
স্টাফ রিপোর্টার: সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা শামীম আক্তার শামা দীর্ঘ ২০ (বিশ) বছর ধরে জাল সনদে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন এবং জাল সনদে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শামীম আক্তার শামার বিরুদ্ধে বহুল প্রচারিত বিভিন্ন দৈনিকে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কালের কন্ঠ পত্রিকায় ১১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত শিরোনাম হয়েছে জাল সনদে ২০ বছর চাকুরি। দেশ রুপান্তর পত্রিকায় বর্ষ ৭ সংখ্যা ২১৬ পৃষ্ঠা ১২ শিরোনাম “জাল সনদে শিক্ষিকার চাকুরির প্রমান মিলল”। দৈনিক আজকাল পত্রিকায় ২৩ অক্টোবর ২০২৪ইং তারিখে প্রকাশিত শিরোনাম “শিক্ষিকা সামার বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরির অভিযোগ”। এ ভাবে আরো অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়।

অভিযোগে জানা গেছে জাল সনদে দীর্ঘ ২০ (বিশ) বছর কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেতন-ভাতা উত্তোলন এবং কোনো এক অদৃশ্য অলৌকিক ক্ষমতার বলে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ ও ক্ষমতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি ইংরেজী ভার্সনের শাখা প্রধান হিসাবে দায়ীত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য সূত্রের তথ্যানুযায়ী শামীম আক্তার শামার শিক্ষা সনদের অনার্স এবং মাষ্টার্স এর সনদ জাল। শামা শিক্ষা সনদ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরীতে যোগদান করেন এবং সেই সনদ দিয়েই এমপিওভুক্ত হন। অনার্স এবং মাষ্টার্সের উভয় সনদ তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় চাকুরীর বিধি অনুযায়ী অযোগ্য অর্থাৎ চাকুরী পাওয়া সম্ভব নয়। অনার্স এবং মাষ্টার্সের সনদ দ্বিতীয় শ্রেণী লিখে স্কুল এবং বোর্ডে সাবমিট করে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরীতে অন্তর্ভুক্ত হন এবং তৎপরবর্তীতে উক্ত বানোয়াট অর্থাৎ জাল সনদের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন। এ নিয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
শামীমা আক্তার শামার অনার্স এবং মাষ্টার্সের মূল সনদ তৃতীয় বিভাগের হলেও তিনি সেই সনদ জাল করে উভয় সনদে দ্বিতীয় বিভাগী/শ্রেণী লিখে জমা দিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন, যাহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ইতিমধ্যেই স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন মোল্লার পাঠানো শামার শিক্ষা সনদের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার এবং অধিকতার যাচাইয়ের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরে পাঠানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ এনামুল করিম স্মারক নং জাতীঃবিঃ/পরীঃ/সনদ/৪৪৯/২০০৫/৮১৮৭ তারিখঃ ০৯/১২/২০২৪ খ্রিঃ সম্প্রতি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য শামিম আক্তার এর সাময়িক সনদ পত্রের ফটোকপি.যার রোল নম্বর ৮৪১১, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৫০৩২৭, শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৩-৯৪ এম এ (ইতিহাস) পরীক্ষা ১৯৯৭ ফলাফল দ্বিতীয় শ্রেনী। শামিমার দাখিলকৃত এসব প্রবেশপত্র, নম্বরপত্র ও সাময়িক সনদের মূল কপি পাঠাতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং প্রধান শিক্ষক ও সম্পাদক মো: সাহাব উদ্দিন মোল্লা কর্তৃক পাঠানো ০৪/১২/২০২৪ ইং তারিখের সাময়িক সনদ এর ছায়ালিপির তথ্য যাচাই প্রসঙ্গে চিঠির জবাব ০৯/১২/২০২৪ ইং তারিখে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, বাংলাদেশ, প্রধান শিক্ষক মো: সাহাব উদ্দিন মোল্লা বরাবর প্রদান করেন। উত্তরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জবাব অনুযায়ী শামীম আক্তার সাময়িক সনদপত্রের ফটোকপি সংরক্ষিত রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত শিক্ষার্থীর ফলাফল সঠিক নয় বলে জানান। সেখানে তারা উত্তরে জানান জাতীয় বিশ্ববদ্যালয়ের সংরক্ষিত রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত শামিমার তথ্য, শামিমা আক্তার রোর নম্বর ৮৪১১, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৫০৩২৭, শিক্ষাবর্ষ, ১৯৯৩-৯৪, এম এ (ইতিহাস) পরীক্ষা ১৯৯৭ ফলাফল তৃতীয় শ্রেনী। এতেই প্রমানিত হয় শামীম আক্তার শামা জাল সনদে চাকুরি করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করছেন। অর্থাৎ বি.