ভুয়া ডাক্তার এম এ কালামের দৌরাত্ম্য

সুইটি সিনহাঃ রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন বরইতলা রেলগেট সংলগ্ন “জননী ডেন্টাল কেয়ার” নামের একটি দন্ত চিকিৎসালয়। মালিক স্বঘোষিত ডাঃ এম এ কালাম দীর্ঘ ১৫- ২০ বছর ধরে এখানেই দাঁতের বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে। মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোলেও কৌশলে নিজেকে বিডিএস ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন এই প্রতারক কালাম।
এই প্রতিষ্ঠানে বসে ডাক্তার হিসাবে তিনিই দিয়ে থাকেন দাঁত এবং মুখের প্রায় সকল ধরনের সেবা। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্কেলিং, ফিলিং, লাইট কিউর জিআই,অটো জি আই, টেম্পোরারি ফিলিং, কমপ্লেইট ডেন্টাল, রুট ক্যানেল, ক্যাপ স্থাপন সহ প্রায় ২২ধরনের সেবা।রেজিষ্ট্রেশন বিহীন এই ভূয়া দন্ত চিকিৎসক রোগীকে আকৃষ্ট করতে বাইরে ডাঃ এস এম রাজিবুল ইসলামের পরিচিতি বিডিএস(ডিইউ)পিজিটি(ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল)বিএমডিসি রেজিঃ১০৮৬১ ব্যবহৃত বোর্ড ব্যবহার করছেন।
এছাড়াও শ্যামপুর মেডিকেল সার্ভিসেস নামের এক প্রতিষ্ঠান থেকে ডাক্তার সম্মোধন করে সম্মাননা স্মারক তৈরী করিয়ে নিয়ে টেবিলের উপর স্থাপন করে রেখেছেন। একইসাথে দেওয়ালে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া সহ গভীর সখ্যতা প্রকাশমূলক ছবি।যেগুলোর নিচে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন উক্তি লিখে বাঁধিয়ে রেখেছেন।যা দেখে সাধারণ কোন ব্যক্তির বুঝে ওঠা কঠিন যে এম এ কালাম একজন নামসর্বস্ব চিকিৎসক।যারফলে জনসাধারণ প্রতিনিয়ত এই কালামকে ডেন্টিস্ট ভেবে প্রতারিত হচ্ছে। এবিষয়ে সংবাদকর্মীদের কাছে ভুক্তভোগী রাসেল জানায় দীর্ঘদিন যাবত তার দাঁত এর গোড়া দিয়ে রক্ত বের হয় এবং মাড়ি ফুলে থাকে।মুখে দূর্গন্ধ হয় ও দাঁত ব্যথা করে এমন সমস্যা নিয়ে আমি “জননী ডেন্টাল কেয়ার “যাই।ডাঃ এম এ কালাম আমার চিকিৎসা করেন।কিন্তু তার থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরে আমার অসুস্থতা আরো বেড়ে গিয়েছে।এখন দাঁতের গোড়া থেকে পুঁজ বের হয়।বর্তমানে আমি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের একজন চিকিৎসক কে দেখাচ্ছি। এখন আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ।আমি পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি কোন ডাক্তারই নন।তার এমন ভূল চিকিৎসা আমার যেমন অর্থ নষ্ট করেছে তেমন আমার স্বাস্থ্যঝুকি বাড়িয়ে তুলেছে।আমি চাই তার মত চিকিৎসক যেন এভাবে আর প্রতারণা করতে না পারে। এসকল তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায় মুক্তা বেগম নামের এক রোগীর ক্যাপ টেস্ট করছেন জননী ডেন্টাল কেয়ার এর এক টেকনিশিয়ান।
প্রাথমিক জানা শেষ করে ডাক্তার কালামের সাথে থেকে থেকেই করছেন ক্যাপ টেস্ট। এবং এই টেস্ট সম্পন্ন হলে কালামই তা স্থাপন করবেন বলে জানান মুক্তা বেগম। ক্লিনিকের পরিবেশ যেমন নোংরা তেমনি টেকনিশিয়ান ও স্বাস্থ্যবিধির প্রতি সম্পূর্ণ অসচেতন। নেই মুখে মাস্ক,হাতে গ্লাভস।পরিধান না করার বিষয়টি জানতে চাইলে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন এই টেকনিশিয়ান জানায় ড্রয়ারের ভেতরে আছে।রোগীর মুখের কাছে গিয়ে ক্যাপ টেস্ট করার সময় অন্তত মাস্ক পরার প্রয়োজন কেন মনে হলো না এমন প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।জননী ডেন্টাল কেয়ার এর মালিক ও ডাক্তার এম এ কালাম কে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।রুট ক্যানল ও ক্যাপ এর কাজ একজন বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া করা যাবে না তিনি কেন করছেন প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন ডাক্তার আছেন আজ আসেনি।এমন উত্তরের পর মুক্তাবেগম এর স্বীকারউক্তি তুলে ধরলে তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে রীতিমতো ভয় দেখাতে শুরু করেন।কোন রকম কাগজ পত্রের বৈধতা নেই এই প্রতিষ্ঠানের তেমনি ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নূন্যতম যোগ্যতা নেই এই ভূয়া ডাক্তার এম এ কালামের।তবুও কেন দীর্ঘ বছর ধরে চিকিৎসক পরিচয়ে প্রতারণা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় আওড়ানো দেখে সহজে অনুধাবন করা যায়।বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ২০১০ ধারা ২৮(১) এবং মহামান্য হাইকোর্টের রায় মোতাবেক বিডিএস ডিগ্রীবিহীন ও বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়া কেউ নিজেকে দন্ত চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দেওয়া ও চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করতে পারবেন না।কেউ করলে তা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এবং সেই শাস্তির বিধান অনুযায়ী ৩বছরের কারাদণ্ড বা ১লক্ষ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
এমন শাস্তির বিধান থাকলেও এম এ কালাম দীর্ঘ বছর ধরে চিকিৎসক পরিচয়ে প্রতারণা কিভাবে করে আসছেন? জনসাধারণের মনে এখন সেটাই প্রশ্ন। এ বিষয়ে একজন ডেন্টাল সার্জন মোঃজসিম উদ্দীন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান অভিজ্ঞ কোন ডাক্তার বিহীন সকল সেবা প্রদান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায় হতে পারে হেপাটাইটিস ও মুখের বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ।তিনি জানান কিছু টাকা সাশ্রয় করতে গিয়ে এসকল নামমাত্র ডাক্তার থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ না করাই উত্তম। এবিষয়ে স্থানীয় সচেতনমহলের কাছে জানতে চাইলে জানা যায় স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয় ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করার কারনে ভুক্তভোগীরা কালামের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননা। রাজনৈতিক দাপটে এখানে এতো বছর ধরে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছে বলেও জানান ঐ স্থানের একজন দোকাদার।
এলাকাবাসির সাথে এ বিষয়ে আলাপচারিতা কালে জানা যায় তারা প্রায় সকলে জানেন কালাম একজন বিডিএস ডাক্তার। তিনি বিডিএস ডিগ্রীধারী নয় ও বিএমডিসি তে নিবন্ধন নেই এমন কোন তথ্য কারোরই তেমন জানা ছিলো না।
তাদের দাবি কথিত চিকিৎসক হলে দ্রুতই কালাম কে শাস্তির আওতায় আনা হোক। এবং তার প্রতিষ্ঠিত জননী ডেন্টাল কেয়ার বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেন