বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় রড দিয়ে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন প্রেমিকাকে

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর এলাকায় গত বৃহস্পতিবার পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারীর হাত, পা, মুখ ও চোখ বাঁধা লাশ উদ্ধার হয়। কুমিল্লা–সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি সেতুর নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে জানা যায়, ওই নারী (৫২) পাশের মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা। এরই মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই নারীর সঙ্গে মহিউদ্দিন (৩৫) নামের এক বাসচালকের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরকীয়া সম্পর্কের জেরে বিয়ের চাপ দেন ওই নারী। এতে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নারীকে মাথায় রড দিয়ে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন মহিউদ্দিন।
আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মহিউদ্দিন কুমিল্লার আদালতে এই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত ওই নারী বিবাহিত। স্বামীসহ তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাবার বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী। তাঁদের চার ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। অভিযুক্ত মহিউদ্দিনের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর গ্রামে। তিনি কুমিল্লা–কোম্পানীগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ফারজানা পরিবহনের চালক।
দেবীদ্বার থানা–পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত নারীর সঙ্গে বাসচালক মহিউদ্দিনের দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। সম্প্রতি ওই নারী মহিউদ্দিনকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে না করলে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। ৫ মার্চ রাতে ওই নারীকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ডেকে আনেন মহিউদ্দিন। পরে তাঁকে নিজের চালানো ফারজানা পরিবহনের বাসে তোলেন মহিউদ্দিন। বাসের ভেতরেই বিয়ে নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয় তাঁদের মধ্যে। এরপর ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা–সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের গোপালনগর গ্যাস ফিল্ড–সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে গাড়িতে থাকা লোহার রড দিয়ে ওই নারীর মাথায় আঘাত করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে পরনের শাড়ি দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাশ কুমিল্লা–সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর সেতুর নিচে ফেলে চলে যান মহিউদ্দিন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল রোববার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় একটি বাসে তাস খেলা অবস্থায় মহিউদ্দিনকে আটক করে দেবীদ্বার থানা–পুলিশ। পরে তাঁর কাছ থেকে নিহত নারীর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি জব্দ করা হয়।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরদিন ৬ মার্চ রক্তমাখা বাসটি ধুয়ে পরিষ্কার করে হত্যার আলামত নষ্ট করেন মহিউদ্দিন। এ কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর সহকারী আবদুস সাত্তার। চালকের সহকারী আবদুস সাত্তারকে কোম্পানীগঞ্জ এলাকা থেকে গতকাল সন্ধ্যায় র্যাব–১১ কুমিল্লার একটি দল আটক করে। পরে তাঁকে থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আজ বিকেলে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৬ মার্চ ইউছুফপুর এলাকা থেকে হাত–পা বাঁধা অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ছবি দেখে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় ৭ মার্চ ওই নারীর বড় ছেলে বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ছিল ক্লুলেস। পরবর্তী সময়ে তদন্তের মাধ্যমে মূল আসামি ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ওসি বলেন, দুই আসামির মধ্যে মহিউদ্দিন আজ কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।