কেরানীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মালা বড়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বাক্ষর জাল করে অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার নীল নকশা

মো: আবদুল আলীম: ঢাকা জেলার অন্তর্গত কেরানীগঞ্জ উপজেলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মালা বড়ালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও গণমাধ্যম কর্মীকে হুমকি প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দের টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। দীর্ঘ দিন যাবত এই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ একযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কেরাণীগঞ্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে সাতজন ভুক্তভোগী স্বাক্ষর করেন। অভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। স্বক্ষরকারীদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উক্ত অভিযোগের কোন তদন্তই করেন নাই বলে ভুক্তভোগীরা ক্ষুদ্ধ। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা, প্রতি ক্লাস বাবত বরাদ্দকৃত টাকা এবং কিশোর-কিশোরদের উৎসাহিত করার জন্য বার্ষিক অনুষ্ঠানের বাজেটের টাকা তিনি দিচ্ছন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেতন দেওয়ার সময় শিক্ষক শিক্ষিকাদের টাকার পরিমাণ না লিখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন মালা বড়াল। এর ফলে তিনি কতো টাকা দিচ্ছেন তার কোন স্বচ্ছতা থাকছে না। এখানেই ফাঁক ফোঁকড় রয়েছে। শিক্ষক শিক্ষিকারা
সময় মত বেতনও পাচ্ছেন না।
২০২৩ সালে মার্চ মাস পর্যন্ত ক্লাবের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তার পর থেকে ক্লাবের ছাত্র-ছাত্রিদের জন্য নাস্তা বাবত বরাদ্দ ৭৫০ টাকা বরাদ্দকৃত থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। আর প্রতি ক্লাস বাবত যে অর্থ বরাদ্দ তাও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। এর প্রতিবাদ করতে গেলে মালা বড়াল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে
অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ও চাকুৃরি খাওয়ার হুমকি দেন। তিনি ধর্মীয় অনুভুতিতিও আঘাত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষিকাদের বেশভুষায় পর্দা থাকলে তিনি কটাক্ষ করেন ও অসদাচরণ করেন।
এই মালা বড়াল এক সময় মনিকগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখানেও অর্থ আত্মসাৎ করেন মর্মে দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে দৈনিক ইত্তেফাকে “মানিকগঞ্জে আইজিএ প্রশিক্ষনার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে টাকা আদায় শীরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে প্রকাশ, দর্জিবিজ্ঞান ও বিউটিশিয়ান কোর্সে ২৫ জন করে ৫০ জনকে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষনের প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনার কথা বলে ৪০০ টাকা করে নেওয়া হলেও তাদের কোন উপকরণ দেওয়া হয় নাই। প্রয়োজনী সব উপকরণ তাদের নিজেদেরকেই নিয়ে আসতে হয়েছে। এই টাকা নেওয়ার ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক নাসরীন সুলতানা তৎকালে অর্থাৎ ২০২০ সালে ইত্তেফাককে জানান, এধরণের কোর্সে কোন টাকা নেওয়া হয় না।
মালা বড়াল মানিকগঞ্জে হরিরামপুর উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসব টাকা কেন নিয়েছেন তা হরিরামপুর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনই জেনে থাকবেন। এসব বিষয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মালা বড়ালের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোনে কল করলে তনি তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান এবং একটু পরই জাহিদ নামক এক ব্যক্তিকে দিয়ে যার মোবাইল নং ০১৭১৬-২১৬৬৮৮ থেকে এ প্রতিবেকদকে ফোন করে হুমকি প্রদান করান। হুমকির সময় জাহিদ নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়।
হুমকির কারণে এ প্রতিবেদক মালা বড়াল ও হুমকি প্রদানকারি জাহিদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় জেনারেল ডাইরি করতে বাধ্য হন। জেনারেল ডাইরির কপি সংযুক্ত করে তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই প্রতিবেদকে জিলা প্রশাসক, ঢাকা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেরানীগঞ্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সুচতুর মালা বড়াল এই লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠেন।
তিনি অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এই প্রতিবেদক অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন মর্মে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে তিনি এই প্রতিবেদকের স্বাক্ষর জাল করেন। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে ফোন করে অভিযোগ প্রত্যাহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়টি ধরা পড়ে। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অভিযোগ প্রত্যাহারের পত্রটি এই প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছেছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অনিয়ম দুর্নীতি ও এসব আচরণের বিষয়টি তদন্তের জন্য ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন।