যাকাত আদায় না করার পরিণতি

আল্লাহর সকল বিধান মানুষের সার্বজনীন কল্যাণের জন্য। আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতিটি আদেশ-নিষেধের দুই ধরনের ফলাফল বা পরিণতি রয়েছে। একটি পরকালে পাওয়া যাবে এবং সেটিই মুখ্য। তাঁর আদেশ অমান্য করার পরিণাম ইহকালেও ভোগ করতে হয়, যদিও অনেক সময় মানুষ তা উপলব্ধি করতে পারে না। যাকাত আদায় না করার পরিণতিঃ
প্রথমত: ধনীর সম্পদে যেহেতু দরিদ্র ও নিঃস্বের অধিকার থাকে তাই যাকাত আদায় না করলে সম্পদে অপরের অধিকার থেকে যায়। ফলে তা পবিত্র হয় না। অপবিত্র সম্পদে আল্লাহ্ পাক বরকত দান করেন না এবং ঐ সম্পদধারী আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়। শুধু তাই নয়, যে জনগোষ্ঠী যাকাত বা সাদাকাহ আদায় করে না আল্লাহ্ তাদের ওপর খরা ও দুর্ভিক্ষের মতো দুনিয়াবী শাস্তি প্রেরণ করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায় যাকাত দানে অস্বীকৃত হলে আল্লাহ্ তাদেরকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে শাস্তি দেন’ (তাবারানী)।
দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাওয়াবের আশায় যাকাত দেবে তার জন্য রয়েছে প্রতিদান। আর যে যাকাত দেবে না আমরা তার সম্পদ হতে যাকাত আদায় করবই; উপরন্তু আমাদের রবের কড়া নির্দেশের আলোকে তার সম্পদের একাংশ নিয়ে নেবো। তবে মুহাম্মদের পরিবারের জন্য এর কোনো অংশই হালাল নয়’ (আহমদ, নাসাঈ, আবু দাউদ)। এ হাদীস হতে বোঝা যায়, কেউ যদি যাকাত দিতে অস্বীকার করে তাহলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি আল্লাহর বিধান অমান্য করার ধৃষ্টতা প্রদর্শনের জন্য জরিমানাও আদায় করবেন।
তৃতীয়ত: যাকাত আদায় না করে যারা সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখবে কিয়ামতের দিন ঐ সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তার মালিকের শরীরে সেঁক দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে তার স্বাদ গ্রহণ করো জমা করে রাখার।” (সূরাহ আত তাওবা ৯:৩৪-৩৫)।
রাসুল স. বলেছেন, ‘কিয়ামত দিবসে এমন শাস্তি জান্নাত বা জাহান্নামের ফায়সালা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে’ (সুনান আবূ দাউদ)।
চতুর্থত: যারা বিপুল সংখ্যক চতুষ্পদ জন্তুর মালিক ছিল, কিন্তু যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ঐ জন্তুগুলোকে তাদের মালিকের কাঁধের ওপর চাপানো হবে। তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে ছুটে গিয়ে কাকুতি মিনতি করবে। কিন্তু তিনি তাদের জন্য সুপারিশ করবেন না। রাসুল স. বলেছেন, চতুষ্পদ জন্তুর মালিকরা যদি যাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তিকে উপুড় করে শোয়ানো হবে। তারপর তার জন্তুগুলোকে পূর্বের চেয়ে বেশি মোটাতাজা করে উপস্থিত করা হবে। জন্তুগুলো তাদের মালিককে শিং দিয়ে গুঁতো দেবে এবং খুর দ্বারা পদদলিত করবে। কোন জন্তুর শিং বক্র হবে না বা কোনোটা শিঙবিহীন হবে না। সর্বশেষ জানোয়ারটি পদদলন করার পর প্রথমটিকে ফিরিয়ে আনা হবে। এভাবে শাস্তি চলতে থাকবে জান্নাত বা জাহান্নামের ফায়সালা হওয়ার আগ পর্যন্ত। সেই দিনটির দৈর্ঘ্য হবে ৫০ হাজার বছরের সমান। চতুষ্পদ জন্তু মেষ হোক বা উট হোক- যাকাত দেয়া না হলে পশুমালিককে এমন শাস্তি দেয়া হবে (সুনান আবু দাউদ)।
পঞ্চমত: যারা বিপুল সম্পদের মালিক, অথচ যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন ঐ সম্পদ সাপের আকৃতি ধারণ করে তার মালিককে দংশন করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে তার যাকাত দেয়নি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথাওয়ালা সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুপাশে দংশন করে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধনভান্ডার’ (সহীহ আল বুখারী)।
আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন! এহেন ভয়াল শাস্তি হতে আমাদেরকে রক্ষা করুন! যাকাত আদায় না করে নিজেকে এরকম কষ্টদায়ক শাস্তির সম্মুখীন করার চেয়ে নির্বুদ্ধিতার কাজ আর কী হতে পারে! এটি সর্বদা অনুধাবন করতে হবে যে, দেয়ার শক্তি যার, তাঁরই রয়েছে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষমতা। তাই কারোরই যাকাত আদায়ে অবহেলা করা উচিৎ নয়। বরং আমাদের উপর তা ফরজ হবার সাথে সাথেই আমাদের যাকাত আদায় করা পরম কর্তব্য।