বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড ফারাজ করিম চৌধুরী

মুহাম্মদ জুবাইরঃ চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরী। চারপাশের নানা রকম অনিয়মের বিপরীতে একসময় মানুষকে ধোকা দেওয়ার মানসে অবিরাম ছুটে চলেছেন। একের পর এক ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরে গোটা দেশেজুড়ে অর্জন জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ফারাজ করিম চৌধুরীর আসল রূপ ধরা পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়।
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে বিশেষ করে ২৭ জুলাই মানবিক ফজলে করিম ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণা “চট্টগ্রামকে চাইলে পাহারা দিতে পারে রাউজানবাসী এমন মন্তব্য লোকচক্ষুর সামনে আসে ভয়ংকর ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র হত্যার মাস্টারমাইন্ড ফারাজ করিম চৌধুরীর আসল চরিত্র।
উল্লেখ্য ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে
চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে একই ধরনের পোশাক ও ক্যাপ পরিধান করে ফারাজ করিম চৌধুরী ও তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী আগমন করত। যা গত জুলাইয়ের আগে তেমন কারো নজরে না আসলেও ২৭ জুলাইয়ের পর তা ওপেনসিক্রেট।
এছাও ফ্যাসেসদের বিভিন্ন নির্বাচনে রাউজান থেকে ছাত্রলীগ ও ফারাজের “বি” টিম সেন্ট্রাল বয়েজের সদস্যরা এসে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করত এবং রাতের অন্ধকারে ভোটাধিকার হরণে সহায়তা করত।
গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়, সেই আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য ফারাজ করিমের ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রসহ শহরে প্রবেশ করে এবং রাউজান এলাকা থেকে রাতারাতি অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করে। আন্দোলন চলাকালে ফারাজ করিমের ব্যক্তিগত সহকারী ও ক্যাডার সুমন দে, আবু সালেক, লোকমান, রায়হান ও মাসুদের হাতে অস্ত্র দেখা যায়, যা পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে । ১৬ ও ১৮ জুলাইয়ের হামলার মাধ্যমে ছাত্রদের দমন করার পর ২৭ জুলাই ফজলে করিম ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ঘোষণা করেন, “চট্টগ্রামকে চাইলে পাহারা দিতে পারে রাউজানবাসী”। ফারাজ করিমের পাথরঘাটাস্থ বাসভবন, যা নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত, সেখান থেকেই ৪ আগস্টের গণহত্যা পরিচালিত হয়েছিল। যা চট্টগ্রামের ছাত্রজনতা নিজ চোখে দেখেছে।
উল্লেখ্য ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা পুলিশ ফারাজ করিমের বাড়ি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে। গণশুনানিতে আহত ও সম্মুখসারির আন্দোলনকারীরা ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তাদের কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের সময় ফারাজ করিমের নাম উঠে আসে। অভিযোগ করা হয়, ফজলে করিম চৌধুরীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফারাজ করিম চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।সে অভিনয় এর মাধ্যমে বাপের সাথে করে যাওয়া অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করত।
গণঅভ্যুত্থানের সময় ফারাজ করিম চৌধুরী তার বাহিনী ‘সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজান’-এর মাধ্যমে রাউজানে আন্দোলন দমনে সক্রিয় ছিল। কেউ সমবেত হলে ফারাজ করিম চৌধুরী পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করাত এবং ফেসবুকে লাল ডিপি বা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দিলে তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক নাফিজা সুলতানা অমির পরিবারকেও হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছিল এই ফারাজ করিম চৌধুরী।
আন্দোলনে যুক্ত রাউজানের মহিলা সমন্বয়ক নাফিজা সুলতানা অমি জানান, ফেসবুকে আন্দোলনের পোস্ট দেওয়ায় তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁর এক বন্ধুর ভাইকে পোস্ট দেওয়ার কারণে সন্ত্রাসীরা মারধর করেছে, যার পেছনে আছে ফারাজ করিমের হাত।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জুনায়েদ মোহাম্মদ সাকিব জানান, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ফারাজ করিমের নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। পরিবারের নারীদের হেনস্থা করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
ফারাজ করিম চৌধুরীর ‘বি’ টিম সেন্ট্রাল বয়েজ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্যাতন চালায় এবং উত্তর চট্টগ্রাম থেকে এসে মহানগরীর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা করে। এমনকি, আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট দেওয়াতে ফারাজ করিমের গুণ্ডাবাহিনী একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকেও লাথি মারে। রাউজানের ১৬ জন বিপ্লবীকে নাশকতার মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে দেওয়া হয়,যেখানে দু’জন ছিলো এইচএসসি পরিক্ষার্থী।
সম্প্রতি ফারাজ করিমের সহযোগী সাইদুল ইসলাম ফেইসবুকে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে।সে খুনী হাসিনার নেতৃত্বে ফারাজ করিম আসবে বলে পোস্ট দেয়।
এত কিছুর পরেও একটি অবৈধ সিন্ডিকেট এখন ফারাজ করিমকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমরা অবিলম্বে ফারাজ করিমের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার দাবি করছি।