যবস্থা নেওয়া কেউ নেই। থানার গাড়িগুলোও অন্যদের বাড়ির সামনে রাখা হয়। মোটরসাইকেল রাখারও তেমন জায়গা নেই। সড়কের অর্ধেকটা দখল করে রাখা হয় পুলিশ সদস্যদের মোটরসাইকেল। ফলে ওই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয় প্রায়ই। থানা সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৬০টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৭০টি মাদক ও অনুমান ৫টি নারী নির্যাতন মামলা। থানার কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর মহাখালী-গুলশান রোড, নিউ এয়ারপোর্ট রোড, আর্মি স্টেডিয়াম, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী লেক, কড়াইল ও সাততলা বস্তি, মহাখালী, হাজীবাড়ী, টিবি গেট, আমতলী, বনানী মডেল টাউন, কাকলী, সৈনিক ক্লাব ও চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকা নিয়ে থানাটি গঠিত।