এ (অনার্স) ইতিহাস পরীক্ষা-১৯৯৬, ফলাফল তৃতীয় শ্রেণী এবং এমএ (ইতিহাস) পরীক্ষা- ১৯৯৭ ফলাফল তৃতীয় শ্রেণী। কিন্তু শিক্ষিকা শামীমা আক্তার শামা অনার্স এবং মাষ্টার্স এর ফলাফল ফেব্রিকেটেড অর্থাৎ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে উভয় সনদে ফলাফল দ্বিতীয় শ্রেণী লিখে সাবমিট করেন এবং চাকুরী নিয়ে এমপিওভুক্ত হন। ঘটনা প্রমাণ এবং জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন মোল্লা গত ১৯/০৫/২০২৫ ইং তারিখে শামীম আক্তার শামা বরাবর কারণ দার্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু কোনো অলৌকিক ক্ষমতাবলে আজও উক্ত নোটিশের জবাব প্রদান করেননি। এমনকি বোর্ড কর্মকর্তাদের তদন্তের বিষয়ে শামার কাছে বক্তব্য চাওয়া হলেও সেখানেও কালক্ষেপন করতে থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাগন জানিয়েছেন। ফলে তদন্ত রিপোর্ট দেরী হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তাগন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারী ও বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে প্রতি শিক্ষাবর্ষে দুটি পরীক্ষা অর্ধ-বার্ষিক/প্রাক-নির্বাচনী এবং বার্ষিক/ নির্বাচনী অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে এবং ফি গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। গত ১৭/০৪/২০২৫ ইং শ্রেণী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারী নির্দেশনা, বোর্ড নির্দেশনা এবং স্কুলের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণী পরীক্ষায় কোনো প্রকার ফি গ্রহণের অনুমতি নেই। কিন্তু শামা অবৈধভাবে স্কুলের অনুমতি ব্যতিরেকে শ্রেণী পরীক্ষা হতে ফি গ্রহণ করেন এবং বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। যাহা অন্যায় এবং প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রীদের নিকট হতে অবৈধ উপায়ে নানা প্রকার অর্থনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করেন।
প্রধান শিক্ষকের অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় বিষয়টি নিয়ে তিনিও নাড়াচাড়া করছেন না। এটা নিয়ে বেশী নাড়াচাড়া করলে প্রধান শিক্ষকেরও কোনোপ্রকার দূর্বলতা বের হয়ে আসতে পারে বিধায় নিরব রয়েছেন। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের পুরো সময়ে দলটির মহানগর দক্ষিণের নেতা ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইসুল ইসলাম ময়নার সব অন্যায় কাজের অন্যতম সহযোগী ছিলেন তিনি। নানা অজুহাতে স্কুল ফান্ডের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে এবং চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করে নিজেও নজিরবিহীন সুবিধা নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ০৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে একইদিন আত্মগোপনে চলে যান স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইসুল ইসলাম ময়না। সে সময় স্কুলের ছাত্রীদের পক্ষ থেকে স্কুল ফান্ডের টাকা লুটপাট এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধিতা করার কারণে প্রধান শিক্ষক ও শামীম আক্তার শামার পদত্যাগ দাবীতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রী অভিভাবকরা। কিন্তু কোনো এক অলৌকিক ক্ষমতার বদৌলতে তারা আজও বহাল তবিয়তে আছেন।
উল্লেখ্য, ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ১৪/০১/২০২৫ইং তারিখে শামীম আক্তার শামার স্বামী নাদিম চৌধুরী ২০/২৫ জন বহিরাগতদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে পড়ে এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। নাদিম চৌধুরীর সাঙ্গপাঙ্গ ২০/২৫ জনের উত্তেজিত বহিরাগতদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ইংলিশ ভার্সনের কমন রুমে বসার জন্য অনুরোধ করেন। তৎপরবর্তীতে নাদিম চৌধুরী, শামা এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন মোল্লা সহ বাংলা ভার্সনের অন্যান্য শিক্ষকদের নানা প্রকার অশ্লীল ভাষা প্রযোগ হুমকি-ধামকি দেন। অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং বিভিন্নভাবে অপমান-অপদস্ত করেন। ভবিষ্যতে শামার বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। এই হুমকি ধামকির বিষয়ে স্থানীয় থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ রিপোর্ট লেখার শেষ পর্যায়েও শামীম আক্তার শামার মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিষয়টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র করছে বলে উল্লেখ করেন এবং লিখিত বক্তব্য প্রদান করবেন বলে জানান। কিন্তু তিনি কোন লিখিত বক্তব্য না পাঠিয়ে ০৯ জুলাই ২০২৪ আনুমানিক সন্ধা ৮ ঘটিকায় ৫/৬ জনের সন্ত্রাসীর একটি দল অপরাধ বিচিত্রা কার্যালয়ে পাঠিয়ে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ ভয়ভীতি দেখানোর কাজটি যথারিতি করেছেন। অপরাধ বিচিত্রা সংবাদ প্রকাশ না করতেই হুমকি দিয়ে তার স্বামী যে সন্ত্রাসী তার যথাযথ প্রমান তিনি করেছেন। অর্থ্যাৎ ভয়ভীতি দেখিয়ে সংবাদ প্রকাশের একটি রিহার্সেল তিনি দেখিয়েছেন। যেভাবে সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে দলবল নিয়ে স্ত্রীর অনৈতিক জাল সনদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্কুল কতৃপক্ষকে তার স্ত্রী শামার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনে বিরত রাখার অপচেষ্টা করেছেন তেমনি একই ধরনের অপচেষ্টা তিনি সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে চালিয়েছেন।
শামীম আক্তার শামার স্বামী একটি রাজনৈতিক দলের নেতার পরিচয়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ লালন পালন করেন বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। তার বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শেষে থাকবে আরো বিস্তারিত প্রতিবেদন।



