অব্যাবস্থাপনাএক্সক্লুসিভ

তিতাসের যোগসাজসে একসেপ্ট টাওয়ারে অবৈধ গ্যাস সংযোগ

সুইটি সিনহাঃ ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের শহিদনগর গ্রামে একসেপ্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের একসেপ্ট টাওয়ার অবস্থিত। ২৭১৪ হোল্ডিংয়ের এই ভবনটিতে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা ৩২ টি যার প্রতিটিতে রয়েছে একটি করে দ্বিমুখী চুলা।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর লাইনের গ্যাস দিয়ে পরিচালিত প্রতিটা চুলার নির্ধারিত সরকারি বিল ১০৮০ টাকা যার হিসাবে এই ভবনের বাৎসরিক গ্যাস বিল ৪১৪৯৬০ টাকা। কিন্তু সরকারী খাতে জমা হয়না এক টাকাও। স্থানীয় সূত্রে এমনসব তথ্য উঠে আসলে গত ৬ই মার্চ রোজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে সাংবাদিক দের একটি দক্ষ ও চৌকস টিম গেলে দেখতে পায় দশ তলা এই ভবনটির মোট নয় তলাতে ফ্যামিলি বাসা রয়েছে।প্রতিটি তলায় রয়েছে মোট ৪টি করে ইউনিট।মোট ৩২টি চুলা রয়েছে এই ভবনটিতে।প্রতিটিতে লাইনের গ্যাস দিয়ে চলছে রান্নাবান্না সহ গৃহস্থালির যাবতীয় কার্যক্রম।

ভবনটির কোথাও কোন রাইজার স্থাপন না থাকলেও সরাসরি প্রধান লাইন থেকে সংযোগ লাইন স্থাপন করা হয়েছে ভবনটি জুড়ে।২০১৪ সালের ৩০মে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ আবাসিক এর গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় নতুন করে গ্রাহকবৃদ্ধির একটি স্বীদ্ধান্ত গ্রহন করেন।পরবর্তীতে গ্যাসের উৎপাদন ও মজুদের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকায় সে স্বীদ্ধান্ত বাতিল হয় এবং গ্রাহকের জমাকৃত টাকা ফেরত দেওয়া হয়।সেই সময়ে কিছু অসাধু ঠিকাদার ও কর্মকর্তা সহ লাইনম্যান অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেয়।তেমনিভাবে এই একসেপ্ট টাওয়ার ও দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে আসছে।

প্রকৃত বিলের সমান বা তার বেশি টাকার লেনদেন করছে তিতাসের কর্মকর্তাদের সাথে।স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপচারিতা কালে জানা যায় এই লাইনটি আগে কয়েকবার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো।কিন্তু হয়নি কোন জরিমানা।অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করনের ক্ষেত্রে গ্যাস আইন ২০১০ এর সংশোধনীতে স্পষ্ট জরিমানা ও কারাদন্ডের বিধান থাকলেও অজানা কারনে একসেপ্ট টাওয়ার সে আইনের জাল ভেদ করে বেরিয়ে আসে।

এলাকাবাসীরা জানায় পরবর্তীতে কিভাবে আবার পরিচালনা করছে তা তারা জানে না।টাওয়ারটির দেখাশোনা সহ নিচতলার মক্কা শপের মালিক মোঃ রমজান আলীর কাছে গ্যাসের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ম্যানেজার এমডি ওমর ফারুক এর সাথে কথা বলতে বলেন।এ বিষয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে এমডি মোঃ ওমর ফারুক এর সাথে সংবাদকর্মী সুইটি সিনহা সংবাদের স্বার্থে তথ্য সহযোগিতা চাইলে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল।একজন সংবাদ কর্মী হয়ে গ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়ায় রীতিমত হেনস্থার শিকার হন এই নারী সংবাদকর্মী।তিতাসের সাথে সখ্যতা ও লেয়াজু করে লাইন নেওয়ায় তার কাছে ফোন করাই যেন অপরাধ হয়েছে সাংবাদিকের।প্রচন্ড বিরক্ত ও রাগ প্রকাশ করে তিনি বলেন এই অবৈধ সংযোগ তিতাস কেন দিয়েছে সেখানে গিয়ে জানেন। একই সাথে তিতাসের মাধ্যমে লাইনটি স্থাপন করেছে বলার পাশাপাশি প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকের কাজ কি এখানে? তার দেওয়া বক্তব্যটি ছিলো এমন-এই শহীদনগরে আরো ২০০টি বাড়ীতে তিতাসের লোকেরাই অবৈধভাবে লাইন দিয়েছে।

