এক যুগ পর চট্টগ্রাম কারাগারে ফিরছে পান্তা-ইলিশে বৈশাখ উদযাপন

দীর্ঘ বারো বছর পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আবার ফিরছে পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী আমেজ। প্রায় পাঁচ হাজার বন্দী এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছেন পান্তা-ইলিশ দিয়ে। শুধু খাবারেই শেষ নয়, দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কারা কর্তৃপক্ষের রয়েছে বর্ণাঢ্য আয়োজন, যার মধ্যে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন জানান, কারাগারে আটক সকল কয়েদি ও হাজতি যাতে পহেলা বৈশাখের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সকালে প্রত্যেক বন্দীকে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ পরিবেশন করা হবে। এর জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে ইলিশ মাছ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দীদের একঘেয়েমি দূর করতে এবং উৎসবের আমেজ দিতে কারা অভ্যন্তরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। কারাগারে বন্দীদের নিজস্ব একটি শিল্পী দল রয়েছে যারা গান পরিবেশন করবেন। এছাড়া, বাইরের পেশাদার শিল্পীদেরও আমন্ত্রণ জানানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, “প্রায় এক যুগ আগে কারাগারে পান্তা-ইলিশ দিয়ে বৈশাখ উদযাপন করা হয়েছিল। এরপর প্রতি বছরই বৈশাখের দিনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হলেও পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়নি। এবার বন্দীদের জন্য পান্তা-ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নতমানের খাবারেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।”
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সকালের পান্তা-ইলিশ ছাড়াও বন্দীদের জন্য দুপুরের খাবারে থাকছে পোলাও, মুরগির মাংস এবং ডাল। বাঙালিয়ানার ষোলআনা পূর্ণ করতে খাদ্য তালিকায় যোগ করা হয়েছে পান-সুপারি ও মিষ্টি। এছাড়া, সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী আঞ্চলিক পিঠা এবং হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লোকজ খাবারের আয়োজনের পরিকল্পনাও করছে কর্তৃপক্ষ। দিনভর চলবে বন্দীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর তৈরি করবে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
শুধু বন্দীরাই নন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যও থাকছে বিশেষ আয়োজন। তাদের প্রত্যেকের জন্য ৫০ টাকা করে বিশেষ খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং কারাগারের বাইরে তাদের জন্য পৃথক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দীর্ঘ বিরতির পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের এই উদ্যোগ বন্দীদের মাঝে নতুন বছরের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।