বরিশাল

বরগুনায় ইউএনও-ওসির বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে সাংবাদিককে হুমকি

বরগুনায় সাবেক ইউএনও শামীম মিয়া ও ওসি মো. মিজানুর রহমানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের পর থেকে হুমকির শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম। ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোসহ বাসায় গিয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যেকারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাশেদুল, নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রোববার শাওন মিয়াজী, এস আই সোহেল রানা ও আওয়ামীলীগ নেতা বশির পহলান নামে তিন হুমকিদাতাকে আসামী করে বরগুনা আদালতে মামলা দায়ের করেছেন সাংবাদিক রাশেদুল। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত ৩ মার্চ চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর এস আই সোহেল রানাসহ চারজনের বিরুদ্ধে বরগুনা আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। কিন্তু মামলার তদন্তকে বাঁধাগ্রস্ত করতে ইউএনও  শামীম মিয়া ও ওসি মিজানুর রহমান এবং পিআইও জিয়াউর রহমানের নির্দেশে এস আই সোহেল রানা নানাভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি  শাওন মিয়াজী ও আওয়ামীলীগ নেতা বশির পহলানসহ বড় সিন্ডিকেটকে তার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত অপপ্রচার করছে এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে ।

রাশেদুল বলেন, মামলা করার পরদিন ৪ মার্চ বরগুনা রিপোটার্স ইউনিটিতে প্রথমে সাংবাদিক রাশেদুলকে হুমকি দেয় আসামীরা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা না তুললে হাত-পা ভেঙে বরগুনা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। ওই সময় রাশেদুল ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

রাশেদুল দাবি করেন,  একই দিন রাত ১১ টায় বরগুনা পৌরসভার কেজি স্কুল রোডে তার বাসায় আসামীরা আরও লোকজন নিয়ে হাজির হয়। সেখানে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যান তিনি । তারা রাশেদুলকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন- ‘মামলা না তুললে রাশেদুলের হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে’।  এ ঘটনায় আদালতে ন্যায় বিচার দাবি করে মামলা দায়ের করেন অপরাধ বিচিত্রার মফস্বল সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম।

বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিয়ার কাছে গিয়েছিলেন অপরাধ বিচিত্রার মফস্বল সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম। সেসময় তথ্য না দিয়ে উল্টো সাংবাদিককে হেনস্তা করে ইউএনও শামীম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এক আনসার সদস্য। পরে শামীম তার সরকারি গাড়িতে করে ফিল্মি স্টাইলে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যায় থানায়। সেখানে তাকে নয় ঘন্টা হাজতে আটকে রাখে ওসি আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান  । এসময় মুক্তির জন্য সাংবাদিকের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন তারা। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক রাশেদুলের মোবাইল জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে দুর্নীতির সকল প্রমাণ মুছে দেয় এসআই মো. সোহেল রানা । 

 তবে সাংবাদিককে ফাঁসাতে যাওয়া সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। গত বছর ২৪ জুলাই দুপুরে ঘটে যাওয়া সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম। সোমবার বরগুনা  আদালতে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। বরগুনার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আনিসুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে পটুয়াখালী জেলা পিবিআই পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ মামলার তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতেই আসামীরা নানাভাবে গহুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে দাবি করেন রাশেদুল।

এদিকে মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে রাশেদুলকে নিয়ে অপপ্রচার করায় এবং হুমকি দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বরগুনার সাংবাদিকমহল ও সচেতন নাগরিক সমাজ। অবিলম্বে এ ধরণের হুমকিদাতাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button