ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে পুর্নবাসনের ষড়যন্ত্রে লিপ্তের থাকার অভিযোগ আটাবের বিরুদ্ধে আটাবে প্রশাসক নিয়োগের দাবি আটাব সংস্কার পরিষদের

স্টাফ রিপোর্টার: ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনার দোসর এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস্ অব বাংলাদেশ (আটাব) এর বর্তমান কমিটি এখনো বহাল তবিয়তে। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার যে স্বড়যন্ত্র হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আটাবের বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিব।
নবগঠিত আটাব সংস্কার পরিষদ মঙ্গলবার তিনটি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে এসব তথ্য তুলে ধরেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ এর নেতৃত্বাধীন আটাবের বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে দ্রুত আটাবে প্রশাসক নিয়োগ করে পরবর্তী কার্যক্রম চালানোর জন্য আটাব সংস্কার পরিষদের আহবায়ক ও মঈন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. গোফরান চৌধুরী গত ১৮ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একই দিন স্বৈরাচার হাসিনার দোসর বর্তমান আটাব কমিটি বাতিল করে প্রশাসন নিয়োগের মাধ্যমে আটাবকে কলঙ্কমুকরণের পাশাপাশি বিতর্কিত আটাব নেতাদের দ্রুত গ্রেফতারের জোর দাবি জানিয়েছে আটাব সংস্কার পরিষদ। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগি আটাব কমিটিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) ও টাস্কফোর্সের সভাপতির কাছে একই দিন লিখিত আবেদন পেশ করেছে আটাব সংস্কার পরিষদ। মন্ত্রণালয়ে পেশকৃত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান আটাব কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত সালেহ্সহ প্রায় সকলেই আওয়ামীলীগ পন্থী।
স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পরও তারা আটাব কমিটিতে নির্বিঘ্নে রয়েছে এবং হাসিনাকে বাংলাদেশে পুর্নঃপ্রতিষ্ঠিত করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্নভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তারা আটাব অনলাইন নামক একটি (ওটিএ-অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সী) প্রতিষ্ঠা করে যা বাণিজ্য সংঘ বিধি ও আটাব সদস্যদের স্বার্থের পরিপন্থী। আটাব অনলাইনকে ব্যবহার করে আব্দুস সালাম আরেফ এর মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সেী এয়ার স্পীড (প্রাঃ) লিঃ এবং মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ্ এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সায়মন ওভারসীজের নামে চেক ইস্যু করে আটাব এর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আটাব অনলাইনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। তারা শেয়ার হোল্ডারদেরকে কোন টাকা ফেরত দেয়নি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পরিচয়দানকারী আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফের বিরুদ্ধে কোন ট্রাভেল এজেন্সী এমনকি কোন এয়ারলাইন্স বিগত ৫ আগষ্ট হাসিনার পতনের পূর্বে কোন কথা বলার সাহস পায়নি। এয়ারলাইন্স গুলো তার অনৈতিক টিকিট গ্রুপ ব্লকিং এর কাজে সহযোগিতা করতে বাধ্য হয়েছিল। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী পন্থী আটাব সভাপতি নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য ট্রাভেল এজেন্সী এবং এয়ার লাইনসের মধ্যে বিরোধ তৈরী করে এয়ার টিকিট ব্যবসায় নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাসিমের আত্মীয় পরিচয়ে এবং প্রশাসনের সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন দিয়ে ২ বার মহাসচিব এবং বর্তমান সভাপতি হিসেব আটাব দখল করে আছেন।
ভৌতিক ভোটার তালিকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র থেকে বের দিয়ে স্বঘোষিত ফলাফল নিয়ে বার বার নির্বাচিত হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন। জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলন হয়েছিল তা প্রতিহত করার জন্য শেখ হাসিনার বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে ৩ আগষ্ট ২০২৪ যে ষড়যন্ত্রমূলক সভাটি করেছিলেন সেখানে বর্তমান আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ উপস্থিত ছিলেন। গ্রুপ টিকিট ব্যবসায় মাফিয়া খ্যাত এয়ার স্পীড (প্রাঃ) লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বর্তমান আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ। তিনি বিভিন্ন এয়ার লাইন্সের টিকিট গ্রুপ বুকিং এর মাধ্যমে ব্লক করে এয়ার স্পীড নামক একটি ডযধঃধঢ়ঢ় গ্রুপের মাধ্যমে প্রচার করেন এবং চড়া দামে বিক্রি করে থাকেন। ২০২৩-২০২৪ সালে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের (লেবার) টিকিটের গ্রুপ ব্লকিং এবং ২০২৫ সালে সউদীগামী (লেবার) টিকিট ব্লকিং এর মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করে বিক্রি করেছেন।
আটাব মহাসচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মরহুম মুহায়মিন সালেহ্ এর কন্যা। আফসিয়া জান্নাত সালেহ্ ও পিতার পদাংক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয়ে আটাব নেতৃত্বে আসেন এবং নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে একাধিক বার নির্বাচিত হয়ে কমিটির সকলকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর বর্তমান আটাব কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে আটাবকে কলংকমুক্ত করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানানো হয় আটাব সংস্কার পরিষদের পেশকৃত অভিযোগে।
পাশাপাশি তাদেরকে আজীবনের জন্য যে কোন বাণিজ্য সংগঠনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। আটাব সংস্কার পরিষদের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আটাবকে ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের দোসরমুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত করণের লক্ষ্যে গত ১ মার্চ নয়পল্টনস্থ একটি হোটেলে এক সভায় মো. গোফরান চৌধুরীকে আহবায়ক এবং মো. আমির হোসেন আরিফকে সদস্য সচিব করে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট আটাব সংস্কার পরিষদ গঠন করা হয়। ওই নেতা আরো জোর দিয়ে উল্লেখ করেন আটাব সভাপতি ও মহাসচিব তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আটাব অনলাইন বিলুপ্ত ঘোষণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেক এর মাধ্যমে।