তিতাস অফিসের লোক এসে প্রতিমাসে গ্যাস বিলের টাকা নিয়ে যায়।তারা ছাড়া কি আমরা এই সরকারী সম্পদ ব্যবহার করতে সক্ষম হতাম।কয়েকবার লাইন কেটেছে পরে টাকা দিয়ে অফিসের মাধ্যমেই এখন লাইন চালাচ্ছি। আপনি গিয়ে অফিসকে প্রশ্ন করেন তারা কেন লাইন দিয়েছে।এছাড়াও তিনি আরো উল্লেখ করেন তিতাসের লোক বিল নিয়ে যায় তারা সরকারকে দেয় না দেয় সেটা আমার জানার বিষয় নয়।সম্পূর্ণ শহীদনগরে আরো অসংখ্য লাইন থেকে তিতাসের লোক এসে টাকা নিয়ে যায়।একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে এই ইউনিয়ন এর আদর্শনগর গ্রামের ১ নাম্বার রোডে মো:হারুনর রশীদ এর বাসায়।

এখানে টিনশেট বাসার পুরাটা জুড়ে রয়েছে রুবেল এর মুরাব্বা ফ্যাক্টরী। ফ্যাক্টরীতে বিশাল আকৃতির মোট তিনটা চুলা বানিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থাপিত। প্রতিমাসে লক্ষ টাকার গ্যাস ব্যবহার করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধভাবে গ্যাস লাইনটি পরিচালনা করে আসছে ফ্যাক্টরীর মালিকরা।লাইন বিচ্ছিন্ন করার তথ্য পাওয়া গেলেও জরিমানার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অত্রএলাকার বাসিন্দা ও বাড়ীর মালিক তিনি জানায় অভিযোগ দিলে লাইন কেটে নিয়ে যায় পরবর্তীতে পুনরায় লাইন তিতাসের লোকেরা দিয়ে যায়।সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও স্থাপনের নামে চলে নাটকীয়তা।

এই ফ্যাক্টরীর তথ্য ফতুল্লা গ্যাস অফিসে ২রা মার্চ জানালে ৩রা মার্চ লাইনটি বিচ্ছিন্ন করা হলেও পূনরায় অদৃশ্য শক্তি বলে আবার মেইন লাইন থেকে সরাসরি সংযোগ দিয়ে বর্তমানে রাতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। কে দিলো এই সংযোগ?কিভাবে বারবার সরকারী সম্পদ এর অবৈধ ব্যবহার করার সাহস তারা পায় সে বিষয়টি যেন প্রকাশ্য গোপনীয়তা।এসকল বিষয় নিয়ে সংবাদকর্মীদের কাছে স্থানীয় বৈধ গ্রাহকরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন গ্যাস বিল দিয়ে আমরা গ্যাস পাচ্ছি না।অবৈধ হাজারো লাইন বিচ্ছিন্ন ও সংযোগের লুকোচুরি খেলা চলছে তাই গ্যাস ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।এভাবে তিতাসের লাইনম্যান, ঠিকাদার,ও কর্মকর্তারা কৌশলে চাঁদাবানিজ্য করে অত্র এলাকায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা দাবি করেন একসেপ্ট টাওয়ার সহ এসকল অবৈধ সংযোগ স্থাপন কারীদের গ্যাস আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হোক।

যাতে ভবিষ্যতে আর কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান এভাবে সরকারী সম্পদ ব্যবহার করতে গিয়ে ১০০বার ভাবে।একই সাথে যে সকল কর্মকর্তা ও ঠিকাদার এই অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরি বলে মনে করেন তারা।বার বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও জরিমানা না হওয়ার কারন এবং পুনরায় একই অপরাধ করতে গ্রাহকদের সহযোগিতা করার বিষয়টি নিয়ে বৈধ গ্রাহকদের তিতাস গ্যাস অফিসের উপর চরম ক্ষোভ ও ঘৃনা তৈরী হচ্ছে বলেও মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button